শনিবার ● ২ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছার শাপলা ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় একের পর এক রোগীর মৃত্যু
পাইকগাছার শাপলা ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় একের পর এক রোগীর মৃত্যু
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
পৌর সদরের মৃত্যুকূপক্ষ্যাত “শাপলা ক্লিনিকে” অপচিকিৎসায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন নবজাতকসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ক্লিনিকের সত্বাধিকারী তাপস মিস্ত্রী নিজেই ডেলিভারী করার কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। রোগীর মৃত্যু বা অবস্থা খারাপ হলেই দ্রুত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে খুলনায়। শাপলা ক্লিনিক থেকে খুলনায় বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণের পর সেই রোগীর বেঁচে থাকার নজির খুবই কম, হয়তোবা নেই। তবে শাপলা ক্লিনিকের সত্বাধিকারী তাপস মিস্ত্রী নিজে ডেলিভারী করার কথা অস্বীকার করলেও সম্প্রতি তার ক্লিনিকে দু’নবজাতকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেন।
পৌরসভার শিববাড়ি ব্রিজ রোডের বাসিন্দা মর্জিনা বগেম জানান, গত শনিবার বিকালে তার অন্তসত্বা বোন মরিয়ম বেগমকে শাপলা ক্লিনিকে নিয়ে সুজন ডাক্তার আছেন কিনা জানতে চাই। ক্লিনিকের মালিক তাপস মিস্ত্রী তাকে বলেন, এখানেতো সুজন ডাক্তারই রোগী দেখবেন। সন্ধ্যার পরপরই তাপস মিস্ত্রী নিজেই মরিয়মকে ওটিতে নিয়ে নরমল ডেলিভারীর চেষ্টা করে এবং মর্জিনা বেগমকে ধমক দিয়ে বলে আমাদের ডাক্তার হিসেবে পছন্দ হয়না। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৭টার সময় তাপস মিস্ত্রী মোবাইলে জানালে ডেলিভারী হবার পর ডাঃ সুজন আসেন ক্লিনিকে। এরই মধ্যে নবজাতকের অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত খুলনায় পাঠানো হয়। খুলনার শিশু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির পর পরদিন রোববার সকালে নবজাতকের মৃত্যু হয়। শিশু হাসপাতালের ডাক্তারের বরাত দিয়ে মর্জিনা বেগম বলেন, ডেলিভারীর সময় নবজাতকের মাথায় আঘাত লাগার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মর্জিনা বেগম জানান, সোমবার মরিয়মকে ক্লিনিক থেকে ছাড়াবার সময় যেহেতু বাচ্চাটা মারা গেল সেই মানবিকতায় কিছু টাকা কম নেয়ার কথা বললে তাপস মিস্ত্রী তার সাথে ভীষণ খারাপ আচরন করে। জানা গেছে, গত রবিবার উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামের জনৈক নূরইসলাম সরদারের ছেলে শাহাদাৎ সরদারকে (২০) টিউমার অপারেশনের জন্য শাপলা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সোমবার তার অপারেশন করার পর হতভাগা শাহাদাতের মৃত্যু হলে তড়িঘড়ি করে এ্যাম্বুলেন্সে খুলনায় পাঠানো হয়। একের পর এক ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় রোগী-নবজাতকের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তাপস মিস্ত্রী বলেন, ডেলিভারীর আগেই যদি বাচ্চা মারা তার দায়ভার কি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। তিনি বলেন, ডেলিভারীর পর দেখা গেছে এক বাচ্চার একটি হাত ও একটি পা নেই, আরেক বাচ্চার পেটের মধ্যে বিশালাকৃতির টিউমার, তাহলে এসব বাচ্চা বাচবে কিভাবে। উল্লেখ্য, উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের মৌখালী গ্রামের মাহফুজুর সানার স্ত্রী আরিফা বেগমকে (২০) গত ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ শাপলা ক্লিনিকে এ্যাপেনডিক্স অপারেশনের পর রুগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাকে খুলনায় পাঠানো হয়। সেখানে ২২ মার্চ ভোররাতে হতভাগী আরিফা বেগমের অকালমৃত্যু হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে লাখ টাকা ছড়ায় তাপস মিস্ত্রী। এ ঘটনা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ২৬ মার্চ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মৃত্যুকূপ নামে খ্যাত শাপলা ক্লিনিকের সার্বিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। যদিও রহস্যজনকভাবে মাত্র ১০/১৫ দিনের ব্যবধানে ফের চালু হয় মৃত্যুপূরী শাপলা ক্লিনিক।