সোমবার ● ১ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » ডুমুরিয়ার কচু চাষী নিউটন এখন সফল কৃষক
ডুমুরিয়ার কচু চাষী নিউটন এখন সফল কৃষক
অরুণ দেবনাথ, ডুমুরিয়া প্রতিনিধি।
খুলনার ডুমুরিয়ায় কচু চাষের মাধ্যমে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করেন ডুমুরিয়া কচু চাষী নিউটন মন্ডল। উৎপাদিত কচু সবটাই তিনি বিক্রয় করনে অনলাইনে। প্রায় ১০ ফুট লম্বা একেক একটি কচুর মূল্য সর্বনি¤œ ১০০ টাকা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র সুবিধা নিয়ে সামন্য শ্রমিক থেকে নিউটন মন্ডল এখন দেশের একজন সফল চাষী। বর্তমানে করিয়ায় কচু রপ্তানির প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন কচু চাষী নিউটন মন্ডল। কচু চাষে নিউটন মন্ডলের সাফল্যের পর অনেকেই চলতি বছর থেকে কচু চাষ শুরু করেছেন ডুমুরিয়া এলাকায়। খুলনার ডুমুরিয়া রংপুর গ্রামে নিউটন মন্ডলের কচুর ক্ষেত। ‘নিউটনের কচু ক্ষেত’ বলেই এ স্থানটি পরিচিত। উপজেলার রংপুর গ্রামের রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের পুত্র নিউটন মন্ডল। অভাবের কারনে লেখা-পড়া তেমন হয়ে ওঠেনি। তাই খুলনার দৌলতপুরে একটি জুট প্রেসে যাচাই বিভাগে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। বিএনপি-জামায়েত সরকার ক্ষমতায়। শ্রমিকরা মজুরি-বেতনের দাবীতে আন্দোলন করছে। নিউটন মন্ডল ফিরে গেলেন বাড়িতে। একই জেলার তেরখাদা উপজেলার কালিনগর এলাকায় নিউটন মন্ডলের শ্বশুর বাড়ি। সেখানে গিয়ে তিনি কচু চাষে উদ্বুব্ধ হলেন। ২০০৯ সালের দিকে মাত্র ২ কাঠা জমিতে কালিনগর থেকে কচুর চারা এনে চাষ শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিউটন মন্ডলের প্রতিটি কচু ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। সুস্বাদু এ কচুর লতি। অল্প মসয়ের মধ্যে নিউটনের কচুর গুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশ এলাকায়।পরের বছর তিনি আরও ১ বিঘা জমিতে কচু চাষ শুরু করেন। এবারও একই ফলন। এভাবেই চলতে লাগলো তার কচু চাষ। যত দিন যাচ্ছিল ততই জমির ক্ষেতের পরিমান বাড়ছে নিউটন মন্ডলের। এক সময়ে নিউটন মন্ডল কচুর ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করল। প্রতিটি কচু ১শ টাকা দাম নির্ধারণ করল ফেসবুকের মাধ্যমে। এ থেকেই অনলাইনে নিউটন মন্ডলের কচুর ব্যবসা শুরু। হোম ডেলিভারীর ব্যবস্থাও রয়েছে তার। বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিলেই বাড়ি বসে পাওয়া যায় কচু। শুধু কচুই নয়, গত বছর নিউটন মন্ডল দেড় লাখ টাকার কচুর চারা বিক্রয় করেছেন ফেসবুকে অর্ডার গ্রহণের মাধ্যমে। দেশের বিভিন্ন স্থানে একই উপায়ে কচুর চারা বিক্রয় করেন নিউটন মন্ডল। কচুর লতিতেও জুড়ি নেই প্রতি বছর লাখ টাকার উপরে তিনি কচুর লতি বিক্রয় করেন। নিউটন মন্ডলের কচুর চাষ এবং লাভের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। ফলে এ উপজেলা এলাকায় এখন ৮-১০ জন কৃষক কচু চাষ করছেন। সুখবর রয়েছে আরও। দেশের পর নিউটনের কচুর খ্যাতি এখন বিদেশেও।
সাম্প্রতি কোরিয়াতেও কচু রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে দর-দাম শুরু হয়েছে। দর-দাম নির্ধারণ হলেই কোরিয়াতে খুব শিঘ্রই কচু রপ্তানি শুরু হবে। এ ব্যাপারে নিউটন মন্ডল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের কারনেই আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি কচু বিক্রয় করি। বিকাশে টাকা আসলেই আমি চাহিদা অনুযায়ী কচু, কচুর লতি এবং কচুর চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছিয়ে দেই। মাত্র ২ কাঠা জায়গায় কচু চাষ আমার ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছে। এবার আমি কচুর পাশাপাশি বেগুন চাষ শুরু করেছি। নিউটনের কচুর চাষ সম্পর্কে ডুমুরিয়া উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘কচু চাষ ধান চাষ অপেক্ষা লাভজনক। ডুমুরিয়ায় নিউটন মন্ডল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কচু চাষ করেছেন তা দিন দিন সম্প্রসারণ হচ্ছে।’ এ বিষয়ে কথা ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক হোসেনের সাথে, ‘তিনি জানান উপজেলা এলাকায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয় এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। বাকী জমিতে সবজী ও ফলের চাষ হয়। উপজেলা এলাকায় বেশ কয়েকজন রয়েছেন সফল চাষী। আবার কয়েকজন রয়েছেন পুরষ্কার প্রাপ্ত। সম্প্রতি সময়ে উপজেলা রংপুর এলাকায় নিউটন মন্ডল নামের এক চাষী কচু চাষের মাধ্যম সফল চাষীর তালিকায় এসেছেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন প্রগতিশীল চাষী হিসাবে পরিচয় লাভ করেছেন।’