শনিবার ● ৪ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » সারাদেশ » করোনার প্রভাবে মধ্যবিত্তের চাপা কান্না
করোনার প্রভাবে মধ্যবিত্তের চাপা কান্না
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে লকগাউন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট ও পন্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। বলতে গেলে প্রায় সব কিছু বন্ধ। কর্মহীন হয়ে ঘরে বন্ধী মানুষ। অর্থনীতির গতিশীল চাকা থেমে গেছে। কাজ নেই, রোজগার নেই, অর্থ নেই। তবে ক্ষুধা থেমে নেই। সে ছুটছে, খাবার চাই, খাবার। কি হবে তার? উচ্চবিত্তদের কোন অসুবিধা না হলেও নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পড়েছে বিপাকে। মধ্যবিত্তরা টেনেটুনে দিন পারছে। তারপর কি উপায় হবে সেই ভাবনা মাথায়।
পাইকগাছাসহ উপকুল এলাকায় মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে হতদরিদ্র মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। ভাইরাস সংক্রমনের ভয়ে এসব লোক বেকার অবস্থায় সময় পার করছে। তবে হতদরিদ্র, শ্রমিক ও নিন্মবিত্ত মানুষেরা কমবেশি সরকারি সহায়তা পাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন নিন্মবিত্তের মানুষের পাশে সহয়তা নিয়ে দাড়িয়েছে। তবে চরম অসুবিধার মধ্যে থাকলেও মাধ্যবিত্তরা কাউকে কিছু বলতে পারছে না। এদের অনেকের ঘরে খাবার নেই, গচ্ছিত টাকা নেই, ইতিমধ্যে ঘরের সঞ্চিত খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এসব মানুষের দিন কাঠছে অর্ধাহারে- অনাহারে। তারা মুখফুটে কিছু বলতে পারছে না। যেমনটা পেটে ক্ষুধা চোখে লজ্জা।
শহরের শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেও গ্রামের শ্রমজীবিরা বিভিন্ন কাজ পাচ্ছে ও তারা কাজও করছে। তাদের তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না, রাস্তায় ভ্যান-ইজিবাইকও চলছে রোজ তাদের কিছুনা কিছু আয় হচ্ছে। প্রতিদিনের খাবারও জোগাড় করতে পারছে। এর পাশাপাশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণ ও অনুদান পাচ্ছে। তবে মধ্যবিত্তরা চরম আর্থিক ও খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন পার কারছে।
পাইকগাছার এক কসমেটিক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসা বন্ধ থাকায় দুই হাজার টাকা দোকান ভাড়া ও আড়াই হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে পারেনি। তাছাড়া সঞ্চিত কোন অর্থ না থাকায় সামনের দিনগুলো কি ভাবে পার করবে সে ভাবনায় দিন পার করছে।
কপিলমুনি বাজারের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী জানান, প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দোকান ভাড়া দিতে হয়। দিন ভালই চলছিলো, তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা বন্ধ থাকায় টানাটানির মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। সামনের দিন গুলো কি ভাবে চলবে ভেবে উঠতে পারছে না। সংসার চালাতে যেন যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টের কথাগুলো কাউকে বলতে পারছে না।
করোনার প্রভাবে সাভাবিক জীবন যাপন থমকে গেছে। তবে সমাজের ধনীব্যক্তি, উচ্চবিত্ত ও চাকুরীজীবিদের উপর এর কোন প্রভাবই পড়ছে না। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে। নিন্মবিত্ত ও হতদরিদ্ররা সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রদত্ত ত্রাণ সহায়তা পাওয়ায় তারা কোন রমক দিন পার করছে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা পড়েছে মহা বিপাকে। কারণে তাদের কাজ না করলে খাবার জোটে না। এমতাবস্থায় মধ্যবিত্তের অনেক মানুষ ঘরভাড়া ও দোকান ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। চলমান পরিস্থিতিতে সবশ্রেণির মানুষের সমস্যা হহলেও সব থেকে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্তরা। মধ্যবিত্তদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্মবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের মানুষদের সরকারের প্রদত্ত সহায়তা দেয়ার দাবী তুলা হয়েছে।
মানুষ মানুষকে দুরে ঠেলে দিতে পারেনি। নিজের জীবন বিপন্ন করেই চিরকাল মানুষ আর্তের পাশে দাড়িয়েছে, সেবা করেছে।