বৃহস্পতিবার ● ৫ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » পরিবেশ » সরীসৃপ প্রাণী সুরক্ষায় সচেতনতা ও অনুভূতির জায়গা গড়ে তোলা দরকার
সরীসৃপ প্রাণী সুরক্ষায় সচেতনতা ও অনুভূতির জায়গা গড়ে তোলা দরকার
প্রকাশ ঘোষ বিধান
জলবায়ু পরিবর্তনে জীব বৈচিত্র্যের ওপর প্রভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির প্রাণী। গত ২শত বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩শত প্রজাতির প্রাণী। আরো শ’খানেক ঝুঁকিতে আছেন। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ও প্রকৃতির প্রতি মানুষের শাসন ও শোসনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় জোরালো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমাদের আশেপাশের অতি পরিচিত প্রাণীও হারিয়ে যেতে পারে। অস্তিত্ব সঙ্কট ও হুমকির মধ্যে রয়েছে এসব প্রাণী। ক্রমাগত বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রাজাতি। বিপন্ন এসব প্রাণীর ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আগামী কয়েক বছরের বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
২১ অক্টোবর সরীসৃপ সচেতনতা দিবস। সরীসৃপ প্রাণীর প্রতি মানুষের সহানুভতি ও অনুভুতির জায়গা গড়ে তোলার জন্য দিবসটি পালন করা হয়। সরীসৃপ মেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা বুকে হেঁটে চলে। পৃথিবীতে ১০ সহস্রাধিক সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী রয়েছে। সরীসৃপ প্রাণী রক্ষায় সচেতনতাই দিবসটির উদ্দেশ্য। সাধারণ ভাবে এই শ্রেণীর অন্তঃগর্ত আমদের অতি পরিচিত প্রাণী হলো সাপ, টিকটিকি, কচ্ছপ, ব্যাঙ, গুইসাপ, কাছিম, কুঁচে, কুমির ইত্যাদি। বিজ্ঞানীদের মতে, ৪১ কোটি ৮০ লাখ বছর আগে সিলুরিয়াম অধিযুগে সারকোপটেরিজাই জাতীয় প্রাণী থেকে চার পেয়ে এসব প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছিল। তাদেরকে সাধরণ ভাবে বলা হয় টেট্রাপোড। এই টেট্রপোডের চারটি শ্রেণীর মধ্যে সরীসৃপ অন্যতম।
দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। অন্যতম বিপন্ন প্রায় প্রাণীর তালিকায় আছে কাইট্রা কাছিম, বোস্তামী কাছিম সহ নানা প্রাণী। জানা যায়, দেশে এক সময় ২৮ প্রজাতীর কাছিম পাওয়া যেত। ২ টি পাহাড়ী প্রজাতি, ৫টি সামুদ্রিক প্রজাতি এবং খাল-বিল ও হাওড় সহ অভ্যন্তরীন জলাশয়ে ২১ প্রজাতির কাইট্রা কাছিম বাস করত। বোস্তামী কাছিম চট্রগ্রামের বায়োজীদ বোস্তামীর (রাঃ) মাজারের পুকুরে ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন অঞ্চলে দেখা পাওয়া দুস্কার। আইইউসিএনের ২০০০ সালের জরিপে দেশের ২০ প্রজাতির কাইট্রা কাছিমকে বিপন্ন হিসাবে অন্তঃভূক্ত করা হয়। আশঙ্কাজনক হারে ব্যাঙের সংখ্যাও কমে গেছে। গত ৩৫ বছরে ব্যাঙের দু’শত প্রজাতি হারিয়ে গেছে। পরিবেশ বন্ধু ব্যাঙ, কচ্ছাপ, কাছিম সংরক্ষণ করা সম্ভব না হয়ে পরিবেশের ইকো-সিস্টেমের উপর আঘাত আসবে। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, মাত্রাতিরিক্ত সার ও কিটনাশক প্রয়োগের কারণে কচ্ছপ, ব্যাঙ সহ নানা প্রজাতির প্রাণী কমছে। এছাড়া খাদ্য ও বিক্রির নিমিত্তে ব্যাঙ, কচ্ছপ, তককো শিকার অব্যহত রয়েছে। এখনো সরীসৃপ প্রাণীর প্রতি মানুষের অনুভূতির জায়গাটা সেভাবে তৈরী হয়নি। সাপ, ব্যাঙ, গিরকিটি দেখা মাত্রই তার দিকে ঢিল ছোড়ার প্রবনতা রয়েছে। তাছাড়া চালানের নিমিত্বে রয়েছে শিকারের মনবিত্তি। মানুষের প্রয়োজেন এসব প্রাণী একদিকে খাবেরে পরিণত হচ্ছে অন্যদিকে উচ্চ ভিলাষী মানুষের ভোগ বিলাসের সামগ্রীতে পরিণত হচ্ছে।
মানুষেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব ফেলছে। মানুষ তার প্রয়োজনে বন উজাড় করে কৃষি জমি তৈরী করছে। আবার কৃষি জমিতে নগরায়ণ ও শিল্পকারখানা গড়ে তুলছে। এ কারণে আবাসস্থল ও খাদ্য সঙ্কটের কারণে কমছে নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা। পরিবেশ অস্থিরতা সৃষ্টি যত বেশি হচ্ছে জীব বৈচিত্র্যের উপর তত বেশি প্রভাব পড়ছে। আর এসব প্রাণীরা খুব সংবেদনশীল হওয়ায় পরিবর্তিত পরিবেশে টিকতে না পেরে অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। সরীসৃপ প্রাণীর প্রতি মানুষের অনুভুতি ও সহানুভূতির জায়গা গড়ে তুলতে হবে। অবৈধ্য শিকার ও পাচার রোধে সচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিযান অব্যহত রাখতে হবে। তাহলে সরীসৃপ প্রাণীর সুরক্ষা হবে এবং পরিবেশরে ভারসম্য রক্ষা পাবে।
লেখক ঃ সম্পাদক swnews24.com