রবিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছায় ত্রাণ দেওয়ার নামে চেয়ারম্যানের চাঁদা তোলার অভিযোগ
পাইকগাছায় ত্রাণ দেওয়ার নামে চেয়ারম্যানের চাঁদা তোলার অভিযোগ
এস ডব্লিউ নিউজ: খুলনার পাইকগাছার উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ত্রাণ দেওয়ার নামে চাঁদা তুলে চাউল মজুদ করায় অভিযোগ উঠেছে। গদাইপুর ইউনিয়নে বরাদ্দ প্রধান মন্ত্রী প্রদত্ত প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ত্রাণ সঠিক ভাবে বন্টন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চাঁদা তুলে ত্রাণ দেওয়ার জন্য চাউল মজুদ রাখায় ক্ষব্ধ ইউনিয়ন বাসিন্দা ও বিশিষ্ট জনেরা।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়ন গদাইপুর। অন্যান্য ইউনিয়নের থেকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ইউনিয়নের বসবাসরত ব্যক্তিদের স্বচ্ছ্যলতার হারও বেশি। দেশে বা ইউনিয়নে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরী হয়নি যে, চাঁদা তুলে ত্রাণ দিতে হবে। ১৯ এপ্রিল চেয়ারম্যানের আহবানে গদাইপুর ইউনিয়নের সুশিল সমাজ নামে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান উপদেষ্টা রয়েছেন চেয়ারম্যান। করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে বেকার হয়ে পড়া ব্যবসায়ী, নিন্ম-মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, হত-দরিদ্র ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রধান মন্ত্রী প্রদত্ত ত্রাণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দ্যোগে ত্রাণ প্রদান করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং কোন প্রকার খাদ্য শস্যের ঘার্টি নেই বলে সরকার বার বার জানাচ্ছেন। এর মধ্যে চাঁদা তুলে গদাইপুর ইউনিয়নে ত্রাণ দেওয়ার কোন পরিবেশ তৈরী হয়নি। তবে কেন চাঁদা তুলে চাউল মজুদ রাখা হচ্ছে।
সুশিল সমাজ নামের ওই কমিটি এক সদস্য জানান, সবকিছু চেয়ারম্যানের ইচ্ছায় হচ্ছে। আমরা আছি উপলক্ষ্য মাত্র। করোনা ভাইরাসে প্রভাবে দেশে যদি মহামারি ও দূর্ভিক্ষ দেখাদেয় তখন এই মজুদ রাখা চাউল ইউনিয়নের বন্টন করা হবে। কমিটির আহবায়ক অশোক কুমার ঘোষ বলেন আমি আহবায়ক ছিলাম না প্রভাষক মোঃ শামীম আজাদ লিটু আহবায়ক ছিল। পরবর্তীতে আমাকে আহবায়ক করা হয়েছে। কমিটির সকল কাজ চেয়ারম্যানের ইচ্ছায় হচ্ছে আমি শুধু উপলক্ষ্য মাত্র। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরকারি স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নির্ধারন করে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী, চাউল ব্যবসায়ী ও ঔষধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ানের এক বাসিন্দা বলেন, রাতের ৮-১০টি মটর সাইকেল নিয়ে ১৬-১৮জন লোক আমার বাড়ীতে আসলে আমি ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ি। পরে চেয়ারম্যান আসছে জেনে আসস্থ হই। করোনার প্রভাবে আমার ব্যবসা বন্ধ থাকায় আমার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর চেয়ারম্যান সহ এতো লোকজন আশায় আমার সম্মান বাঁচাতে আমি ত্রাণের জন্য ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি।
গদাইপুর ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির মধ্যে হিতামপুর, বোয়ালিয়া উল্লেখ্য যোগ্য। সেখানে চেয়ারম্যান কোন সরকারি ত্রাণ দেননি। হিতামপুর বোয়ালিয়া মালোপাড়ার সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, করোনার কারনে নদীতে মাছ ধরতে পারছি না। আয় রোজগার বলে কোন কিছু নেই। চেয়ারম্যান এ পর্যান্ত একটি টাকার ত্রাণ দেননি। আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ-খবর নেয়নি। তার ওপর চাঁদা তুলতে এসেছিলেন।
গদাইপুর ইউনিয়ানের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল সালাম বাচ্ছু বলেন, এলাকার অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন তাদের কাজ কাম নেই, ত্রাণ পাচ্ছে না বরং চাঁদা দিতে হচ্ছে। অনেকটা জোর করে তাতে কাজ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। মাঝে ৫ কেজির জায়গায় ৪ কেজি চাল দেওয়ার জন্য ডিজেএফআই ও আর্মি তাকে থ্রেট করে গেছে। সুশিল সমাজ বলে কেউ নেই, আছে তার কিছু অনুসারি।
এ বিষয়ে গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান জানান, গদাইপুর ইউনিয়নের প্রধান মন্ত্রী প্রদত্ত ত্রাণ সহায়তা প্রথমে দেড় টন তারপর দুই টন ও সর্বশেষ তিন টন ত্রাণ পেয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সাড়ে তিন টন ত্রাণ ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করায় বিভিন্ন কথা উঠেছে। বর্তমানে ইউনিয়নে তিন টন ত্রাণ ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে সুস্থ ভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। সুশিল সমাজের উদ্দ্যোগে ত্রাণ দেওয়ার জন্য চাউল মজুদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৫টন চাউল মজুদ করা হয়েছে। আরও ৫টন মজুর করার কাজ চলছে। সর্বমোট ২০টন চাউল মজুদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। চাউল কেন মজুদ রাখা হচ্ছে বা কবে নাগাদ এ চাউল বিতরণ করা হবে এ বিষয়ে তিনি জানান, সরকার সামনে কতটুকু কি করবেন সেটা ভেবে চাউল মজুদ করা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী ইউনিয়নে চাউল বিতরণ করা হবে। সুশীল সমাজের উদ্দ্যোগে সেচ্ছায় সকলে টাকা দিচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, এই মুহূর্তে এভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করা মানে তো সরকারকে হেয় পতিপন্ন করা। সেই কারণে আমরা একটি উদ্যোগ নিয়ে পরে তা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।