মঙ্গলবার ● ১৪ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » সারাদেশ » আশাশুনিতে বয়স্ক ভাতার কার্ড না পেয়ে দারে দারে ৮৭ বছরের মানিক সানা
আশাশুনিতে বয়স্ক ভাতার কার্ড না পেয়ে দারে দারে ৮৭ বছরের মানিক সানা
আশাশুনি : আশাশুনির সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বলাবাড়িয়া গ্রামে মনিক চন্দ্র সানা। জন্ম ১৯৩১ সালের ২২ অক্টোবর। খাতা কলমে তার বয়স প্রায় ৮৭ বছর। একটি বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য আজ দু’বছর হলো সমাজসেবা অফিসে ঘুরা ঘুরি করছেন। কিন্তু কাজের কাজ কার্ড আজও হয়নি। রোববার দুপুরে তিনি সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী চন্দ্র মল্লিকা সাহানীকে খুঁজতে অফিস ঘুরে তার বাসায় আসেন। দেখা না পেয়ে তার বাসার গেটের পাশে ঘাসের উপর শুয়ে পড়েন। পাশেই আশাশুনি প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় হওয়ায় বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। তারা বৃদ্ধ মানিক চন্দ্রকে তুলে নিয়ে চায়ের দোকানে বসিয়ে তার কথা মনযোগ দিয়ে শুনে বিষ্মিত হয়ে পড়েন। কথা বলার শুরুতে তিনি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, যৌবনকালে ৮০ দশকে তিনবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ছিলাম। ৩ ছেলের মধ্যে দুটো থাকে ভারতে। একটি ছেলে (খগেন্দ্র) সামান্য জমিতে মাছের ঘের করলেও বাগদায় ভাইরাস লাগায় সেও অর্থনৈতিকভাবে একেবারেই শুন্যের কোঠায় নেমেছে ফলে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় দু’বছর যাবত সমাজসেবা অফিসে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ঘুরছি। অফিসের লোক দু’বার আমার আইডি কার্ডের (৮৭১০৪১৭৬৯৬৩৬৭) ফটোকপি নিয়েছেন কিন্তু অজ্ঞাত কারনে আজও কার্ড করে দেননি শুধুই ঘুরাচ্ছেন। আজ (রোববার) প্রখর রোদে অফিসে এসেছিলাম বাড়ী থেকে ১০টি টাকা হাতে নিয়ে প্রায় ৭কি:মি: পথ পায়ে হেঁটে। দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মাথা ঘুরতে থাকায় চন্দ্র মল্লিকার বাসার সামনে ঘাসের উপর শুয়ে পড়েছিলাম। তিনি বলেন হোটেলে গিয়েছিলাম ভাত খেতে। ১০ টাকায় ডাল-ভাতও হয়না তাই চলে এসেছি। সাংবাদিকরা তার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আর নিয়তি এখানে নিয়ে এসেছে। অসহায় ছেলের বোঝা হয়ে থাকতে বড় কষ্ট হয়। বাবা- আর হয়ত বেশি দিন তোমাদের কষ্ট দেব না। দেখ চেষ্টা করে যদি কিছু করতে পার। এ ব্যাপারে উপস্থিত সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সম সেলিম রেজা মিলকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানান। তিনি জানান, মানিক চন্দ্র সানা আমার তালিকা জমা দেওয়ার পর আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বরও তালিকায় মানিক চন্দ্র সানার নাম তালিকাভূক্ত করেননি। ওনাকে বলেছি এর পরের তালিকায় অবশ্যই তার নাম দেব। সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী হুমায়ন কবীর জানান, ওই বৃদ্ধের নাম তার ওয়ার্ডের প্রতিনিধিই আমাদের দেননি। আমরা চেষ্টা করছি কোনভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায় কিনা। বিষয়টি আমলে নিয়ে মানবিক বিবেচনায় বৃদ্ধ ৮৭বছর বয়সী সাবেক জনপ্রতিনিধি মানিক চন্দ্র সানাকে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বয়স্কভাতার আওতায় নিতে সমস্যা কি ? এ প্রশ্নের উত্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দসহ বৃদ্ধের পরিবার।