বুধবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » বিবিধ » ডুমুরিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুরের জীবনাবসান
ডুমুরিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুরের জীবনাবসান
অরুন দেবনাথ, ডুমুরিয়া ।
ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুরের জীবনাবসান ঘটেছে। বুধবার সকালে হৃদক্রিয়া যন্ত্র বন্ধ হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন। মৃত্যুকালে প্রবীন এই রাজনীতিবিদের বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহি রেখে গেছেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছিলেন ছোট। ভান্ডারপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত আলহাজ্ব নহর আলী খান। আলী মুনসুরের একমাত্র ছেলে জিয়াউর রহমান জীবন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে ভাত খাওয়ার সময় আব্বু হঠাৎ বুকে যন্ত্রনাবোধ করে পড়ে যায়। তাৎক্ষনিক জ্ঞানহীন অবস্থায় এ্যাম্বুলেন্সে খুলনার নেওয়ার পথে আব্বুর মৃত্যু হয়।
খান আলী মুনসুর ১৯৭৩ সালে ডুমুরিয়া এনজিসি এন্ড এনসিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ এবং মধুগ্রাম কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি রাজনীতিতে হাতে খড়ি দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে। তিনি ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর জাসদ থেকে জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগদান করেন। ১৯৮১ সালে ডুমুরিয়া থানার সাবেক গ্রাম সরকার প্রধান ছিলেন। ১৯৮৪ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তিনি উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওইপদে তিনি দুই বার দায়িত্বপালন করেন। এরপর দুইবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০১ সালে ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০০৩ ও ২০১১ সালেও তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সুনামের সাথে তিন তিন বার দায়িত্বপালন করেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। খান আলী মুনসুর ছিলেন সদালাপী, সুমিষ্ঠভাষী, অতিথি পরায়ন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ব্যক্তি। যে কারনে সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সমাদৃত। জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক এ নেতার আকষ্মিক মৃত্যুতে গোটা উপজেলাবাসির মাঝে এক শোকের ছায়া নেমে এসেছে, সবাই যেন শোকে বিহ্বল। শুধু জন প্রতিনিধিত্বে নয়, রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন একজন পরিস্কার সাদা মনের মানুষ। তার এ মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ীতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহনাজ বেগমসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ সকল রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিকেল ৫টায় উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের আয়োজনে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ চত্বরে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এসময়ে বক্তব্যদেন ইউএনও মোছাঃ শাহনাজ বেগমের স্বামী আহসান হাবিব, এসিল্যান্ড নাজমুল হাসান খান, জেলা বিএনপি সভাপতি এ্যাড শফিকুল আলম মনা, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেহর মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক বিএমএ মহাসচিব ডাঃ গাজী আব্দুল হক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাও সিরাজুল ইসলাম, জাপা নেতা গাজী গহর, শেখ ফরহাদ হোসেন, আ’লীগ নেতা মোস্তফা কামাল খোকন, শাহনেওয়াজ জোয়াদ্দার, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্যা মোশাররফ হোসেন মফিজ, অধ্যাপক জিএম আমান উল্লাহ, শেখ শাহিনুর রহমান, মরহুমের ছেলে জিয়াউর রহমান জীবন প্রমুখ। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ।