রবিবার ● ৮ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » ফিচার » কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির অবসান হোক
কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির অবসান হোক
প্রকাশ ঘোষ বিধান
আজকের কন্যা শিশু আগামী দিনের একজন মহিয়সী রানী। কন্যা একটি জাতির অর্ধৈক জনগোষ্ঠী। তাই কন্যা শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠ বিকাশের লক্ষে প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। ২০০০ সাল থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রানলয়ের উদ্যোগে প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনেরমুখ্য উদ্দেশ্য হলো কন্যা শিশুদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্যমুলক আচারন দুর করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের সব ধরনের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তাই নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। আর নারী-পুরুষ একে অপরের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মা-বাবার কাছে সন্তান সব চেয়ে বড় সম্পদ। সে সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এখনও অনেক অভিভাবক কন্যা শিশু জন্ম গ্রহন করলে খুশি হন না। পুত্র সন্তানকে যে যত্নে লালন পালন করে কন্যা সন্তানকে সেভাবে লালন পালন করে না। পরিবার থেকে কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচারণ শুরু হয়। আর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য মুলক আচারনের চিত্র একই রকম। অনেক পরিবার কন্যা শিশুদের পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাধীনতার বিষয়টি ভাবেনই না। নারী তথা কন্যা শিশুরা সমাজে বিভিন্নভাবে নিগৃহত হচ্ছে। প্রতিদিন বোখাটেরা পথে পথে কিশোরী মেয়েদের বিভিন্নভাবে বিরক্ত ও উত্তক্ত করছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে বেশিরভাগ অভিভাবক ও সমাজ এর দায়ভার মেয়েটির উপর চাপায়। আর এই অপমান, লাঞ্ছনা ও বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে কিশোরীরা আত্নহননের পথ বেছে নেয়। কন্যা শিশু নির্যাতন ও যৌন রহয়রানীর শিকার হচ্ছে। গৃহ পরিচারিকার কাজে, নিয়োজিত শিশুরা গৃহকর্তির হাতে অমানবিক নির্যাতন, আবার গৃহকর্তা কর্তৃক ধর্ষন ও যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে। অনেক অভিভাবক এসব কারনে কন্যা শিশু নিরাপত্তার কথা ভেবে বাল্য বিয়ে দিচেছ। অনেক পরিবার পুত্র সন্তানের আশায় অধিক সন্তান নিচ্ছে, এমনকি অন্যকেও উৎসাহিত করছে।
সমাজে আমরা নিজেদের আধুনিক মানুষ ভাবলেও কন্যা শিশুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন খুব বেশি ঘটেনি। আজকের কন্যা শিশুই আগামী দিনের একজন নারী ও মা। অনেক কন্যা শিশু সমাজে অবহেলা-অনাদরে প্রতিকুল পরিবেশ পাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। পুত্র সন্তানটির মত কন্যা সন্তানটিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে সে মেয়েটি পরিবার ও সমাজে সর্বতোভাবে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে। আজ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা ক্ষমতাসীন। নারীর গ্রহনযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এই সত্য উপলদ্ধি করতে হবে। সমাজের কু-সংস্কার আর কু-শিক্ষার বেড়াজাল ছিড়ে সভ্যতার আলোয় বিকশিত হতে হবে। তাই কন্যা শিশু ভেবে নয় সন্তান হিসাবে তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আর এখনই কন্যা শিশুর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য, অবহেলা, নির্যাতন বদ্ধ করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে সাধারণ জনগনকে সম্পৃক্ত করে প্রচার প্রচারনা বাড়াতে হবে। কন্যা শিশু নয় মানুষ হিসাবে সব কিছুতে সমান অধিকার ভোগের অধিকার তার সমান। সবাই এই বাস্তবতা মানার মানষিকতা তৈরী করতে হবে।