বৃহস্পতিবার ● ৮ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলাদেশে হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ
বাংলাদেশে হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ
এস ডব্লিউ নিউজ:
সরকার কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত সমুদ্রের কোল ঘেঁষে কমবেশি ১৭০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি যুক্ত হবে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিদ্যমান ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে। এটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ।
ইতোমধ্যে এই সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইটি ইন্টারন্যাশনাল। চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও নকশা পেতে এক বছর সময় লাগবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সড়ক নির্মাণ হলে এটি হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ। এর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এই সড়ক দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উন্মোচন হবে নতুন দিগন্তের। শুধু তাই নয়, বদলে যাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্রও।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, এই মেরিন ড্রাইভকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। মন্ত্রীর সেই বক্তব্যের বেশ কয়েক বছর পর নতুন করে টেকনাফ-মিরসরাই মেরিন ড্রাইভের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশনায় ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশা তৈরির কাজ চলবে প্রায় এক বছর। আগামী বছরের অক্টোবরে এর প্রতিবেদন ও প্রাথমিক নকশা পাওয়া যাবে। তারপরই চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
সরকার ইতোমধ্যে কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের নির্মাণ শেষ করেছে। বছর পাঁচেক আগে এ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এত দিনে বাকি প্রায় ১৭০ কিলোমিটার অর্থাৎ টেকনাফ থেকে মিরসরাই পর্যন্ত অংশে নানা জটিলতার কারণে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করা যায়নি।
চলতি বছরে কোভিড-১৯ এর কারণে এ প্রক্রিয়া আরেক দফা পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে পেরেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
সওজ সূত্র জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার এসএমইটি এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটা প্রাথমিক নকশা দেবে। এটির জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশা পাওয়ার পরই জানা যাবে সড়কটি কত কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া হচ্ছে মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কমবেশি ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এই মেরিন ড্রাইভ। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সরকার ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ বা সমুদ্র ঘেঁষা সড়ক। সবমিলিয়ে এই সড়কের দৈর্ঘ্য হবে মোট ২৫০ কিলোমিটার। এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে। অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে।
এ সড়ক ঘিরেই মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠবে ছোট-বড় অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট। স্থানে স্থানে হবে ছোট ছোট সি-বিচ। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। ঘুরতে আসবেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। তাতেই অর্থনীতির চাকা ঘুরবে দিনে-রাতে।
এই মেরিন ড্রাইভ ঘিরে শুধু পর্যটনশিল্প থেকেই বছরে আয় করা সম্ভব হবে হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কাঁচা পণ্যের ব্যবসা। বিশেষ করে ব্লু ইকোনমি বা সামুদ্রিক অর্থনীতিও উপকৃত হবে। সামুদ্রিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে সেটি কাজে লাগানো যেতে পারে এই মেরিন ড্রাইভ ব্যবহার করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্র থেকে যে পরিমাণ মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হয় সেটি দ্রুততম সময়ে দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে শুধু মেরিন ড্রাইভের কারণে। এখানে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে এই সমুদ্র ঘেঁষা সড়কটি।
এই মেরিন ড্রাইভের কারণেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ আশপাশের এলাকাগুলোর চেহারাও পাল্টে যাবে। এর পাশাপাশি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের পূর্বাঞ্চলে একটি নতুন অর্থনৈতিক বেল্ট তৈরি হবে। সুরক্ষিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকা।
সওজ’র কর্মকর্তারা বলছেন, এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল এলাকায়। এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ। বদলে যাবে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। ওই অঞ্চলে কমবে বেকারত্ব। নানা রকম কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে। এই মেরিন ড্রাইভ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম বন্দর, বে-টার্মিনাল এবং সীতাকুণ্ডু উপকূলে প্রস্তাবিত মিনি বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ মোকাবিলায়ও এই মেরিন ড্রাইভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় মেরিন ড্রাইভের সুফল পাওয়া যাবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের ৮০ কিলোমিটার আগেই নির্মাণ হয়েছে। আমরা এটিকে একেবারে সাগর ঘেঁষে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। সমীক্ষা শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য যথেষ্ট সময় লাগবে। এটি নির্মাণ হলে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে বলে জানান সেতুমন্ত্রী।