বৃহস্পতিবার ● ১৫ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » বিবিধ » মাগুরায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব
মাগুরায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব
এস আলম তুহিন , মাগুরা : বোধন পূজার মধ্য দিয়ে মাগুরায় ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব শুরু হয়েছে । চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত । প্রতি বছর ৫ দিনব্যাপী উৎসব হয়ে থাকে কিন্তু এবার আয়োজকরা ১ দিন বাড়িয়েছে । তাই পুজা চলবে ৬ দিনব্যাপী অর্থাৎ অষ্টমি হবে দুইদিনব্যাপী । বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুইদিন অষ্টমী । শনিবার নবমী এবং রবিবার দশমীর মধ্য দিয়ে এ ঐতিহ্যবাহী পূজা শেষ হবে। তবে পূজা উপলক্ষে আয়োজিত মেলা চলবে আরো এক মাস । প্রতিবছর কাত্যায়নী পূজাকে কেন্দ্র করে মাগুরায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে থাকে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আরো বেশি মাত্রায় লোক সমাগম ঘটবে বলে আয়োজকরা মনে করেন । বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র মাগুরা জেলাতেই ব্যাপক উৎসব উদ্দিপন্ার মধ্য দিয়ে এ পূজা হয়ে থাকে । যা মানুষের কাছে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয় । সার্বজনীন এ পূজা উপলক্ষে মাগুরায় ব্যাপক আনন্দ উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে । নিমার্ণ করা হয়েছে বিশাল ইলেকট্রিক দৃষ্টি নন্দন তোরন । প্রতিটি মন্দিরের প্রবেশ পথের রাস্তায় সাজানো হয়েছে মনোরম আলোক মালায় । প্রতিটি পূজা কমিটির মধ্যে চলছে বৈচিত্রময় মন্ডপ তৈরি ও আলোক সজ্জার প্রতিযোগিতা । জেলায় এ বছর মোট ৭৬টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পূজার মূল আকর্শন থাকবে পৌরসভার ১৪টি মন্ডপকে ঘিরে। এ উপলক্ষে মন্ডপ ও শহরকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আবার কোনো কোনো মন্দিরের গেট প্যান্ডেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও চিত্র । আবার কোনো মন্দিরে মা ক্যাত্যায়নী ঐতিহ্যবাহী ঠেলাগাড়িতে করে পুত্র-কন্যাদের নিয়ে কলকাতা শহর ঘুরে দেখছেন । এমনই সব চিত্র এবারের পূজায় ।
তথ্যমতে, সারা বিশ্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও শুধু মাগুরায় এর ব্যতিক্রম । মাগুরা জেলায় এ ধর্মেও অনুসারিদের কাছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাত্যানয়ী পূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব । তবে এ পূজার মূল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকায় হিন্দু ধর্মের মানুষেরা অংশ নিলেও এর উৎসবে যোগ দেন সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষেরা । শুধু জেলাবাসী নয় , সারাদেশ এমনকি আশপাশের অনেক দেশ থেকেও দর্শনাথীরা আসেন মাগুরা ক্যাত্যায়নী পূজা দেখতে ।
শহরতলীর নতুন বাজারের সাহা পাড়া , ছানা বাবুর বটতলা , নিজনান্দুয়ালী নিতাই গৌর গোপাল মন্দির , জামরুলতলা মন্দির ও সাতদোয়া মন্দিরে এ পূজা জমজমাট ।
অন্যদিকে, পূজার পাশাপাশি শুরু হয়েছে মেলা । ইতিমধ্যেই সেখানে দেশের বিভিন্ স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা তাদেও পরসা সাজিয়ে বসেছে । যা চলবে পূজা শেষ হবার পরও মাসাধিকাল । মেলায় কাঠের ফার্নিচার ,হাড়ি-পাতিল, তৈরি পোষাক ,চিনা মাটির জিনিসপত্র ,কসকেটিক্স, বাচ্চাদের খেলনা ,সামদ্রিক শামুক-ঝিনুকের গহনা,শো-পিচ, থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন পরসা সাজিয়ে ইতিমধ্যে বসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দোকানীরা ।
পাশাপাশি সার্বজনীন রুপ নেয়া ক্যাতায়নী পূজা উপলক্ষে জেলার প্রতিটি মানুষ উৎসবে মেতে উঠেছে । পূজাকে ঘিরে জেলা পুলিশ প্রশাসন প্রতিটি পূজা মন্ডপ এলাকায় ও শহরের রাস্তাঘাটে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে । পাশাপাশি র্যাব ও ডিবি পুলিশের টহল চলছে নিয়মিত । এ পূজার আনন্দ নিতে জেলার উপজেলা থেকে বিভিন্ন মানুষ ভিড় করছেন তাদের স্বজনদের বাড়িতে । তাছাড়া পাশ্ববতী জেলা যশোর , ফরিদপুর ,নড়াইল ,ঝিনাইদহ , কালিগঞ্জ , মেহেরপুর ,কুষ্টিয়া ,চুয়াডাঙ্গা ,বাজবাড়ি জেলার আগত দশনার্থী ভিড় করে এ উৎসবে । দেশে দশনাথী ছাড়াও ভারত ,নেপাল থেকে অসংখ্য মানুষ আসে এ পূজায় ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান , ক্যাত্যায়নী পূজা মাগুরা জেলার ঐতিহ্য । এ পূজা দেখতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে মাগুরাতে । যে কারণে পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় শুধু মাগুরা নয় , আশপাশের একাধিক জেলা থেকে আসা অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স কাজ করে । এ ছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশ , আনসার ভিডিপি ও স্ব স্ব পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন । তাছাড়া একই সাথে প্রতিটি মান্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে কন্টোল রুমের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে ।
উল্লেখ্য, দাপর যুগে কোন এক হেমন্তের শুরুতে যমুনা নদীর তীরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালাবৃন্দ কাত্যায়নী দেবীর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর,বন্ধু ,স্বামী ,পুত্র হিসাবে আরাধনা করত । তাদের এক মাসব্যাপী আরাধনা সেসময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হত । তারই অনুকরণে ১৯৫০ সালের দিকে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় প্রথম জাকজমকপূর্ণ ভাবে এ পূজা শুরু হয় ।
শোনা যায় ,মাগুরা পারনান্দুয়ালী গ্রামের জেলে পাড়ায় ধণাঢ্য সতিশ মাঝির বাড়িতে বৃহদাকারে এই কাত্যায়নী পূজার উৎসব শুরু হয় । এরপর মাগুরা জেলাতে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে গত দুই যুগ ধরে এর প্রসার লাভ করে ।