বৃহস্পতিবার ● ৯ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » শিক্ষা » বিপিএড-২০১৯: দৃষ্টি আকর্ষণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
বিপিএড-২০১৯: দৃষ্টি আকর্ষণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১ জুলাই ২০২০ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তর সীমিত আকারে খোলা হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপিএড ২০১৯ পরীক্ষার ফল প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। এতে যাদের চাকুরির বয়স প্রায় শেষ বা কোনমতে আবেদন করতে পারবে তারা চাকুরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ করোনাকালেও চাকুরির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের যারা বিপিএড ফল প্রার্থী তাদের পরীক্ষা ৫ মাস আগে শেষ হলেও এখনো ফলাফল দেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা শারীরিক শিক্ষার বিভিন্ন পদে নিয়োগে আবেদন করার সুযোগ হারাচ্ছে।
দেশে করোনাকালেও প্রায় সকল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত প্রতিদিন বাড়লেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি সব অফিস ও প্রতিষ্ঠান খোলা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে তার জন্য অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। মাদক, দুদক, এনএসআই ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এক এক করে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করছে। সম্প্রতি পিএসসি বহুল প্রত্যাশিত ৩৮তম বিসিএস এর চুড়ান্ত ফলাফল হয়েছে। কিন্তু যেখানে অন্যান্য বছর ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২ মাসেই রেজাল্ট হয় সেখানে ৫ মাস আগের ২০১৯ পরীক্ষার ফলাফল এখনও হচ্ছে না। আর এটা সত্যি আমাদের মতো উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের নিয়মিত হতাশ করছে।
অনার্স পাশ করে অনেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ ও বেসরকারি কলেজে প্রফেশনাল কোর্স হিসেবে এক বছর মেয়াদি বিপিএড সম্পন্ন করে থাকে। নির্দিষ্ট চাকুরি যেমন, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা শিক্ষক, ক্রীড়া অফিসার, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর ইত্যাদি পদে যোগদানের জন্য বেকার তরুণ যুবকরা এ কোর্স সম্পন্ন করে। যারা এ কোর্স করে তাদের বয়স প্রায় ৩০ এর কাছাকাছি। চাকুরির শেষ ভরসা হিসেবে তারা বিপিএডকে কাজে লাগায়। কিন্তু রেজাল্ট পেতে দেরি হওয়ায় বয়স ৩০ পেরিয়ে অনেকে হয়তো চাকুরিতে আবেদন করার সুযোগ হারাবে।
যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তুলনামূলক পিছিয়ে তারা সহজেই একটা চাকুরি পাওয়ার আশায় অনেক কষ্টে এক বছর মেয়াদি প্রফেশনাল ডিগ্রী ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) কোর্স করে থাকে। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ এবং বিভিন্ন জেলায় বেসরকারি কলেজে এ কোর্স চালু আছে। প্রত্যেক বছর প্রায় এক বছরেই ভর্তি, পরীক্ষা এবং ফলাফল হয়ে যায়। তবে এ বছর নতুন সিলেবাস হওয়ায় প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা হতে দেরি হলেও দ্বিতীয় সেমিস্টার ঠিক সময়ে শেষ হয়। কিন্তু এখনও রেজাল্ট হচ্ছে না।
যারা ২০১৯ ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) কোর্স করেছে তাদের অনেকের বয়স এ বছরেই শেষ হয়ে যাবে। ফলে তারা সরকারি চাকুরির জন্য আবেদন করতে পারবে না। বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজ, পিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। কিন্তু বিপিএড রেজাল্ট না হওয়ায় তারা আবেদন করতে পারবে না। ফলে বহুল কাক্সিক্ষত ক্রীড়াক্ষেত্রে তারা চাকুরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তাই বেকারদের বাঁচাতে বিপিএড রেজাল্ট বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরী।
গত বছরের ২০১৮ সালের বিপিএড পরীক্ষায় অনেকেই ১ বা ২ বিষয়ে খারাপ করায় পুনরায় ২০১৯ সালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তারা এমনিতেই ১ বছর পিছিয়ে গেছে। আবার রেজাল্ট প্রকাশে দেরি হওয়ায় তারা আরো পিছিয়ে যাচ্ছে। রেজাল্ট না হওয়ায় তারাও নতুন করে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক পদে আবেদন করতে পারছে না। সম্প্রতি পিএসসি কর্তৃক পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এছাড়াও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষায় প্রফেশনাল ডিগ্রীধারীধের নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছে। কিন্তু বিপিএড পরীক্ষার ফল না পাওয়ায় বর্তমানে আবেদনের সুযোগ বঞ্চিত বেকার যুবকরা বেকারত্ব ঘুঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এখনো অনেক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক পদ খালি। আবার অনেকেই বলছেন প্রত্যেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এ বছরের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি হবে বলে শোনা যাচ্ছে। যদি বিজ্ঞপ্তি হয়ে যায় আর ২০১৯ সালের বিপিএড পরীক্ষার্থীরা রেজাল্টের জন্য আবেদন করতে না পারে তবে এর চেয়ে হতভাগা আর কেউ থাকবে না। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত বিপিএড ২০১৯ পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের জন্য সবিনয় আবেদন করছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সীমিত আকারে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করেছে বলে ফল দিতে তেমন বাধা থাকবে না বলে আমরা মনে করি। আর পরীক্ষা যেহেতু এ বছরের শুরুতেই শেষ হয়েছে তাই পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন অনেক আগেই শেষ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু কর্তৃপক্ষের একটু সদিচ্ছা থাকলে বিপিএড ফল দেয়া দ্রুত সম্ভব হবে। আমরা বিপিএড ফল প্রার্থীরা মনে করি যেহেতু আমাদের সরকারি চাকুরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই কর্তৃপক্ষের একটু সহানুভূতির সাথে খেয়াল রাখা জরুরী। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির সকল নিয়ম মেনে যেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার সামর্থের মধ্যে বিপিএড ২০১৯ ফল দ্রুত প্রকাশ করে আমরা সে প্রত্যাশায় করছি।
লেখক:
শাহাদাত আনসারী, রাবিয়া বসরী, নাজরীন আক্তার, অন্তরা মল্লিক
আসিফ মাহমুদ, সোহেল জাহাঙ্গীর, নোমান আব্দুল্লাহ, মোস্তফা জামান
ফল প্রার্থী, বিপিএড ২০১৯ ব্যাচ,
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।