মঙ্গলবার ● ৫ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » খুলনায় সরকারি ওষুধ উদ্ধার
খুলনায় সরকারি ওষুধ উদ্ধার
এস ডব্লিউ নিউজ।
ওষধ নিয়ে খুলনায় পদে পদে দুর্নীতি আর অনিয়ম ধরা পড়ছে। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওষুধ চুরি ও পাচারকারী সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি হাসপাতালের রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহকৃত ও বিক্রি নিষিদ্ধ জীবনরক্ষাকারী মূল্যবান ওষুধ মিলছে হেরাজ মার্কেটে।
হাসপাতালের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সংঘবদ্ধ চক্র ওষুধ চুরি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক রোগীর স্বজন এম রহমান বলেন, সরকারি ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়ার কথা রোগীদের। কিন্তু সরকারিভাবে সরবরাহের কথা থাকলেও বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগীদের। নাম মাত্র মাঝে মধ্যে দুই একটা ওষুধ দেয়।
সোমবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মহিলা রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দিলে ওই মহিলা রোগী তার কাছে থাকা ওষুধ বের করে দেখিয়ে বলেন, এই ওষুধ খেলে কী হবে। তখন বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদের নজরে আসে। এই সরকারি ওষুধ কোন জায়গা থেকে কিনে এনেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে মহিলা রোগীটি দোকানের নাম বলে দেন। ওই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক রোগীকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর বানরগাতি ১১২/২ ইসমাইল রোড এলাকায় গিয়ে পিতৃমাতৃ মেডিকেল হল নামক ওষুধের দোকানটি দেখিয়ে দেন। দোকানের মালিক ভজ হরি চন্দন গাইনকে দোকানে আসলে তার দোকান থেকে সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ নামীদামি এন্টিবায়েটিক ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
চন্দন গাইন স্বীকার করেন তিনি নগীরর হেরাজ মার্কেটে বেলী ড্রাগ হাউজ থেকে সরকারি ওষুধ কিনে রোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নগরীর হেরাজ মার্কেটে মেসার্স বেলী ড্রাগ হাউজে অভিযান চালিয়ে সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ ইনজেকশন ও ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় দোকানের মালিক মাসুদুর রহমান ডালু পলাতক ছিলেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন বলেন, চন্দন গাইনের স্বীকারোক্তিতে নগরীর হেরাজ মার্কেটে বেলী ড্রাগ হাউজে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ কিটিরোলাক ইনজেকশন ১২০টি ও কার্ডন-(৫০) ২শ টি ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। মালিক পলাতক থাকার কারণে দোকানটিকে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, যারা হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোথায় থেকে ওইসব সরকারি ওষুধ বাইরে পাচার হচ্ছে তা বের করার চেষ্টা চলছে।
সরকারি ওষধের পাশাপাশি খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ ওষুধ। বিভিন্ন কোম্পানির এসব ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে রোগীদের ওপর পরীক্ষার উদ্দেশে চিকিৎসকদের দেয়া হয়। যা ওষুধের দোকানে বা সাধারণ মানুষের কাছে সরবরাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু নিয়ম না মেনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন।
একই সঙ্গে মহানগরীতে সরকারি ওষুধ ও ভেজাল ‘আনরেজিস্টার্ড’ ওষুধের বিক্রয় বেড়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় মানুষের হাতে ওষুধের বদলে এসব বিষ তুলে দিচ্ছেন।
রোববার বিকেলে বিক্রি নিষিদ্ধ তিন বস্তা ওষুধ (ফিজিশিয়ান স্যাম্পল) পাচারের সময় আশিক শেখ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। মহানগরীর মজিদ সরণি এলাকায় ইজিবাইক থেকে এসব ওষুধ উদ্ধার করা হয়। আটক আশিক শেখের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায়। তিনি বেশ কিছুদিন খুলনার হেরাজ মার্কেটে ওষুধ বিক্রির কাজ করছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিক্রি নিষিদ্ধ এসব ওষুধ ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিনেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
খুলনার ডিবির ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ পাচারের সময় আটক আশিক শেখ জিজ্ঞাসাবাদে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসকের নাম বলেছেন। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
খুলনার ওষুধ প্রশাসক (ড্রাগ সুপার) মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি বন্ধে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জীবন রক্ষার ওষুধ নিয়ে এ ধরণের দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন খুলনার সচেতন নাগরিকরা।