রবিবার ● ৯ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ‘চাপ থাকলে ওই সম্পাদক জার্মানিতে গিয়েও ওই কথা বলার সাহস পেতেন না’
‘চাপ থাকলে ওই সম্পাদক জার্মানিতে গিয়েও ওই কথা বলার সাহস পেতেন না’
এস ডব্লিউ নিউজ:
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সম্প্রতি জার্মানি গিয়ে দেশে নিজের মতো করে কলাম লিখতে পারছেন না বলে যে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি চাপ থাকতো তাহলে উনি কি জার্মানি গিয়ে এই কথাটাই বলার সাহস পেতেন? ত্রিদেশীয় সফর শেষে আজ রবিবার (৯ জুন) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফরের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তার লিখিত বক্তব্য শেষে এই সফরসহ দেশের সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। প্রশ্নোত্তর পর্বে ৭১ টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রূপার প্রশ্ন ছিল, যখন জাপানে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) গ্রান্ড গালা সংবর্ধনা হয়েছে, তখন বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল জার্মানিতে গিয়েছিল। সেখানে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক ডয়েচে ভেলেতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে তিনি তার মতো করে কলাম লিখতে পারছেন না। নানান ভয়ে, তিনি কলাম লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তার যা বলবার কথা ছিল সেটি তিনি বলতে পারছেন না। গণমাধ্যমের প্রতি আপনার কোনও দিক নির্দেশনা আছে কিনা সেটি আমাদের বুঝে নেওয়া দরকার।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে সম্পাদক এই কথা বলছেন যদি সত্যিই এই অবস্থাটা হতো তো উনি কি এই কথাটুকু বলার সাহস পেতেন? যদি চাপ থাকতো তাহলে উনি এই কথাটাই বলার সাহস পেতো কিনা আমার প্রশ্নটা এখানে। কেউ তো চাপ দেয়নি।’
প্রসঙ্গত: সম্প্রতি জার্মান টেলিভিশন ডয়েচে ভেলের মিডিয়া ফোরামের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেইলি স্টার সম্পাদক নিজের কাজ ও দেশের পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না এমন মন্তব্য করেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নকর্তা ও প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তার নাম উল্লেখ করেননি।
সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ এমন মত পোষণকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক একটা প্রক্রিয়া থাকলে তাদের ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে অগণতান্ত্রিক একটা প্রক্রিয়া থাকলে, যেমন ইমার্জেন্সি সরকার হোক, মিলিটারি সরকার হোক তখন তারা ফরমায়েসি লেখা লিখতে পারেন।’
প্রশ্নকারীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার কথা আপনি বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি তিনি কে।’ এরপর ওই সম্পাদকের বিষয়ে একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘একবার একটা টেলিভিশন টকশোতে কোনও একটা মিথ্যা নিউজ দেওয়া হয়েছিল বলে কেউ তাকে ধরেছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে ডিজিএফআই যেটা সাপ্লাই দিয়েছিল আমি সেটাই নিউজ হিসেবে ছেপেছি।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি ওই কথাটার সঙ্গে এই কথাটার লিংক করেন তার মানে দাঁড়ায় এখন ডিজিএফআই তাকে (সম্পাদককে) কোনও লেখা দিচ্ছে না, সেজন্য তিনি ফরমায়েসি লেখা লিখতে পারছেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো জিজিএফআইকে দিয়ে কোনও তথ্য দেওয়াচ্ছি না। সে কারণে এখন উনি নিজেই লিখতে পারছেন না। তার মানে কোনও ফরমায়েসি লেখা না হলে উনি লিখতে পারেন না। তার মানে তো এটাই দাঁড়াচ্ছে।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার উদ্দেশে বলেন, ‘উনি লিখুন না, উনার যা খুশি তাই লিখে ফেলুন। লিখে তো যাচ্ছেনই।
এসব পত্রিকার কোনও সহযোগিতা পান না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যদি মনে করি, আমার নিজের যদি সব কিছু ঠিক থাকে, সঠিক বলছি, সঠিক করছি, সেটাই আমার কাছে বড়। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি, আমি যা কাজ করি দেশের কল্যাণে করি। কে মন্দ বললো, কী করলো এটা নিয়ে তো আমার মাথাব্যথার কিছু নেই ।’
প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘বাংলাদেশ কি এগিয়ে যাচ্ছে না? এর সুফলটা কি সবাই পাচ্ছে না? বাংলাদেশের মর্যাদাটা কি বিদেশে একটু উন্নত হচ্ছে না? সারা বিশ্ব যে বাংলাদেশের দিকে তাকায়, প্রশংসা করে এটা কি সবার ভালো লাগে না? ভালো লাগে না তাদের, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। যাদের স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহন করার অভ্যাস ছিল তাদের ভালো লাগে না।’
মাহফুজ আনামের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারও লেখায় আমি বাধা দেইনি তো? যার যা খুশি লিখুক না। উনি হঠাৎ বলে ফেললেন, উনি লিখতে পারছেন না। তো আমি তো মনে করবো ওটাই যে উনি ফরমায়েসি লেখা পাচ্ছেন না। উনি যদি চান, ডিজিএফআই উনাকে সাপ্লাই দিক, উনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। তারা সাপ্লাই দেবে। এর বাইরে আমি কী বলবো?