শনিবার ● ২ মে ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » পাইকগাছায় ত্রাণ দেওয়ার নামে চেয়ারম্যানের চাঁদা তোলার নিউজ প্রকাশিত হওয়ায় সুশিল সমাজ নামে সংগঠনের কয়েকজনের গাত্রদাহ ।
পাইকগাছায় ত্রাণ দেওয়ার নামে চেয়ারম্যানের চাঁদা তোলার নিউজ প্রকাশিত হওয়ায় সুশিল সমাজ নামে সংগঠনের কয়েকজনের গাত্রদাহ ।
ফাইল ছবি
এস ডব্লিউ নিউজ: খুলনার পাইকগাছার উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ত্রাণ দেওয়ার নামে চাঁদা তুলে চাউল মজুদ করার নিউজ প্রকাশিত হওয়ায় সুশিল সমাজ নামে গঠিত সংগঠনের কয়েকজন লোকের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। চাঁদা তুলে চাউল বিতরণ না করে মজুদ করে রাখলে সরকারের সুষ্ঠ ত্রান ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতা ও সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এমন কথা ইউনিয়ানে গুনজন শুরু হয়। চাঁদা তুলে চাউল মজুদ করার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সুশিল সমাজ নামে সংগঠনের কয়েক ব্যক্তি দৌড়ঝাপ সহ বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।
গদাইপুর ইউনিয়নে বরাদ্দ প্রধান মন্ত্রী প্রদত্ত প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ত্রাণ সঠিক ভাবে বন্টন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চাঁদা তুলে ত্রাণ দেওয়ার জন্য চাউল মজুদ রাখায় ইউনিয়ন বাসিন্দা ও বিশিষ্ট জনেরা ক্ষব্ধ হয়েছেন।
করোনা দুর্যোগে দেশে মহামারী হবে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে তখন সরকার ত্রান দিতে পারবেনা সে সময় মজুদ করা চাউল বিতরণ করা হবে বলে সুশিল সমাজ নামে গঠিত সংগঠন ইউনিয়ন থেকে চাঁদা তুলে চাউল মজুদ করছে বলে জানানো হয়েছে যাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে তাদেরকেও একই কথা জানানো হয়।করোনা দুর্যোগে সরকার সুষ্ঠভাবে ত্রান সরবারহ অব্যাহত রেখেছে।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি কর্মহিন গরীব মানুষের মাঝে ত্রান বিতরণ করছে। কারো ঘরে খাবার নাই জনালে সরকারের স্থানিয় প্রশাসন তার বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌছিয়ে দিচ্ছে। সরকার বারবার বলছে খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই ।কোন লোক না খেয়ে মারা যাবেনা।তাহলে সরকারের সফল ত্রান ব্যবস্থাপনাকে হেয়প্রতিপন্ন ও সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য চাদা তুলে চাউল মজুদ করা হচ্ছে বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়ন গদাইপুর। অন্যান্য ইউনিয়নের থেকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ইউনিয়নের বসবাসরত ব্যক্তিদের স্বচ্ছ্যলতার হারও বেশি। দেশে বা ইউনিয়নে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরী হয়নি যে, চাঁদা তুলে ত্রাণ দিতে হবে। ১৯ এপ্রিল চেয়ারম্যানের আহবানে গদাইপুর ইউনিয়নের সুশিল সমাজ নামে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান উপদেষ্টা রয়েছেন চেয়ারম্যান।
সুশিল সমাজ নামে গঠিত কমিটির উপদেষ্ঠা প্রজিৎ কুমার রায় জানান করোনা দুর্যোগে দেশে মহামারী হবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তখন সরকার ত্রান দিতে পারবেনা সে সময় মজুদ করা চাউল বিতরণ করা হবে মিটিং এ জানানো হয়েছে।কমিটির আহবায়ক অশোক কুমার ঘোষ বলেন আমি আহবায়ক ছিলাম না প্রভাষক মোঃ শামীম আজাদ লিটু আহবায়ক ছিল। পরবর্তীতে আমাকে আহবায়ক করা হয়েছে। কমিটির সকল কাজ চেয়ারম্যানের ইচ্ছায় হচ্ছে আমি শুধু উপলক্ষ্য মাত্র। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরকারি স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নির্ধারন করে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী, চাউল ব্যবসায়ী ও ঔষধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
তবে কমিটির সদস্য সচিব প্রভাষক মোঃ শামীম আজাদ লিটু ভিন্ন মত পোষন করে বলেন মহাৎ উদ্দেশে চাউল সংগ্রহ করা হচ্ছে।তাড়াতাড়ি চাউল বিতরণ করা হবে।তালিকা তৈরী করতে একটু সময় লাগছে।কারো কাছ থেকে জোর টাকা নেওয়া হচ্ছে না সবাই সেচ্ছায় টাকা দিচ্ছে।মানুষের আবেগ অন্য রকম না দেখলে বুঝানো যাবেনা ।দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে বক্তব্য না নেওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তারা কি বলতে কি বলে ফেলেছে তার ঠিক নেই।আমার কাছে জানলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতোনা।প্রশ্ন উঠেছে তাহলে আহবায়ক, উপদেষ্ঠা ও চেয়ারম্যান কি দায়িত্বশীল ব্যাক্তি নয়? নতুন বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী উত্তম ঘোষের দোকানে রাতে চাঁদা নিতে গেলে উত্তমের বাবা নিতাই ঘোষ বলেন, আমি তো ত্রান পাওয়ার যোগ্য আমারও চাঁদা দিতে হবে।কালেকশনে যাওয়া এক ব্যাক্তি ধমক দিয়ে বলেন,সবাই দিচ্ছে তুমি দিবানা কেন।তখন ৫০ টাকা দিতে চাইলে তারা ঠাকা না নিয়ে কাল চেয়ারম্যান আসবে তার কাছে টাকা দিও বলে চলে যায়।এ বিষয় লিটু বলেন এমন কোন ঘটেনি সব কালেকশনে আমি থাকি ।সামনা সামনি প্রমান দিলে তিনি বলেন তা হলে সে দিন আমি কালেকশনে ছিলাম না।
গদাইপুর ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির মধ্যে হিতামপুর, বোয়ালিয়া উল্লেখ্য যোগ্য। সেখানে চেয়ারম্যান কোন সরকারি ত্রাণ দেননি। হিতামপুর বোয়ালিয়া মালোপাড়ার সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, করোনার কারনে নদীতে মাছ ধরতে পারছি না। আয় রোজগার বলে কোন কিছু নেই। চেয়ারম্যান এ পর্যান্ত একটি টাকার ত্রাণ দেননি। আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ-খবর নেয়নি। তার ওপর চাঁদা তুলতে এসেছিলেন।
গদাইপুর ইউনিয়ানের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল সালাম বাচ্ছু তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, এলাকার অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন তাদের কাজ কাম নেই, ত্রাণ পাচ্ছে না বরং চাঁদা দিতে হচ্ছে। অনেকটা জোর করে তাতে কাজ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। মাঝে ৫ কেজির জায়গায় ৪ কেজি চাল দেওয়ার জন্য ডিজেএফআই ও আর্মি তাকে থ্রেট করে গেছে। সুশিল সমাজ বলে কেউ নেই, আছে তার কিছু অনুসারি।
এ বিষয়ে গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান জানান, গদাইপুর ইউনিয়নের প্রধান মন্ত্রী প্রদত্ত ত্রাণ সহায়তা প্রথমে দেড় টন তারপর দুই টন ও সর্বশেষ তিন টন ত্রাণ পেয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সাড়ে তিন টন ত্রাণ ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করায় বিভিন্ন কথা উঠেছে। বর্তমানে ইউনিয়নে তিন টন ত্রাণ ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে সুস্থ ভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। সুশিল সমাজের উদ্দ্যোগে ত্রাণ দেওয়ার জন্য চাউল মজুদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৫টন চাউল মজুদ করা হয়েছে। আরও ৫টন মজুর করার কাজ চলছে। সর্বমোট ২০টন চাউল মজুদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। চাউল কেন মজুদ রাখা হচ্ছে বা কবে নাগাদ এ চাউল বিতরণ করা হবে এ বিষয়ে তিনি জানান, সরকার সামনে কতটুকু কি করবেন সেটা ভেবে চাউল মজুদ করা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী ইউনিয়নে চাউল বিতরণ করা হবে। সুশীল সমাজের উদ্দ্যোগে সেচ্ছায় সকলে টাকা দিচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, এই মুহূর্তে এভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করা মানে তো সরকারকে হেয় পতিপন্ন করা। সেই কারণে আমরা একটি উদ্যোগ নিয়ে পরে তা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
।চাউল মজুদ নয় বন্ঠন করা হোক। আর সরকারের উপর আস্থা রাখা হোক। করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় ত্রান সহায়াতার পাশাপাশি জনসচেতনতা গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেখানে জনগন কে বলা হচ্ছে সরকার সামনে ত্রান দিতে পারবেনা । দেশে মহামারী ও দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে এ মজুদ করা চাউল বিতরণ করা হবে।এ ধরনের বক্তব্যে জনগনকে বিভ্রান্ত ও সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে বলে সমাজের বিশিষ্টজনদের মধ্যে দাবি উঠেছে। করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সংগঠন একসাথে কাজ করলে খুব সহজে এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করা খুব সহজ হবে।তাই সরকারের মহান উদ্যোগ কে সফল করার জন্য সকলকে এক সাথে কাজ করার জন্যে দাবি জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।