বুধবার ● ১২ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই ধরা হবে: প্রধানমন্ত্রী
ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই ধরা হবে: প্রধানমন্ত্রী
এস ডব্লিউ নিউজ: ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই ধরা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ঘুষ যে দেবে আর যে নেবে উভয়ই অপরাধী; সেটাই ধরে নিতে হবে। শুধু ঘুষ নিলে তাকে ধরা হবে, তা নয়; যে ঘুষ দেবে তাকেও ধরা হবে। কারণ ঘুষ দেওয়াটাও অপরাধ। সেভাবেই বিচার করতে হবে। অপরাধ যারা করছে আর অপরাধে যারা উস্কানিদাতা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা আমরা নিতে চাই।’
বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।
অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনও ধরনের অপরাধের সঙ্গে আমার দলের কেউও যদি সম্পৃক্ত থাকে, আমি কিন্তু তাদেরও ছাড় দিচ্ছি না; ছাড় দেবো না। আর অন্য কেউ যদি অপরাধ করে, তারা তো ছাড় পাবেই না। শাসনটা ঘর থেকেই করতে হবে; সেটাই করে যাচ্ছি। কোনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কেউ যদি এ ধরনের অপরাধ করে, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’
সমাজ থেকে অনিয়ম দূর করতে সব সংসদ সদস্যসহ সমাজের সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরও বলেন, ‘সমাজ থেকে অবিচার-অনিয়ম দূর করতে হবে। এজন্য সমাজের সচেতনতা থাকা একান্ত কর্তব্য। এটা শুধু একটি বাহিনীর বা কারও একজনের ওপর নির্ভরশীর নয়। এজন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি আমরা করবো না; দুর্নীতি করতে দেবো না। সবাই এক হয়ে কাজ করলে সমাজ থেকে অনিয়ম দূর করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘কোনও দেশ যখন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নতি হয়, তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাউট-বাটপার বা বিভিন্ন ধরনের লোক সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের দমন করা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সম্ভব নয়, সামাজিকভাবেও করতে হবে। জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক আর দুর্নীতি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্টজনকে নিয়ে এলাকায় এলাকায় কমিটি করতে হবে; কোনও অন্যায়কে কেউ যেন প্রশ্রয় না দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেকে সবসময় জনগণের সেবক মনে করি। প্রধানমন্ত্রিত্ব হলো আমার মানুষের জন্য কাজ করার একটি সুযোগ। সবসময় চেষ্টা করি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য যতটুকু কল্যাণ করা যায় তা করার; অন্যায়-অবিচারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার।’
এর আগে রওশন আরা মান্নানের মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্নয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতি দমন কমিশনের তাৎক্ষণিক অভিযানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসছে; বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/দফতরে দুর্নীতির মাত্রা ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উৎপাদনশীলতার ধারাবাহিকতায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাহিদার তুলনায় এবার ধানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে একহাজার ৪০ টাকা মণ ধরে একলাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া, বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ৩৬ টাকা কেজি ধরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি ধরে একলাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চাল ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
সংরক্ষিত আসনের গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাজারে বর্তমানে মোটা চালের পাইকারি মূল্য কেজিপ্রতি ২৬-২৮ টাকা। খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ৩০-৩৪ টাকা। মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে কৃষকের ধানের মূল্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে লক্ষ্যে খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতি-২০১৭ প্রণয়ন করেছি।’
হবিগঞ্জ-১ আসনের গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া, বিচার বিভাগের আধুনিকায়নও গতিশীল করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে সারাদেশে বিচারাধীন মামলা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর ও দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হবে।’