মঙ্গলবার ● ২১ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » ব্যবসা-বাণিজ্য » কেশবপুরে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প বিলুপ্তির পথে
কেশবপুরে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প বিলুপ্তির পথে
এম আব্দুল করিম, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ
যশোরের কেশবপুর উপজেলার ঋষি পল্লীতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় বাঁশ বেত দিয়ে কৃষি ও গৃহস্থলীর জিসিস তৈরির কাজ আর তা চলে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। জীবন জীবকিা নির্বাহের জন্য পরিবারের সবাই মিলে এভাবে সারা বছরই কাজের ব্যস্ততায় ডুবে থাকে তারা।
উপজেলার সাগরডাড়ি, বালিয়াডাঙ্গা, মঙ্গলকোট, শ্রীরামপুর, বাশবাড়িয়া, কোমলপুর, ফতেহপুর, কলাগাছিসহ অনেক গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের ৪০/৫০ টি পরিবার বাঁশ বেতের তৈরী জিনিস পত্র বাজারজাত করে জিবিকা নির্বাহ করে থাকে। বাশ ও বেত দিয়ে কেউ বুনছেন চাটাই, ডোল, ঝুড়ি, ডালা, কুলাসহ বিভিন্ন কৃষি ও গৃহস্থালী জিনিসপত্র। আবার কেউ ব্যস্ত তৈরিকৃত গৃহস্থালী জিনিসপত্রে রঙ দিয়ে নকশা ও বাজারজাত করতে। কারিগররা বলেন, তাদের অধিকাংশ পরিবারেরই মাঠে কোন চাষযোগ্য জমি নেই। বসত ভিটের দু’এক কাঠা জমিই তাদের সম্বল। তারপরও পূর্ব পুরুষদের বাঁশ বেতের কুটির শিল্পের পেশা আকড়িয়ে প্রতিদিনের কম বেশি আয়-রোজগারের মাধ্যমে টিকে আছেন। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি বেশ কোন ভাবে চলছে তাদের সংসার। সংসারে আয় রোজগারের এটাই তাদের একমাত্র পেশা। পূর্ব পুরুষদের হতে ধারাবাহিক ভাবে পাওয়া এ পেশা আকড়ে ধরে বেঁচে আছেন অনেকেই। এখন তাদের মধ্যে দু’একজন অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়লেও বেশিরভাগ মহিলারা সবাই গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি সারা বছর ধরে বাঁশ বেতের জিনিসপত্র তৈরি করে থাকেন। আর এগুলো পাইকারেরা বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পুরুষদের কেউ কেউ আবার তৈরিকৃত কৃষি ও গৃহস্থালীর জিনিসপত্র ভ্যানসহ বহনযোগ্য যানবাহনে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। পরিবারের ছোট ছেলে মেয়েরা শিশুকাল হতেই লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি অবসর সময়ে পরিবারের বড়দের কাজে সহযোগিতা করতে করতে তারাও এ সমস্ত কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে। ফলে তারা সাংসারিক জীবনে গিয়ে চাকরি বা ব্যবসা না করতে পারলেও কেউ বেকার হয়ে বসে থাকে না। বরং পরিবারের পেশাটা ধরে বেঁচে থাকতে পারে। কারিগর নিমাই দাস বলেন, আমার বাবা দাদারা বাঁশ বেতের কাজ করতেন। তিনি আরো বলেন, বাঁশ বেতের দাম বাড়লেও কোন প্রভাব পড়েনি। কেননা উৎপাদন ব্যয় যেহারে বেড়েছে সে হারে তারা উৎপাদিত মালামালে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে থাকেন। তবে বর্তমান বাজারে এ্যালমুনিয়াম ও প্লাষ্টিক সামগ্রীর দাপটে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ছে। আর ধীরে ধীরে বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি চারু শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।