বুধবার ● ৭ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » বিবিধ » বড় ছেলের সংসারেই জীবনপ্রদীপ নিভে গেল সেই মায়ের বড় ছেলের সংসারেই জীবনপ্রদীপ নিভে গেল বাঁশবাগানে ফেলে যাওয়া সেই মায়ের
বড় ছেলের সংসারেই জীবনপ্রদীপ নিভে গেল সেই মায়ের বড় ছেলের সংসারেই জীবনপ্রদীপ নিভে গেল বাঁশবাগানে ফেলে যাওয়া সেই মায়ের
ফরহাদ খান, নড়াইল
বড় ছেলের সংসারেই জীবনপ্রদীপ নিভে গেল বাঁশবাগানে ফেলে যাওয়া সেই বয়োবৃদ্ধ মায়ের। বার্ধক্যজনিত কারণে গত রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল পাঁচটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বয়োবৃদ্ধ মা হুজলা বেগম (৮৭)। ওইদিন রাত আটটার দিকে কুচিয়াবাড়ি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তবে বয়োবৃদ্ধ মা হুজলা বেগমের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দেরিতে পৌঁছায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, বয়োবৃদ্ধ মা হুজলা বেগমকে ভরণ পোষণ দিতে পারবেন না; এমন অজুহাতে গত বছরের (২০১৮) ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে রাস্তার পাশে বাঁশবাগানে মাকে ফেলে দেন তার মেঝো ছেলে বাবু শেখসহ তার স্ত্রী। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ খবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের (পিপিএম-বার) মাধ্যমে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন। হুজলা বেগমকে উদ্ধার করে ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে আনা হয়। এখানে দীর্ঘ ৩৩দিন চিকিৎসা শেষে গত ৩১ অক্টোবর (২০১৮) রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের উপস্থিতিতে হুজলা বেগমকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে নড়াইলের কুচিয়াবাড়ি গ্রামে বড় ছেলে ডাকু শেখের বাড়িতেই কেটেছে হুজলার জীবন।
হুজলা বেগম হাসপাতাল ছাড়ার সময় তার মেঝো ছেলে বাবু শেখ সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, মাকে বাঁশবাগানে ফেলে দেয়ার ঘটনায় আমরা ভীষণ লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। মাকে কখনোই অবহেলা করব না। তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা ভুল বুঝতে পেরেছেন। মায়ের সাথে এ ধরণের আচরণ তাদের ঠিক হয়নি। মায়ের যথাযথ মর্যাদা ও ভরণ-পোষণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসপাতাল থেকে হুজলাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তার সন্তানেরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হুজলা বেগমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। প্রায় ৩১ বছর আগে স্বামী সামাদ শেখ মারা যাওয়ার পর ছেলে-মেয়েরা আলাদা সংসার শুরু করেন। আর হুজলা বেগম বিভিন্ন সময়ে পাঁচ ছেলে ও মেয়ের সংসারে জীবনযাপন করে আসছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করে মায়ের ভরণ-পোষণ কে নেবেন, এ বিষয়ে সন্তানদের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত কোনো সন্তানই তার মাকে তাদের সংসারে ঠাঁই দিতে চায়নি। এক পর্যায়ে মেঝো ছেলে বাবু শেখসহ তার স্ত্রী রাতের আধারে বৃদ্ধ মাকে (হুজলা) রাস্তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ির পাশে বাঁশবাগানে ফেলে দেয়। পাঁকা রাস্তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নেয়ায় হুজলার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলে যায়। খোলা আকাশের নিচে অসহায় বৃদ্ধাকে রাতভর ফেলে রাখায় পিঁপড়াসহ বিভিন্ন ধরণের পোঁকার কামড়ের শিকার হন তিনি। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পুলিশ বয়োবৃদ্ধ হুজলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তিসহ তার এক ছেলে ও মেয়েকে তাৎক্ষণিক আটক করে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসাসহ ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন। বিভিন্ন পেশার মানুষও বয়োবৃদ্ধ হুজলার পাশে দাঁড়ান। খাট, লেপ, তোষক, ফ্যানসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনে দেন। চিকিৎসা ও খাবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করেন তারা।