শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » পরিবেশ » জলাভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রাসঙ্গিক ভাবনা
প্রথম পাতা » পরিবেশ » জলাভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রাসঙ্গিক ভাবনা
৭৮৭ বার পঠিত
শনিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জলাভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রাসঙ্গিক ভাবনা

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান।

জলাভূমি হ্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও সংরক্ষণে জাতিসংঘের আয়োজনে ক্যাম্পিয়ান সাগরবর্তী ইরানের রামসার শহরে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়ে আসছে। জলাভূমির প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে রামসার কনভেনশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ জলাভূমি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়। সেই থেকে সরকারি দপ্তর, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সহ বিভিন্ন স্তরের জনগণ জলাভূমির উপযোগিতা ও সুবিধার বিষয়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও জনসচেতনা সৃষ্টিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। জলাভূমিগুলোর হ্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জলাভূমিগুলোতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা সঠিকভাবে সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও উদ্যোগ গড়ে তোলার উদ্দেশেই দিবসটি বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়।

বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে নদ-নদী, খাল-বিল ও হাওড়-বাওড় সমৃদ্ধ একটি দেশ। দেশে মোট ৩৭৩টি জলাভূমি আছে। যার মোট আয়তন ৮,৫৮,৪৬০ হেক্টর। এই জলাভূমির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছে। জলাভূমি আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য, মৎস্য, জলজ উদ্ভিদ, ফল ও খাদ্য শষ্যের আধার। নিছক মাছের আবাসস্থল নয়, এখানে জন্মানো জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। আমাদের কৃষি কাজ জলাভূমির পানির উপর নির্ভরশীল। জলাভূমির পানি শোধনাগার, মৎস্য ও প্রাণীকূলের আবাসস্থল। জলাভূমি ভূ-গর্ভের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু দ্রুত নগরায়নে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের অধিকাংশ জলাভূমি। আর শহরের জলাভূমি ভরাটের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

জলাভূমি অপব্যবহারে ইতিমধ্যে অনেক জলাভূমি হারিয়ে গেছে। বিকাশমান নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে জলাভূমিগুলো শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক অবকঠামোয় রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে জলাভূমি সংরক্ষণ ও দেখাশুনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন জলাভূমি মার্কেট, প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হাউজিং প্রকল্পে রূপ নিচ্ছে। এখানে সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত দপ্তর /সংস্থাগুলোর দায়সারা দায়িত্ব পালনের কারণে গ্রাম ও শহরের বিদ্যমান জলাভূমি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া উন্মুক্ত প্রাকৃতিক জলাশয় গুলোতে নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেওয়ার কারণে সে গুলো ডোবা ও নালায় পরিণত হচ্ছে। ফলে মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিচারণ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংস্কুচিত হয়ে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ খালের মত অবকাঠামোর জন্য গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র প্লাবন ভূমিতে প্রায় ২ কোটি হেক্টর জলাভূমি বিলিন হয়ে গেছে।

১৯ শতকের শুরুতে যে চলনবিলের আয়তন ছিল ১০৮৫ বর্গকিলোমিটার, তা ১৯০৯ সালে এসে দাড়ায় ৩৬৮ বর্গকিলোমিটারে, আর বর্তমানে মাত্র ৮৫ বর্গকিলোমিটারে সারা বছর কমবেশি পানি থাকে। বাংলাদেশে পানির ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা জাতীয় পানি নীতিমালার সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ণ নয়। জলাভূমির জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থাপনা নেই। পানির ব্যবস্থাপনায় জলাভূমির ব্যবস্থাপনা চলছে। তবে এভাবে চলতে থাকলে অল্প দিনে জলাভূমি বিলিন হয়ে যাবে। রামসার কর্তৃপক্ষ গত বছর জলাভূমি দিবসের প্রেক্ষাপট বর্ণণা করতে গিয়ে বলে ছিলেন, ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬৪ শতাংশ জলাভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে এসব জলাভূমির উপর নির্ভরশীল মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জীবনযাত্রা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জলাভূমি রক্ষায় স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায় জলাভূমি চিহ্নিত করা, নির্বাচিত জলাভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করা, জলাভূমি ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সর্বস্তরে টেকসই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এর জন্য জলাভূমির বিষয়ে গণসচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে জলাভূমি অপব্যবহার রোধ করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জলাভূমি উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অর্পিত দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া জলাভূমি রক্ষার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সমন্বয় অত্যাবশ্যক। মানুষের জন্য জলাভূমির ভূমিকা সব সময় বিবেচনায় রাখতে হবে। জলাভূমির দেশ হিসেবে বিশ্ব জলাভূমি দিবস বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখক ঃ সাংবাদিক

 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)