মঙ্গলবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » বিবিধ » মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙন
মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙন
এস আলম তুহিন ,মাগুরা প্রতিনিধি :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মধুমতি নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মধুমতি নদীর ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে কাশীপুর, রায়পুর, রুইজানি, হরেককৃষ্ণপুর, দেউলি, ঝামা ও ভোলানাথপুর গ্রাম। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২১ টি পরিবারে অর্ধ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও মসজিদ। ভাঙনের মুখে রয়েছে শতাধিক পরিবার, কাশিপুর গোরস্থান, কাশিপুর পুজা মন্দির, ভোলানাথপুরের ২টি পূজা মন্দির, অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশী সময় ধরে মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে বদলে যাচ্ছে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র। এ পর্যন্তু উপজেলার ৭ টি গ্রামের ৮-৯ কিঃমিঃ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত শনিবার থেকে মধুমতি নদীর ভাঙনে নতুন নতুন বসত-ভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে ভাঙন ভয়াল আকার ধারণ করায় নদী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। উপজেলার কাশিপুর, ভোলানাথপুর, রায়পুর হরেককৃষ্ণপুর, দেউলি, ঝামা ও রুইজানি নদী তীরবর্তী এসব এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, গোরস্থান, ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসত-বাড়ি এবছর বেশী ভাঙনের কবলে পড়েছে।এ ব্যাপারে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওহিদ বলেন, নদী ভাঙ্গনে আমার বসতভিটাসহ সম্পূর্ণ জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভূমিহীন অবস্থায় অন্যের জমিতে বসবাস করছি। কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ তিলাম হোসেন বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে আমরা নিঃশ্ব হয়ে পড়েছি। এ গ্রামের অসংখ্য ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও গাছ পালা প্রতি নিয়ত নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে বারংবার অবহিত করা হলেও এ প্রর্যন্তু কেউ অসহায় মানুষের খোঁজ নিতে আসেনি। নদী ভাঙন রোধে জরুরীভাবে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের আশু দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, স্বর্বস্ব হারানো অসহায় নারী-পুরুষের আহাজারি। এসময় কেউ কেউ ভাঙ্গনের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা সরিয়ে নিচ্ছে। গত সাত দিনে মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙনে কাশীপুর গ্রামের পুলিশ কনেষ্টবল রোকন উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, পান্নু বিশ্বাস, বাচ্চু মোল্যা, মাজেদ মোল¬া, ওহাব মিয়া, আবু মিয়া, সাবু মিয়া, মাজেদ মেম্বর, হাসেম মোল¬া, মতিয়ার মিয়া, ভোলানাথপুর গ্রামের ২টি পূজা মন্দির সহ খিতিশ চৌধরী ও মনিমোহন চৌধরীর বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। ভাঙনের সম্মুখ দ্বারে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছেন ভাঙন কবলিত সাত গ্রামের মধ্যে ইমদাদুল, আতিয়ার, জিবলু, আক্কাস, মাহফুজার, হান্নান, আলি, জয়নাল মুন্সি, শহিদুল, মোক্তার মিয়া, জয়েন উদ্দিন, মোসলেম, হারান, বারিক মোল্যা, হানিফ মোল¬া, অলিয়ার, নওশের, মান্নান, নজির, মন্নু, নান্নু, জাফর, সাদেক মোল¬া, মোসলেম, মিজানুর, আলম,ওহাব, আয়েন উদ্দিন, জয়েন উদ্দিন, আক্কাস মোল¬া, চুন্নু মোল্যা, আনোয়ারুল হক, সবুর মিয়া, হানিফ মোল্যা, অলিয়ার, বাকী, রোকন উদ্দিন, আক্কাস মোল্যা, চুন্নু মোল্যাসহ শতাধিক পরিবারের অসংখ্য ঘরবাড়ি।
অন্যদিকে গোপালনগর থেকে পাল্লা পর্যন্তু প্রায় ৫ কিঃমিঃ ও ঝামা এলাকায় নদীর মাঝ বরাবর জেঁগে উঠেছে বিশাল চর। চরের কারণে স্রোতপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে প্রবল বেগে নদী তীরে ঢেউ আঁচড়ে পড়ায় নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলো ক্রমেই ভাঙনের থাবায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে নদী পাড়েই ছাবড়া দিয়ে মানবেতর জীবন-যাবন করছেন কয়েকটি পরিবার। কেউ তাদের খোঁজ-খবর না নেওয়ায় নদী তীরবর্ত্তী মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়েছি, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।