বুধবার ● ১ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » কেশবপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কাল বৈশাখীর বৈরীতায় আতঙ্কে কৃষক
কেশবপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কাল বৈশাখীর বৈরীতায় আতঙ্কে কৃষক
এম. আব্দুল করিম, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি ।
যশোরের কেশবপুরে চলতি বোরো মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও কাল বৈশাখীর বৈরীতা ও ধান কাটা শ্রমিক সংকটের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। এ বছর আগাম ঝড়বৃষ্টির কারণে সম্প্রতি এ অঞ্চলের উপর দিয়ে শিলা বৃষ্টিসহ ৪/৫ বার ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ায় ক্ষেতের ধানগাছ এলামেলো হয়ে পড়লেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এলাকার প্রায় সব ক্ষেতের ধান এক সাথে পাকার কারণে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে মাঠের ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, চলতি ইরি বোরো মওসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন বিলে ১৬ হাজার ৫‘শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু উপজেলার পূর্ব এলাকার অধিকাংশ বিলে মাছের ঘেরে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ধানের আবাদ হয় ১৫ হাজার ২১০ হেক্টর জমি। যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ২৯০ হেক্টর কম। এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন মাঠে ৫ হাজার ৭‘শ ৭৫ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ব্রি-ধান- ২৮, ৫০, ৫৮, ৬৩, ৭৪, ৮১ সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হয়। সার, বীজ ও কীটনাশক ছিল কৃষকের হাতের নাগালে। ডিজেল ও বিদ্যুতের সরবরাহ ছিল কৃষকের চাহিদা মত। সব মিলিয়ে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এক সপ্তার মধ্যে উপজেলার সর্বত্রই শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াই মওসুম। কিন্তু দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টি মওসুম এবার আগেভাগেই শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই পড়ছে এর প্রভাব। উৎপাদন খরচও গত বারের চেয়ে এ বছর বেশী হয়েছে। এরপরও কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য মোটা অংকের দাম হাকাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি কৃষকরা সীমাহীন ক্ষতির মধ্যে পড়বে। এ বছর ধানের দাম কমের কারণে কষ্টের ধানে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েও কৃষকরা সংশয়ে রয়েছেন। শিকারপুর, ভালুকঘর, সরাপপুর, আলতাপোল, পাজিয়া, কলাগাছী, মধ্যকুল, ভান্ডারখোলা, সাগরদাড়ী, সরসকাটিসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গ্রামের লোকজন গার্মেন্ট, ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন কাজে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। ফলে কৃষি কাজে দিন দিন শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তার পরও ধান কাটার সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে চড়া দামে শ্রমিক আনতে হচ্ছে। এক হেক্টর জমির ধান কেটে বাড়ি আনতে তার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, এ উপজেলার কোথাও কোথাও বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর ৫/৭ দিনের মধ্যে মাঠে ধান কাটার হিড়িক পড়ে যাবে। ইতোমধ্যে নতুন নতুন উফশী জাতের ধানের নমুনা কর্তন ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। রোগের আক্রমন থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের বেশী মাত্রায় পটাশ সার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বলেই এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।