বৃহস্পতিবার ● ৮ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » রাজনীতি » নড়াইল-২ আসনে জোট-মহাজোটে নতুন মুখের প্রাধান্য, আ’লীগ-বিএনপি থেকে মনোনয়ন দাবি
নড়াইল-২ আসনে জোট-মহাজোটে নতুন মুখের প্রাধান্য, আ’লীগ-বিএনপি থেকে মনোনয়ন দাবি
ফরহাদ খান, নড়াইল।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়াইল-২ আসনে (লোহাগড়া ও সদর উপজেলার আংশিক) প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুুর রহমান। তবে আসন্ন নির্বাচনে এ আসনটি শরিকদলকে ছেড়ে না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এদিকে বিএনপি নেতারাও নিজ দল থেকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-দলের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য শিল্পপতি শেখ আমিনুর রহমান হিমু, জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ নূরুজ্জামান, জেলা আ’লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আইয়ূব আলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম নবী, সাবেক এমপি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসকে আবু বাকের, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, সাধারণ সম্পাদক ও লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সৈয়দ হাসান ইকবাল, শিল্পপতি বাসুদেব ব্যানার্জিসহ আরও কয়েকজন নেতা। মহাজোটের শরিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি শেখ হাফিজুুর রহমান, জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, জেলা জাসদের (ইনু) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম খান, জেলা জাসদের (আম্বিয়া) সভাপতি অ্যাডভোকেট হেমায়েত উল্লাহ হিরু ও তরিকত ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মিন্টু সরদার।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ছয় নবীন প্রার্থী হলেন-জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, নড়াইল-২ আসনের সাবেক এমপি মরহুম শরীফ খসরুজ্জামানের ছেলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসম্পাদক শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফী, ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খুলনার সদস্য সচিব; নড়াইলের লোহাগড়ার কুচিয়াবাড়ি গ্রামের সন্তান অধ্যাপক ডাঃ সেখ মোহাম্মাদ আখতার-উজ-জামান এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগর শাখার সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য প্রভাষক মাহফুজুর রহমান। এদিকে, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) ও ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুও নড়াইল-২ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি জানান, এ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে তার। তবে নিজেদের জোট, নাকি অন্য জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন; তা এখনই প্রকাশ করেননি। এছাড়া এ আসনে নিজ দল থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন-ইসলামী আন্দোলন নড়াইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম নাসির উদ্দীন।
আসন্ন একাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গে শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী শেখ আমিনুর রহমান হিমু বলেন, নড়াইল-২ আসনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী আমি। এরই মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন, ‘ক্লিন নড়াইল, গ্রিন নড়াইল’, স্বাস্থ্যসেবা, মানবসেবাসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন করেছি। ভবিষ্যতে নড়াইলে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য হারে উন্নয়ন করতে হলে যথাযথ দায়িত্ব দরকার। এ ক্ষেত্রে আমি যদি সে দায়িত্ব পাই, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন; তাহলে আমি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভোটে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ। এমপি নির্বাচিত হলে নড়াইলকে বেকারমুক্ত করব। উন্নয়নের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাবো। নড়াইল-২ আসন হবে উন্নয়নের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ নূরুজ্জামান বলেন, আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখে আসছি। ‘উন্নত নড়াইল, উন্নত বাংলাদেশ’ স্লোগানকে মনে-প্রাণে লালন করে এলাকায় নির্বাচনী কাজ করে যাচ্ছি। নড়াইলের উন্নয়নে সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে সব বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু, নড়াইল সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ এবং বেকারমুক্ত নড়াইল গড়তে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক ও সম্মান শ্রেণীর অদম্য মেধাবী কয়েকজন শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার খরচ বহনসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী আমি। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শেখ হাফিজুর রহমান এমপি দাবি করে বলেন, নির্বাচনী এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভের আশা করছি। জাপা নেতা অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ বলেন, বর্তমানে আমাদের দলের সাংগঠনিক শক্তি যথেষ্ট রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্যপ্রার্থী হিসেবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি।
এদিকে গত ১৩ অক্টোবর বিকেলে দলের বর্ধিত সভায় জেলা আ’লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, নড়াইল-২ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে শরিক দলকে মনোনয়ন দেয়ায় দল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারেও আশাবাদী জেলা আ’লীগের এ নেতা। তবে শরিকদলের কোনো প্রার্থীকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন না দিতে জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রের প্রতি যে দাবি জানিয়েছেন, সে বিষয়ে কেনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত হলে তরুণ প্রার্থী হিসেবে নড়াইল-২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফী বলেন, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। সেই সাথে আমার মরহুম বাবা সাবেক এমপি শরীফ খসরুজ্জামানের সহচর ও সাধারণ মানুষ আমার পাশে আছেন। আমি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। যদি মনোনয়ন পাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়; তাহলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচন নির্বাচনগুলোতে লোহাগড়া উপজেলা থেকে মনোনীত প্রার্থীরা বেশি জয়লাভ করেছেন। নড়াইল-২ আসনে লোহাগড়া উপজেলায় ভোট বেশি হওয়ায় এবং লোহাগড়ার সন্তান হিসেবে আশা করি দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিবে। ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডাঃ সেখ মোহাম্মাদ আখতার-উজ-জামান বলেন, চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করছি। মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।
বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, অনেক মামলার বোঝা মাথায় নিয়েও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে ছাত্রদল ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলাম। এবারের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পেলে এবং সুষ্ঠু ভোট হলে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে জোট থেকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়ার প্রত্যাশা করছি। নড়াইলে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও বিগত ২০০১ সালে জোট থেকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি করেন তিনি।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে আ’লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, সৎ, ত্যাগী, উন্নয়নকামী ও তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রাখেন; এমন নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমরা দলের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এতে এলাকার উন্নয়ন হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সাথে এলাকাবাসীর সম্পর্ক বজায় থাকবে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-২ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ৬২৪ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৭ জন। নড়াইল ও লোহাগড়া পৌরসভাসহ এ আসনের অধীনে সদর উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়ার ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এ আসনে পাঁচবার আ’লীগ, দুইবার করে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং একবার মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হন। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন-এটাই দেখার অপেক্ষায় আছেন নড়াইল-২ আসনের ভোটারসহ জনসাধারণ।