সোমবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » জাতীয় ফুল শাপলা; অযত্ন আর অবহেলা হারিয়ে যাচ্ছে
জাতীয় ফুল শাপলা; অযত্ন আর অবহেলা হারিয়ে যাচ্ছে
এম আব্দুল করিম, কেশবপুর (যশোর)
অযত্ন আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। এই জাতীয় ফুর শাপলাকে বাঁচাতে সরকারি ডোবা ও ঝলের দখল দারিত্ব উচ্ছেদ জরুরী। যার বাংলা নাম শাপলা, ইংরেজী নাম হল লিলি। মনিপুরী ভাষায় থরো আংগৌবা, তামিল ভাষায় ভেলাম্বাল, সং®কৃত ভাষায় কুমুডা, আসাম ভাষায় এই শাপলা ফুলকে নাল বলা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল এই শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলে নীল-মাহানেল। গ্রীক দার্শনিক পে¬টো ও এরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেন এটা একটি জলজ উদ্ভিদ যা প্রায় ৩’শ খৃষ্টপূর্ব পুরানো। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণতো পাঁচ প্রকার শাপলা ফুল দেখা যায়। সাদা, লাল, বেগুণী, হলুদ, নীল রঙ্গের। এর মধ্যে সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের আনাছে কানাছে ডোবায় অহরহ দেখা যেত এই জলে ভাসা ফুল। কৃষি জমিতে অধিক পরিমানে কীট নাশক ও রাসয়নিক সার ব্যবহারসহ নানা কারণে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু সাদা ও বেগুণী শাপলা দেখা গেলেও লাল, হলুদ, নীল শাপলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। কিছু দিন আগেও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে শাপলা ফুল দেখা যেত। তখন পুকুর খাল বিল ও জলাশয় গুলিতে লালগোলাপী, সাদা, বেগুণী, নীল ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো । বর্তমানে সাদা ও বেগুণী প্রজাতির শাপলাগুলি বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছেনা গোলাপী, নীল ও হলুদ শাপলা। এসব শাপলা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে নানা জনের নানা অভিযোগ রয়েছে। কারো কারো মতে খাল বিল ও জলাশয় ভরাট করে কৃষি জমি তৈরী ঘর বাড়ী তৈরী ফসলী জমিতে মাত্রতিরিক্ত কীঠনাশক ব্যবহার, সরকারি জলাশয় দখল করে মাছের ঘের এবং জলবায়ু পরিবর্তেনের কারণে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময়ে ঝিলে বিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙ্গের শাপলার বাহারী রূপ মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। শাপলা ছোটদের খুব প্রিয়। শাপলার ড্যাপ বাচ্ছাদের প্রিয় খাদ্য এবং গ্রামের লোকেরা ড্যাপ দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরী করে থাকে। গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে সব্জী হিসেবেও খুব জনপ্রিয় এই শাপলা। অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এছাড়া লাল শাপলার অনেক ঔষধী গুন রয়েছে। যেমন শাপলার মোতা খেলে আমাশয়ের মত রোগ ভালো হয় বলে জানা যায়। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মহাদেব কুমার সানা বলেন আমাদের জাতীয় স্বার্থে শাপলা ফুলকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা এবিষয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাথে দ্রুত মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করবো।