বুধবার ● ১৮ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » সাহিত্য » বিজয় দিবসে আমাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
বিজয় দিবসে আমাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
………সরদার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন (বীরমুক্তিযোদ্ধা)
১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ মহান০ বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্মরণিকা ………….. প্রকাশিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের মানুষের জাতীয় জীবনে বিশেষ কতকগুলো গৌরবময় দিন আছে; যাহা অমলিন তাৎপর্যে উদ্ভাসিত। অত্যন্ত মর্যাদার সাথে সেসব দিবস উদযাপিত হয়, বাংলাদেশের বিজয় দিবস এমনি একটি পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ দিবস। বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। গর্ব ও আনন্দের সাথে এ দিনটিকে আমরা প্রতি বছর গভীর শ্রদ্ধার সাথে জাতীয় মর্যাদায় উদযাপন করি।
১৬ ডিসেম্বর এ মহান দিনটি প্রতি বছর আমাদের সামনে সংগ্রামের স্মৃতি নিয়ে হাজির হয়। এ দিনটি যখনই ফিরে আসে, তখনই আমরা সংগ্রামী জীবনের প্রেরণা পাই। খুশীর স্বাদ উপভোগ করি। জীবনকে গৌরবান্বিত করে গড়ে তোলার শপথ এ পবিত্র দিনটি থেকেই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। বিজয় অর্জন বড় কথা নয়, তার সফলকে জনগণের কাছে পৌছে দেওয়াই বড় কথা। “স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।”- এই বাক্যটিকে আমাদের ভূলে গেলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অর্থহীন হয়ে পড়ে।
আমাদের জাতীয় জীবনে ১৬ ডিসেম্বর তথা বিজয় দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বপ্নের স্বাধীনতা। লক্ষ প্রাণের রক্তধনে অর্জিত এই ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অনাগত বাঙালীর হৃদয়পটে অম্লান, অমলিন, অয় হয়ে থাকবে। বাঙালী জাতি এ দিনের মাধ্যমেই স্বাধীন জাতি হিসাবে দীর্ঘদিনের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে সগৌরবে জয়যাত্রা শুরু করেছে। তাই প্রতি বছর যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এই দিনে সকল সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই দিনটি সরকারী ছুটির দিন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণ শোভাযাত্রা, র্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভ”তির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলার মানুষকে শোষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দেশ মাতৃকার প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই অকুতোভয় মহাননেতা অবিরাম গতিতে সংগ্রাম করে যান- তাই তাহাকে বঙ্গবন্ধু উপাধী দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার কন্ঠস্বর আজও মুক্তিযোদ্ধাদের কর্ণে ধ্বনিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলার স্বাধীনতা সূর্য উদিত হয়। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর আমরা লাভ করেছি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এই দিন বিশ্ব মানচিত্রে আর একটি স্বাধীন দেশের নাম সংযোজন হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন হৃদয় বিদারক, শোকাবহ, লোমহর্ষক, তেমনি ত্যাগের মহিমায় ভাস্কর।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ অনুপ্রেরণা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানির সেনাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বোচ্চ আত্ম ত্যাগের মাধ্যমে মাতৃভূমিকে শত্র“মুক্ত করার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আজও রচিত হয় নাই। যুদ্ধ ময়দানে সে দিন যারা হাসতে হাসতে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে গেছে তাদের নাম ঠিকানা আজ
আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আমরা আজ স্বাধীন জাতি হিসাবে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি।
১৯৩২ সালের ২৬শে বৈশাখ পাইকগাছা উপজেলা (বর্তমানে কয়রা) হরিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এক মহাননেতা শহীদ এম,এ গফুর। তার পিতার নাম মরহুম জনাব আলী। তিনি ১৯৪৪ সালে বুধহাটা হাইস্কুল হইতে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং দৌলতপুর বি,এল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। পরবর্তীতে একই কলেজে বি,এ কাসে ভর্তি হন। শহীদ এম,এ গফুর ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ভাষা আন্দোলনে খুলনা জেলা কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব এম,এন,এ ও এম,পি,এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন শহীদ এম,এ গফুর তাদের মধ্যে প্রধান। তিনি সাতীরা ন্যাশনাল ব্যাংক অপারেশন করে এক কোটি সাতাশি লক্ষ টাকা নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের নিকট হস্তান্তর করেন। প্রবাসী সরকার এই টাকা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পিছনে বিভিন্ন কাজে ব্যয় করেন। তাঁকে এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন টাউনশ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার এবং বরিশালের এম,এল,এ নূরুল ইসলাম মঞ্জুর। শহীদ এম,এ গফুর শুধুমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না; তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক। তিনি ১৯৭২ সালে ৬ জুন সাহাপাড়া গ্রামের কাছে কপোতা নদীতে নকশাল বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টর/১৯৭১
১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান জুন/৭১ পর্যন্ত পরে মেজর রফিকুল ইসলাম
২নং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ
৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কে,এম, শফিউল্লাহ্
৪নং সেক্টর কমান্ডার মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত
৫নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী
৬নং সেক্টর কমান্ডার উইং কমান্ডার এম,কে বাশার
৭নং সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক
৮নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী পরে মেজর এম,এ মঞ্জুর
৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম,এ জলিল পরে মেজর জয়নাল আবেদীন
১০নং সেক্টর কমান্ডার শুধুমাত্র নৌবাহিনীর কমন্ডোদের নিয়ে গঠিত।
১১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের
আমার যুদ্ধ ময়দানের সাথী ৯নং সেক্টরে সে দিন যুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গাজী রহমত উল্লাহ্ (দাদু) লেঃ (অবঃ) বি,এন “বীর প্রতীক”, এ্যাডভোকেট স.ম. বাবর আলী, মেজর শামছুল আরেফিন (অবঃ), শেখ কামরুজ্জামান (টুকু), খিজির আলী (বি-বি), ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার (টাউনশ্রীপুর), নেভাল কমান্ডো এম.আলম, অধ্য আবুল কালাম আজাদ, সুবোল বাবু, মোশারফ হোসেন (মশু) বর্তমান জেলা ইউনিট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সাতীরা, গাজী রফিকুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট কেরামত আলী, মৃত হুমায়ূন কবির কাপসানডা, আশাশুনি, মৃত রেজাউল করিম, সরদার নাজিম উদ্দীন প্রমুখ।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বক্তব্য রাখেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ো। তিনি বলেন,
“এ বারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
রক্ত যখন দিয়েছি; রক্ত আরও দেব;
বাংলাকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ”।
২৫শে মার্চে কাল রাত্রিতে ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর ঝাপিয়ে পড়ে বাংলার নিরীহ জনতার উপর। শুরু হলো স্ব-শস্ত্র সংগ্রাম। বহু মা হারালো তাঁর সন্তানকে, স্বামী হারালো তাঁর স্ত্রীকে, স্ত্রী হারালো তাঁর স্বামীকে, এমনিভাবে ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো বাংলার স্বাধীনতা। অর্জিত হলো স্বাধীনতা সার্বভৌম রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
দক্ষিণ খুলনায় সর্বমোট ২৩টা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল যার প্রধান ছিলেন, স.ম. বাবর আলী, আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা জেলা।
আজ আমরা যে বিজয় দিবস উদযাপন করছি তা কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে এ দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় সকলকে একাত্ব হতে হবে। একনিষ্ট হতে হবে উদার ও অসম্প্রদায়িক চেতনার লালনে। বিদেশী সাহায্য নির্ভরতার গ্লানি থেকে আমরা মুক্ত হতে না পারলে জাতীয় অগ্রগতি অর্জন কখনই সম্ভব হবে না। আর জাতীয় অগ্রগতি অর্জিত না হলে আমাদের বিজয়ের যথাযর্থতা নির্নিত হবে না এবং লাখ শহীদের আত্মও শান্তি পাবে না।
৭ জন বীর শ্রেষ্ঠদের নাম ঠিকানা ঃ
ক্রমিক নং নাম ও পদবী জন্ম তারিখ ঠিকানা
০১। সিপাহী মোস্তফা কামাল ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ভোলা জেলার হাজীপুর থানার দৌলতপুর গ্রাম।
০২। ল্যান্সনায়েক মুনসী আব্দুর রউফ মে ১৯৪৩ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রাম।
০৩। ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
২১ ফেব্র“য়ারী ১৯৫৪ নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার বাজনগর গ্রাম।
০৪। ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ ২৬ এপ্রিল ১৯৩৬ নড়াইল জেলার মহেশখালী গ্রাম।
০৫। সিপাহী হামিদুর রহমান ২ ফেব্র“য়ারী ১৯৫৩ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুর গ্রাম।
০৬। স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন ১৯৩৪ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাগচাপটা গ্রাম।
০৭। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রাম।
শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের সে প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয়বস্ত্র। স্বাধীনতা ছাড়া কোন জাতি গৌরবের আসনে উপনিত হতে পারে না। পরাধীনতা আর দাসত্বের শৃংখলে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। কেননা, স্বাধীনতা ব্যতীত
কোন জাতিই বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে আমাদেরকে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে।
যুদ্ধেেত্রর সুবিধার্থে পাইকগাছা এবং আশাশুনি থানার প্রতিটি ক্যাম্পের নাম দিয়ে “ক্যাম্প কমান্ডার” করে এলাকাভিত্তিক ভাগ করে দেওয়া হয়।
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী সরদারের বাড়ী হয়ে “কাজলনগর ক্যাম্পে” প্রবেশ করি। সেখান থেকে জনাব স.ম. বাবর আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে কাজলনগর ক্যাম্প (হেতালবুনিয়া) আশাশুনি থেকে পাইকগাছা উপজেলাধীন হাতিয়ারডাঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করি এবং সেখান থেকে স.ম. বাবর আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধেেত্র অংশগ্রহণ করি। সেদিন বিভিন্ন যুদ্ধেেত্র একই সংগে সে সমস্ত সহযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন তদমধ্যে মরহুম হুমায়ুন কবির, মৃত রেজাউল করিম, এ্যাডভোকেট কেরামত আলী, মোশারফ হোসেন (মশু) পারুলিয়া, ইব্রাহিম কলারোয়া, আব্দুল হাকিম সানা, জিল্লুল করিম, আলাউদ্দীন সানা, আবুল ঢালী, জাহাঙ্গীর আলম, আমজাদ হোসেন, আব্দুস সাত্তার মোড়ল, মৃত নিছার উদ্দীন, আব্দুর রব, মরহুম এস,এম, আব্দুল বারী, বি.এম. আনিছুর রহমান (গজালিয়া), মৃৃত আব্দুর রব, মোকছেদ আলী (গজালিয়া), কামরুল ইসলাম, শরিয়াতুল্য, এবাদুল মোল্যা, রুহুল কুদ্দুস মোল্যা, মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট মোসলেম, মাহবুব, মরহুম মতিয়ার রহমান (প্রতাপনগর), বাক্কার প্রমুখ।
আমার যুদ্ধ ময়দানের সাথী ৯নং সেক্টরে সে দিন যুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গাজী রহমত উল্লাহ্ (দাদু) লেঃ (অবঃ) বি,এন “বীর প্রতীক”, এ্যাডভোকেট স.ম. বাবর আলী, মেজর শামছুল আরেফিন (অবঃ), শেখ কামরুজ্জামান (টুকু), খিজির আলী (বি-বি), ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার (টাউনশ্রীপুর), নেভাল কমান্ডো এম.আলম, অধ্য আবুল কালাম আজাদ, সুবোল বাবু, মোশারফ হোসেন (মশু) বর্তমান জেলা ইউনিট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সাতীরা, গাজী রফিকুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট কেরামত আলী, মৃত হুমায়ূন কবির কাপসানডা, আশাশুনি, মৃত রেজাউল করিম, সরদার নাজিম উদ্দীন প্রমুখ।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বক্তব্য রাখেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ো। তিনি বলেন,
“এ বারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
রক্ত যখন দিয়েছি; রক্ত আরও দেব;
বাংলাকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ”।
২৫শে মার্চে কাল রাত্রিতে ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর ঝাপিয়ে পড়ে বাংলার নিরীহ জনতার উপর। শুরু হলো স্ব-শস্ত্র সংগ্রাম। বহু মা হারালো তাঁর সন্তানকে, স্বামী হারালো তাঁর স্ত্রীকে, স্ত্রী হারালো তাঁর স্বামীকে, এমনিভাবে ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো বাংলার স্বাধীনতা। অর্জিত হলো স্বাধীনতা সার্বভৌম রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
দক্ষিণ খুলনায় সর্বমোট ২৩টা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল যার প্রধান ছিলেন, স.ম. বাবর আলী, আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা জেলা।
আজ আমরা যে বিজয় দিবস উদযাপন করছি তা কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে এ দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় সকলকে একাত্ব হতে হবে। একনিষ্ট হতে হবে উদার ও অসম্প্রদায়িক চেতনার লালনে। বিদেশী সাহায্য নির্ভরতার গ্লানি থেকে আমরা মুক্ত হতে না পারলে জাতীয় অগ্রগতি অর্জন কখনই সম্ভব হবে না। আর জাতীয় অগ্রগতি অর্জিত না হলে আমাদের বিজয়ের যথাযর্থতা নির্নিত হবে না এবং লাখ শহীদের আত্মও শান্তি পাবে না।
৭ জন বীর শ্রেষ্ঠদের নাম ঠিকানা ঃ
ক্রমিক নং নাম ও পদবী জন্ম তারিখ ঠিকানা
০১। সিপাহী মোস্তফা কামাল ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ভোলা জেলার হাজীপুর থানার দৌলতপুর গ্রাম।
০২। ল্যান্সনায়েক মুনসী আব্দুর রউফ মে ১৯৪৩ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রাম।
০৩। ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
২১ ফেব্র“য়ারী ১৯৫৪ নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার বাজনগর গ্রাম।
০৪। ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ ২৬ এপ্রিল ১৯৩৬ নড়াইল জেলার মহেশখালী গ্রাম।
০৫। সিপাহী হামিদুর রহমান ২ ফেব্র“য়ারী ১৯৫৩ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুর গ্রাম।
০৬। স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন ১৯৩৪ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাগচাপটা গ্রাম।
০৭। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রাম।
শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের সে প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয়বস্ত্র। স্বাধীনতা ছাড়া কোন জাতি গৌরবের আসনে উপনিত হতে পারে না। পরাধীনতা আর দাসত্বের শৃংখলে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। কেননা, স্বাধীনতা ব্যতীত
কোন জাতিই বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে আমাদেরকে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে।
যুদ্ধেেত্রর সুবিধার্থে পাইকগাছা এবং আশাশুনি থানার প্রতিটি ক্যাম্পের নাম দিয়ে “ক্যাম্প কমান্ডার” করে এলাকাভিত্তিক ভাগ করে দেওয়া হয়।
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী সরদারের বাড়ী হয়ে “কাজলনগর ক্যাম্পে” প্রবেশ করি। সেখান থেকে জনাব স.ম. বাবর আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে কাজলনগর ক্যাম্প (হেতালবুনিয়া) আশাশুনি থেকে পাইকগাছা উপজেলাধীন হাতিয়ারডাঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করি এবং সেখান থেকে স.ম. বাবর আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধেেত্র অংশগ্রহণ করি। সেদিন বিভিন্ন যুদ্ধেেত্র একই সংগে সে সমস্ত সহযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন তদমধ্যে মরহুম হুমায়ুন কবির, মৃত রেজাউল করিম, এ্যাডভোকেট কেরামত আলী, মোশারফ হোসেন (মশু) পারুলিয়া, ইব্রাহিম কলারোয়া, আব্দুল হাকিম সানা, জিল্লুল করিম, আলাউদ্দীন সানা, আবুল ঢালী, জাহাঙ্গীর আলম, আমজাদ হোসেন, আব্দুস সাত্তার মোড়ল, মৃত নিছার উদ্দীন, আব্দুর রব, মরহুম এস,এম, আব্দুল বারী, বি.এম. আনিছুর রহমান (গজালিয়া), মৃৃত আব্দুর রব, মোকছেদ আলী (গজালিয়া), কামরুল ইসলাম, শরিয়াতুল্য, এবাদুল মোল্যা, রুহুল কুদ্দুস মোল্যা, মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট মোসলেম, মাহবুব, মরহুম মতিয়ার রহমান (প্রতাপনগর), বাক্কার প্রমুখ।
কেয়ারগাতি, গোয়ালডাঙ্গা, আশাশুনি, চাপড়া, কপিলমুনি, বারআড়িয়া, সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ শীপইয়ার্ডে নদী পথে পাক সেনাদের সাথে প্রচন্ড গুলি বিনিময়ের পর খুলনা শহরে প্রবেশ করি। স্বাধীনতার পতাকা হাতে নিয়ে শহর প্রদণি করি।
খুলনা বিজয়ের পর জি,এম, রহমতউল্লাহ (দাদু) “বীরপ্রতীপ” ও মেজর জয়নাল আবেদীন যৌথভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সার্কিট হাউজে উত্তোলন করেন। অন্যদিকে স.ম. বাবর আলী, গাজী রফিকুল ইসলাম, মরহুম রেজাউল করিম, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, সরদার নাজিম উদ্দীন ও অন্যান্যরা “শহীদ হাদিস পার্কে” জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।