শুক্রবার ● ১২ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » উপকূল » বাঁধের ফাঁদে উপকূলের জনজীবন
বাঁধের ফাঁদে উপকূলের জনজীবন
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ উপকূল অঞ্চলের মানুষের জীবনজীবিকা নির্বাহ করে বেড়ীবাঁধের উপরে। দূর্যোগে এই বাঁধ তাদের ভরসার একমাত্র স্থল। বাঁধ ভালো থাকলে তারা দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তাদের ঘরবাড়ী, ফসলের ক্ষেত, রাস্তাসহ সবকিছু পানিতে ভেসে যায়। মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে। উপকূলের জনজীবন ভাঙ্গা বাঁধের ফাঁদে বিপন্ন হচ্ছে।
গত ২০ মে বুধবার দিবাগত রাতে পশ্চিম উপকূলের খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে তছনচ হয়ে যায়। পাইকগাছার দেলুটি, সোলাদানা, লস্কর ইউনিয়ন, কয়রার উত্তর বেদকাশী, দিক্ষণ দেবকাশী, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়ন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় লন্ডভন্ড হয়েগেছে জনপথ। চারিদিকে পানি আর পানি। বিভিন্ন এলাকার গ্রাম, জনপথ, ফসলের ক্ষেত, চিংড়ির ঘের, ঘরবাড়ী বিধ্বত্ব হয়েছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বাঁধ মেরামত ও রিং বাঁধ নির্মান করে লোনা পানির ছোবল থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। তবুও মুক্তি মিলছে না। জোয়ার ভাটার তোড়ে বারে বারে বাঁধ ভেঙ্গে যায়।
দক্ষিনাঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভাঙ্গছে তার অন্যতম কারণ হিসাবে বাঁধ ফুটো করে, বাঁধ কেটে ও পাইপ বসিয়ে নদীর লবন পানি তুলে চিংড়ি চাষ করাকে দায়ী করা হয়। তবে আম্ফানের বহু আগে বাঁধগুলির নাজুক পরিস্থিতি ছিল। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাঁধ কোথাও অর্ধেক, কোথাও সিঁকি, কোথাও বা মটর সাইকেল তো দুরের কথা পায়ে হেটে যাওয়া কঠিন। স্বাভাবিক জোয়ারে এসব স্থান গুলো জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আম্ফানে সব শেষ করে দিল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ধাক্কায় বাঁধ রক্ষা পায়নি। বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অসহায় মানুষ বাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘর তুলে মাথা গোজার ঠায় করেছে। মানুষগুলোর পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এই বাঁধই তাদের আশ্রয়স্থল।
আম্ফানে ভেষে গেছে উপকূল। মানুষ আমার নিঃস্ব হয়ে পড়লো। সিডর, আইলা, ফনি, বুলবুলের পর কত আশ্বাস এলেও তারপর সব যেন জোড়াতালি। আশ্বাসের বাণী শুনেন শুনে কতকাল তো পার হয়ে গেল। আমার জীবনও শেষ হয়ে এলো। কথাগুলো বলেছিলেন কয়রার গোবরার বাসিন্দা অতিশয়পর বৃদ্ধ ইমান আলী গাজী (৯৫)। গোবরার ঘাটাখালী কপোতক্ষ নদের যে স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, সেখাই আবুল বাসার শেখের বাড়ী ছিল। জীবন বাঁচানো তাগিদে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছিল। ভোরে এসে দেখে সব নিশ্চন্ন হয়ে গেছে। বাড়ীর ৪টি ঘর ভেসে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে কপোতক্ষ ও শিবসা নদীর বাঁধ ভাঙ্গা ছাড়াও কয়রার ১২১ কিলোমিটার ও পাইকগাছার ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। উপকূলবাসীর দাবী টেকসই ও মজবুধ বাঁধ নির্মান করা হোক। যাতে উপকূলের মানুষ ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগ থেকে নিরাপদে থাকতে পারে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নৌকা, ট্রলার কখনো কখনো পায়ে হেটে দূর্গত মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বাঁধ মেরামতের কাজে প্রতিনিয়ত তদারকি করছেন। এ অঞ্চলের টেকসই বাঁধ নির্মানের ব্যাপারে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, উপকূলীয় এ অঞ্চলের টেকসই বাঁধ নির্মানে ইতিমধ্যে একনেকে সাড়ে তিনশত কোটি টাকা পাশ হয়েছে। আগামী অক্টোবর নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। যা ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বেড়ীবাঁধের পাশে বসবাসরত উপকূলবাসী বাঁধ আকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। তবে বারে বারে ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ বিপন্ন হচ্ছে। বিপন্ন বেড়ীবাঁধের ফাঁদে জীবন বয়ে চলে উপকূলবাসী।