ফাইল ফটো ।
এস ডব্লিউ নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে নতুন প্রকল্প গ্রহণকালে প্রাকৃতিক জলাধার সৃষ্টি ও তা সংরক্ষণ এবং অধিকহারে বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে, যে কোন প্রকল্পের সঙ্গে বৃক্ষ রোপণ করতেই হবে এবং জলাধার সৃষ্টি এবং জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।’
তিনি দেশের নাগরিকদের প্রত্যেককে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে সন্তানদেরও এই পরিবেশবাদী কাজ শেখানোর পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৯ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের বিরোধিতা করি না, সবাইকে অনুরোধ করবো আমাদের বিভিন্ন প্র্রজেক্ট নেয়ার সময় আমি দেখেছি যেখানে জলাধার রয়েছে সেটা ভরাট করেই বিল্ডিং তুলতে হবে। এই করতে করতে ঢাকা শহরে যতগুলো খাল, পুকুর ছিল এখন আর তা নেই।
তিনি বলেন, একটি সংস্থার পরামর্শে পূর্বের সরকার তা শুরু করে দিল। আমাদের বক্স কালভার্ট করার কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের খালগুলোকে ওভাবে রেখেই আমরা কিন্তু খালের দুই পার দিয়ে রাস্তা করতে পারি অথবা আমরা সেখানে এলিভেটেড রাস্তাও করে দিতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, খাল যেখানে খালের মতই থাকবে। সেখানে নৌ চলাচলও করতে পারে তাতে আমাদের পরিবেশও রক্ষা পাবে, বায়ু দূষণ কমবে এবং সেখানকার বাতাসটাও আরামদায়ক হবে। কিন্তু যেখানে কোন গাছ থাকে না সেখানে সেই পরিবেশটা থাকে না। সেই বিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
এসময় শেখ হাসিনা আজিমপুর গার্লস স্কুলে পড়ার সময় বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগানোর স্মৃতিচারণও করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এতে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশ ও বনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৯, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৮ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক এবং একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৯ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানস্থল থেকে গাজীপুরে ‘শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার’ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য নতুন ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা, দফতর এবং বিভাগের প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক-রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হলেও এ বছর ঈদুল ফিতরের কারণে দিবসটি পিছিয়ে আজ উদযাপন করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘বায়ুদূষণ।’ বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
সুন্দরবন রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ বনে বেশি বাঘ থাকলে অনেকে ভেতরে গিয়ে বনের ক্ষতি করার সাহস পায় না।
তিনি বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষায় নদীর লবণাক্ততা দূর করতে হবে। লবণাক্ততা দূর হলে হোগলা বন বেড়ে যায়। আর হোগলা বন বাড়লে বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট বাড়ে। সেইসাথে নদীর নাব্যতা বাড়ানোরও কাজ করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান এসময় বলেন, মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হলেও ধ্বংস হয়ে গেছে পাহাড়ি বনাঞ্চল।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার ১৯৭৩ সালে ‘পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ গ্রহণ করার মাধ্যমে এদেশে পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করে। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকান্ডের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থানের বায়ু দূষণের ফলে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪২ লাখ মানুষ মারা যায়। বিশেষ করে রান্নার এবং জ¦ালানির ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণের ফলে আরও প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ মারা যায়।
এ সময় তাঁর সরকারের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার ইট নির্মাণ শিল্পকে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করে। এটি ২০১৮ সালে আবারও সংশোধিত আকারে পাশ করা হয়।
তিনি বলেন, দেশে বিদ্যমান প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ) ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশসম্মত এবং জ¦ালানি-সাশ্রয়ী ইটভাটায় রূপান্তর করা হয়েছে।
যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকাসহ সকল বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাসমূহ সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্র্কৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সারাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলতে সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী সৃজন এবং বনভূমির ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ মোট ১৫টি সংরক্ষিত এলাকার ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত কার্বন জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁঁকি মোকাবেলায় তাঁর সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় লাগসই প্রকল্প গ্রহণের জন্য কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান-সিআইপি ২০১৬-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে সরকারের দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম কৌশল সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সাফল্যও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিবেশ সংরক্ষণ ও ওজন স্তর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সার্টিফিকেট অব এপ্রিসিয়েশন অর্জন এবং বাংলাদেশ সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (সাসেপ)-এর নির্বাহী বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাত মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে জাতিসংঘ তাঁকে লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাসস। |