সোমবার ● ২১ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » নাম ব্যঙ্গ করায় শিশু রমজান খুন !! গ্রেফতার ৬ চার আসামির বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন”
নাম ব্যঙ্গ করায় শিশু রমজান খুন !! গ্রেফতার ৬ চার আসামির বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন”
ফরহাদ খান, নড়াইল
নাম ব্যঙ্গ করে ডাকায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সিঙ্গা গ্রামে সাত বছরের শিশু রমজানকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তার খালাতো বোন মীম আক্তার (১৩)। মীম লোহাগড়ার চরআড়িয়ারা গুচ্ছ গ্রামের রাকায়েত শেখের মেয়ে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নড়াইল আমলি আদালতে জবানবন্দিতে মীম জানায়, খালাতো ভাই রমজান তার নাম-‘মীম’ না ডেকে ‘ডিম’ বলে ব্যঙ্গ করত। দীর্ঘদিন ধরে ‘ডিম’ বলে ব্যঙ্গ করায় ঘটনার দিন গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে নানাবাড়িতে মীম রমজানকে মারধর করে। একপর্যায়ে রমজান উঠানে পড়ে গেলে মীম তাকে গলা চেপে ধরলে শিশু রমজান শ্বাসরোধে মারা যায়। রমজানের মৃত্যুর পর তার লাশ গুম করতে অন্যরা সহযোগিতা করে। মীম গত সোমবার নানাবাড়ি বেড়াতে বুধবার দুপুরে (১৬ অক্টোবর) এ হত্যাকান্ড ঘটনায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস জানান, এ পর্যন্ত রমজানের বাবা ইলু শেখ, মামা ইউসুফ, মামী পুতুল বেগম, খালা লাকি বেগম, খালু হাবিবুর ও মেয়ে মীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার রাত ১১টার দিকে রমজানের মামী পুতুল বেগমের ঘর থেকে রমজানের ব্যবহৃত স্যান্ডেল ও বই উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে রমজানের বাবা ইলু শেখ, মামা ইউসুফ, খালা লাকি বেগম ও খালু হাবিবুর রহমানের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিলটন কুমার দেবদাস। শনিবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়ালের আদালতে এ রিমান্ড আবেদন করেন। আজ রোববার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
লোহাগড়া থানার ওসি মোকাররম হোসেন জানান, নানা বাড়ি থেকে ১৬ অক্টোবর সকালে স্কুলে যায় রমজান। স্কুল শেষে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন। একপর্যায়ে বিকেলে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে রমজানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রমজানের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। রমজান লোহাগড়ার সিঙ্গা গ্রামের ইলু শেখের ছেলে এবং সিঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
এদিকে রমজানের মা প্রায় চার বছর আগে অসুস্থতার কারণে মারা যান। রমজান সৎ মায়ের সংসারে বড় হচ্ছিল। রমজানের বাবা ও মামা বাড়ির পাশাপাশি হওয়ায় রমজান বেশির ভাগ সময় মামা বাড়ি থেকে পড়ালেখা করত।
এদিকে মীমের মা অর্থাৎ রমজানের খালা লাকি বেগম এ হত্যাকান্ডের প্রথম দিকে অভিযোগ করেন, রমজানের বাবা ও সৎমা রমজানকে হত্যা করে ডোবায় ফেলে দিয়েছে।
অন্যদিকে হত্যাকান্ডের দু’দিন পর রমজানের নানা হবিবর রহমান শেখ বাদী হয়ে গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পরেরদিন (শনিবার) রমজানের খালাতো বোন মীমকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রমজানকে গলা টিপে হত্যার কথা স্বীকার।
অপরাধ বিশ্লেষকসহ সচেতনমহল মনে করেন, নাম ব্যঙ্গ করে ডাকাকে কেন্দ্র করে এক শিশুর (মীম) হাতে আরেক (রমজান) শিশু হত্যার ঘটনাটি মর্মান্তিক। সমাজে এ ধরণের নির্মম ও শিশুসুলভ ঘটনা রোধে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক অনুশাসন প্রয়োজন।