শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ২১ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় বন অপরিহার্য
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় বন অপরিহার্য
১৭৫১ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২১ মার্চ ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় বন অপরিহার্য

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান।

 

পৃথিবীর প্রাণ হলো উদ্ভিদ তথা বনভূমি। বন ছাড়া জীববৈচিত্র্য তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে পৃথিবীর বনভূমি রক্ষাছাড়া কোন উপায় নেই।

বন সুরক্ষায় ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস পালন করছে। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে ইউরোপিয়ান কৃষি কনফেডারেশনের উদ্যোগে জাতি সংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার সদস্য দেশ সমূহ প্রতিবছর ২১ মার্চ থেকে বিশ্ব বন দিবস উদযাপনের সম্মতি জ্ঞাপন করে। সেই থেকে প্রতিবছর পৃথিবীর অনেক দেশই ২১ মার্চ বন দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯২ সালে রিওঘোষণা’য় বনসৃজন ও রক্ষার্থে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় বন ও বনভূমির নিরাপত্তা রক্ষার্থে ২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বন অপরিহার্য। বনই প্রকৃতির শক্তির আঁধার। জীবন ও জীবিকার জন্য বন থেকে খাদ্য, আশ্রয়, ঔষধ, ছায়া, বিনোদন ও বায়ু পাই। তাই দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর প্রভাব থেকে রক্ষার পাওয়ার ক্ষেত্রে বনের ভূমিকা অপরিসিম।

পৃথিবীতে প্রায় ৪ বিলিয়ন হেক্টর বনভূমি আছে। তবে প্রতিদিন পৃথিবী থেকে ৩৫ হাজার ৬শত হেক্টর বনভূমি উজাড় হচ্ছে। যার বছরে দাড়ায় প্রায় ১৩ মিলিয়ন হেক্টর। বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপি মাথাপিছু বনের পরিমাণ ০.৬ হেক্টর। আর বাংলাদেশে মাথাপিছু বনের পরিমাণ ০.০১৭ হেক্টর। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক শতাংশ ক্রান্তীয় বনভূমি মানুষের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। বিগত ৭০ বছরে পৃথিবীর মোট ক্রান্তীয় বনভূমির ৫০ শতাংশ উজাড় হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে অপসৃত বনভূমির চিত্র বিশ্লেষনে দেখাগেছে যে, প্রতিবছর পৃথিবী থেকে পৌনে দুই কোটি থেকে দুই কোটি হেক্টর বন মানুষের প্রয়োজনে চিরোতরে হারিয়ে গেছে। আর এ শুধু বনভূমি নয়, এর সাথে বনে বসবাসকারী হাজার হাজার প্রজাতির জীবজন্তুর জীবন হুমকির সম্মখিন হচ্ছে। আবাসস্থল হারিয়ে অনেক প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরোতরে হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

---

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল একটি দেশ। দেশের আয়তন ১৪.৭৫৭ মিলিয়ন হেক্টর। দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ২.৫৩ মিলিয়ন হেক্টর। বন অধিদপ্তরের হিসাব মতে বাংলাদেশের মোট ভূমির শতকারা ১৭.৫ শতাংশ বনভূমি চিহ্নিত থাকলেও আসলে বনভূমি আচ্ছাদিত বন এলাকার পরিমাণ শতকারা ৮.০ ভাগের বেশি নয়। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ক্রমবদ্ধমান জনসংখ্যার চাঁপে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। গ্রাম ও শহর অঞ্চলে ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধনের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। দিনের বেলা দুঃসহগরম আর রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। অসময়ে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে বিপর্যস্ত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশ সহ পৃথিবী ব্যাপি বনভূমি কমে আসছে। কমছে গাছ-গাছালির সংখ্যাও। বিপন্ন হচ্ছে জীবজন্তু ও বন্যপ্রাণী।

বৃটিশ শাসন আমলে ১৮৬২ সালে বনবিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অবিভাক্ত ভারতবর্ষে ইম্পেরিয়াল ফরেস্ট সার্ভিস, প্রভিনসিয়াল ফরেস্ট সার্ভিস, সাব অর্ডিনেট ফরেস্ট সার্ভিস নামে অবহিত ছিলো। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্বে বাংলাদেশের বনাঞ্চল, বেঙ্গল ও আসাম বন বিভাগদ্বয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তান হওয়ার পর কৃষি মন্ত্রাণালয়ের অধিনে ইষ্ট পাকিস্তান সিনিয়র ফরেস্ট সার্ভিস ও সাব অর্ডিনেট ফরেস্ট সার্ভিস নামকরণ করা হয়। ১৯৮৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রাণালয় সৃষ্টি হয়। এরআগে বনভূমি ছিলো কৃষি অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে। দেশে বনবিভাগ নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১.৫৩ মিলিয়ন হেক্টর। অশ্রেণিভুক্ত রাষ্ট্রিয় বন ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর এবং গ্রামীন বনের পরিমাণ ০.২৭ মিলিয়ন হেক্টর। অশ্রেণিভুক্ত রাষ্ট্রিয় বনাঞ্চল জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন।

বনের বি¯তৃতি, প্রতিবেশ ও অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের বনাঞ্চলকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পাহাড়িবন, শালবন ও উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাংলাদেশের মোট বনভূমির ৪৪ শতাংশ সুন্দরবন। প্রাকৃতিক বন ছাড়াও সারাদেশে বসতবাড়ীর চারিপাশে, নদী ও জলাশয়ের ধারে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বিদ্যমান। আমরা বৃক্ষ আচ্ছাদিত বনকে গ্রামীন বন বা বসতবাড়ী সংলগ্ন বন বলে থাকি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বনের উপর চাপ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত বন উজাড় হচ্ছে। তবে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ১৫টি এলাকাকে ৩ ভাগে ভাগ করে উডলট, কৃষি ও স্ট্রিপ বন পরিচালনা করা হচ্ছে।

একটি দেশের পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার জন্য মোট বনভূমির কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। বন অধিদপ্তরের মতে দেশের মোট ভূমির ১৭.৫ শতাংশ বনভূমি। জাতীয় সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১৩ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে বনের ভূমিকা অপরিসিম। নানা কারণে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। উন্নয়ন কাজের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রাণালয় ও বিভাগকে বনভূমি বন্দোবস্ত দিতে হচ্ছে। এভাবে জমি দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বনভূমি সংকুচিত হচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণালয়ের এক তথ্যে জানাযায়, এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাহিরে জবর-দখল হয়ে গেছে প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৬৫ একর বনভূমি। সবমিলিয়ে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৬৫ একর। এর ফলে হুমকিতে পড়েছে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, শিল্পায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ ও নগরায়নের ফলে বিশ্বব্যাপি বন ও বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। তাই পরিবর্তনশীল জলবায়ুর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনের ভূমিকা অপরিসিম।

 

লেখক ঃ সাংবাদিক

 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)