সোমবার ● ১৯ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » মোংলা থানা পুলিশের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন
মোংলা থানা পুলিশের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন
মোঃএরশাদ হোসেন রনি, মোংলা
মোংলায় ৭ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সোমবার দুপুরে ধর্ষক আব্দুল মান্নান সরদারের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে বাগেরহাট আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর জেলা ও দায়রা জজ মো: নূরে আলম। রায়কালে আদালতে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ধর্ষক মান্নান ও বাদী মিলন শেখ এবং মামলার স্বাক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্যাতিত শিশুর পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী। গত ৩ অক্টোবর মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের নারকেলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিলন শেখের (৩৫) ভাগ্নীকে চকলেট-বিস্কুটের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেশী মান্নান তার ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা জানাজানির হওয়ার সাথে সাথে ওই দিনই পুলিশ ধর্ষককে আটক করে এবং মামলা নিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে। মামলা দায়েরের ১৬ দিনের মাথায় এবং মাত্র ৬ কার্যদিবসের মধ্যেই মামলার রায় দেয়া হয়েছে। এ রায়ের মধ্যদিয়ে দেশে প্রথম এক নজীর স্থাপন হয়েছে। অবশ্য এজন্য স্থানীয়রা থানা পুলিশকেও সাধুবাদ জানিয়েছে। কারণ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য পুলিশ তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত মামলা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
মামলার রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিশুটির মামী জরিনা বেগম (২৭) ও নানী জরিনা বেগম (৬০)সহ স্থানীয় বাসিন্দারও। তারা বলেন, রায়ে আমরা খুব খুশি। আমরা ধন্যবাদ জানাই পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিচার প্রক্রিয়া থাকা সকলকে। কারণ এত দ্রুত সময়ে এর বিচার হবে তা আমরা ভাবতেও পারিনি। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই একারণেই যে ধর্ষণ বিরোধী সরকারের নতুন আইনের জন্যেও। এই যে রায় হয়েছে এতে করে এ এলাকাসহ সারাদেশে ধর্ষণ ও নিযার্তন করে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ধর্ষণ খবর পাওয়া মাত্র দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ইকবাল বাহার চৌধুরীকে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তিনি তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলার পক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই দ্রুত আদালত রায়টি দিতে পেরেছেন। ধর্ষণ নিযার্তনসহ সকল ধরণের মামলা পক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের জন্য বাগেরহাট জেলা পুলিশ তৎপর রয়েছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলার পক্রিয়া সম্পন্ন ও আদালতের এ রায়ের ঘটনাটি সারাদেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের মাকড়ঢোন আশ্রয়ন প্রকল্পে মামা-মামীর কাছে থাকা ৭ বছর বয়সী শিশুকে চকলেট-বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী আবদুল মান্নান সরদার (৫৩)। ওই রাতেই শিশুটির মামা মামলা করলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি ১১ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ পাঠায়। ওই দিন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে পরের দিন অভিযোগ গঠন করে। এরপর ১৩ অক্টোবর বাদী পক্ষের ১৬ জন এবং ১৪ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট সাক্ষী, চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সদস্য ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১৫ অক্টোবর আসামি সাফাই সাক্ষ্য দেয়। আর গত রবিবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে সোমবার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। সোমবারের এ রায়ে ধর্ষককে যাবজ্জীবন কারাদন্ডেরে পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।