শুক্রবার ● ২০ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » ফিচার » তৃণমূল পর্যায়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কাম্য
তৃণমূল পর্যায়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কাম্য
প্রকাশ ঘোষ বিধান
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজ বা জাতির দর্পণ। আর সাংবাদিকরা দেশ, জতি ও সমাজের বিবেক। দর্পণে কারো চেহারা যেমন অবিকল প্রতিবিম্বিত হয়, তেমনি সংবাদপত্রের পাতায়ও চলমান ঘটনা ও দেশ জাতির সবকিছু সম্যক চিত্র ফুটে ওঠে। সংবাদপত্র সাধারণত দু’ভাবে খবর তুলে ধরে। একটি প্রিন্ট মিডিয়া ও অন্যটি ইলেট্রনিক মিডিয়া। উভয় মিডিয়ায় সাংবাদিকদের সত্যনিষ্ঠা নীতিবোধ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইলেট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকতার সুযোগ কম। জেলা পর্যায় প্রতিনিধি থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ইলেট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি খুবই কম। তবে প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকতার সুযোগ অনেক বেশি। রাজধানী শহর, মহানগর, জেলা শহর বা মফস্বল, উপজেলা বা গ্রামীন পর্যায়ে প্রিন্ট মিডিয়ার জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার সাংবাদিক রয়েছে। শহরের সাংবাদিকতায় যে গুরুত্ব পায় সে তুলনায় গ্রামীন বা উপজেলা পর্যায়ে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। দেশে বৃহৎ জনগোষ্টী গ্রামে বসবাস করে। গ্রামে পাঠকের সংখ্যাও কম নয়। দেশ বিদেশ শহর বন্দরের পাশাপাশি গ্রামের সাংবাদিকতার গুরুত্বও অপরিসীম। প্রিন্ট মিডিয়ায় গ্রামীন সাংবাদিকদের সংবাদপত্রের প্রাণ বলা যায়।
সাংবাদিকদের সাধারণ মানুষ সম্মান ও মান্য করে। কোন কিছু ঘটলে তাদের কাছে সত্য ঘটনাটা জানতে চায়। সাংবাদিকদের মুখ্য ও পবিত্র দায়িত্ব চলমান ঘটনা বা বাস্তবতাকে তুলে ধরা। সে জন্য সাংবাদিকরা সমাজে মহৎ পেশাজীবি হিসাবে পরিচিত। সাংবাদিকরা যদি পুরোপুরি সৎ থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে তাহলে সমাজ থেকে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু সাংবাদিকরা এর মর্যদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই দুর্ণীতির সঙ্গে জড়িত। তারা অনেক সময় সংবাদ পরিবেশনে ব্লাক মেইল করে থাকে। সংবাদকে বিকৃত আকারে পরিবেশন, সত্য সংবাদ গোপন করে নানা রুপে নীতি বর্হিভুত কাজে লিপ্ত হয়েছেন। বিশেষ করে উপজেলা বা গ্রামীন পর্যায়ে সাংবাদিকতা চিত্র আরো ভয়াভয়। যে সকল সাংবাদিক জাতীয় বা আঞ্চলিক পত্রিকায় গ্রামীন বা উপজেলায় সাংবাদিকতা করেন তাদের বেতনভাতা বলতে তেমন কিছুই পায় না। দু’একটি পত্রিকায় যৎসামান্য বেতনভাতা পেলেও তা অনিয়মিত। উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রতিনিধিত্ব করতে হলে তাদেরকে পত্রিকা অফিসে ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত রাখতে হয়। প্রতিমাসে পত্রিকার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বিল তাকে নিয়মিত পরিশোধ করতে হয়। তারা পত্রিকা অফিস থেকে বেতন ভাতা কোন কিছুই পান না। বিজ্ঞাপনের উপরে তাদের কমিশন দেওয়া হয়। গ্রামীন সাংবাদিকদের এজেন্টের দায়িত্ব নেওয়া পত্রিকা বিক্রি না হলেও নিয়মিতভাবে অফিসে বিল পরিশোধ করতে হয়। তা-ছাড়া পত্রিকা অফিসের বিভিন্ন সময়ে ফরমায়েস মেনে চলতে হয়। অনেক পত্রিকা অফিস সৎ, ন্যায় নিষ্ঠাবান কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ না দিয়ে যে ব্যক্তি জামানত ও বেশি পত্রিকা চালাতে পারবে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে করে অনেক সাংবাদিক পত্রিকার বিল পরিশোধ করতে পারে না। এ অবস্থায় এক সময় তারা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। প্রচলতি কথায় শুরু হয় হলুদ সাংবাদিকতা। এর জন্য কিছুটা হলেও পত্রিকায় মালিক সম্পাদকের উপর দায় বর্তায়।
দেশের সকল উপজেলায় নীতিবোধের কারণে একাধিক প্রেসক্লাব, রিপোটার্স ইউনিটি, নিউজ ক্লাব সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে। এ সকল সংগঠন ১৫ থেকে ৩০ এর অধিক সংখ্যক সাংবাদিক রয়েছে। এর মধ্যে আবার সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত না এমন সাংবাদিকের সংখ্যা বেশি। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে খুলনা জেলার পাইকগাছায় রয়েছে একাধিক সাংবাদিক সংগঠন। পাইকগাছা প্রেসক্লাব ও প্রেসক্লাব পাইকগাছা, আবার উপজেলার কপিলমুনিতে রয়েছে কপিলমুনি প্রেসক্লাব ও কপিলমুনি রিপোটার্স ক্লাব। দেখা গেছে এসব প্রেসক্লাবে কিছু সাংবাদিক দীর্ঘ বছর ধরে কোন সংবাদপত্রের সহিত জড়িত নহে। নতুন করে এসব প্রেসক্লাবে যুক্ত হয়েছে কিছু ব্যবসায়ী, যারা ব্যবসায়ে সফল হতে না পারলেও সাংবাদিকতায় এসে হলুদ সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে আগের থেকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে। এ সকল সাংবাদিকের অনেকেই সংবাদ লিখতেই জানে না তারা অন্যের তৈরী করা সংবাদটি ই-মেইল এর মাধ্যমে নিজ নিজ পত্রিকায় প্রেরণ করছে। এ সকল ক্লাবে সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নীতি নৈতিকতার দন্দ্ব।
এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের উপায়ঃ সুস্থ্য সাংবাদিকতা সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ও সৃজনশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাংবাদিকদের দৃষ্টিুভঙ্গির পরিবর্তন জরুরী। উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ সাংবাদিকরা প্রশিক্ষণের কোন সুযোগ পায় না। তাই তাদের দুই থেকে তিনটি উপজেলার সাংবাদিকদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে পত্রিকার মালিক/সম্পাদকদের উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার সময় সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া। প্রতিনিধিদের নূন্যতম আর্থিক বিষয়টি পত্রিকা মালিকের দেখা দরকার। পত্রিকার প্রতিনিধিদের মধ্যে সংবাদের উপর বাৎসরিক পুরস্কার প্রচলন করা। সব কিছুর উর্ধে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল হওয়া সাংবাদিকের রিপোর্ট কারোর ব্যক্তিস্বার্থ ও জাতীর স্বার্থ ক্ষুন্ন না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
সাংবাদিকরা সমাজের বিবেক। এখনও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ ও জুলুম নির্যাতনের শিকার হলে তারা সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হন। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটি ছাপা হোক এমনটি তাদের প্রত্যাশা। সাংবাদিকদের মনমানসিকতা, নৈতিকতা, ও দৃষ্টি ভঙ্গির উপর নীতিনিষ্ট সাংবাদিকতা নির্ভর করে। সাংবাদিকের দায়িত্ব হলো সত্যকে তুলে ও অসত্যের মুখোশ উন্মেচন করা। সাংবাকিদের বেশি সচেতন থেকে সুস্থ সমাজ ও জাতি গঠনে অধিকতর ভূমিকা রাখতে হবে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা মানুষকে সচেতন করে তোলে। সততা ও সাহসিকতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সৎ সাংবাদিকতায় সর্বদা কাম্য।
লেখকঃ সাংবাদিক