বুধবার ● ৪ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » উপকূল » ৫ নভেম্বর থেকে শুটকি মৌসুম শুরু
৫ নভেম্বর থেকে শুটকি মৌসুম শুরু
শীতে করোনা প্রকোপ বাড়ার আশংকা মাথায় রেখেই স্বাস্থ্য বিধি মানা শর্তে জেলেদের সাগর ও দুবলার চরে যাওয়ার অনুমিত দিয়েছে বনবিভাগ
মোঃএরশাদ হোসেন রনি,মোংলা
আসছে শীতে করোনা প্রকোপ বাড়ার আশংকা মাথায় রেখেই স্বাস্থ্য বিধি মানা শর্তে জেলেদের সাগর ও দুবলার চরে যাওয়ার অনুমিত দিয়েছে বনবিভাগ। তাই ৫ নভেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হতে যাচ্ছে মাছ আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুম। এ মৌসুমকে ঘিরে এখন উপকূলীয় এলাকার জেলেদের মধ্যে চলছে জাল ও নৌকা মেরামতসহ চরে অস্থায়ী বসত গড়ার নানা সরঞ্জামাদি সংগ্রহের প্রস্তুতি। প্রস্তুতিও এখন প্রায় শেষ পযার্য়ে। এখন শুধু যাওয়ার পালা। পাস পারমিট নিয়ে ৫ নভেম্বর সকাল থেকে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে জেলেরা। তবে শীতকালীন করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে চরে অস্থায়ী হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছেন জেলেদের।
প্রতি বছর শীত মৌসুমের আগ মুহুর্তেই শুরু হয় দুবলার চরে শুটকি মৌসুম। এবার চলতি বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে এ মৌসুম। মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে জড়ো হয় দুবলার চরে। মাছ ধরার জন্য নৌকা ও জাল নিয়ে তারা যান সমুদ্রে। আর চরে থাকাসহ মাছ শুকানো ও রাখার জন্য অস্থায়ী বসত গড়ে তোলেন জেলেরা। সুন্দরবনের সকল ধরণের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করায় জেলেরা সাথে করে নিয়ে যান ঘর তোলার বাঁশ, কাঠসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। চরে ৫ মাস ধরে তারা মাছ আহরণ ও শুটকিকরণ কাজ করে থাকেন তারা। এখন উপকূল জুড়ে জেলেদের মাঝে চলছে সাগর ও সুন্দরবনে যাওয়ার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। হাতে খুব বেশি সময় নেই তাই যে যার ধর্ম অনুযায়ী নৌকায় মিলাদ ও পূজার আনুষ্ঠানিকতাও সেরে নিচ্ছেন। ৪ নভেম্বর এ সকল জেলেরা জড়ো হবেন মোংলার পশুর নদীর চিলা খালে। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস পারমিট নিয়ে ৫ নভেম্বর দল বেধে ছেড়ে যাবেন দুবলার উদ্দেশ্যে।
তবে জেলেরা বলছেন, বিগত বছরগুলোর মত এবার আর দুস্যতার ভয় নেই তাদের মাঝে। তবে জেলেদের অভিযোগ রয়েছে, পথে ঘাটে দস্যুদের চেয়েও বেশি অত্যাচার নিযার্তন করে থাকেন বনবিভাগের কতিপয় সদস্যরা। তাই এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।
মোংলার চাঁদপাই গ্রামের জনৈক এক জেলে অভিযোগ করে বলেন, আমি এবার ৩০ জন জেলে নিয়ে সাগরে যাচ্ছি। সেখানে সমস্যা অনেক। যেমন সেখানে কোন হাসপাতাল নেই, আমাদের কেউ অসুস্থ্য হলে চরম দুভোর্গে পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ্য হওয়ার পর মোংলায় আনতে আনতে পথেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই সেখানে একটি হাসপাতাল করা হোক।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমরা নদী পথে যাওয়ার সময় ফরেস্টার ঝামেলা করে বেশি। এরা ডাকাতের চেয়েও বেশি খারাপ। ডাকাত ২০ নিয়ে ছাড়ে ও ওরা (ফরেস্টার) ৪০/৫০ হাজার না হলে ছাড়েনা। এখন সমস্যা ফরেস্টারই বেশি করছে।
আসছে শীত মৌসুমের পুরাটাই জেলেদের থাকতে হবে সাগর ও সুন্দরবনে তাই করোনার প্রকোপ বাড়লে তাদের পড়তে হবে চরম বিপদে। তাই চরে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জেলেদের।
জেলেদের এ যৌক্তিক দাবীর বিষয়ে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দুবলা চরের ২৫ থেকে ৩০ হাজার জেলে মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির কাজ করতে জড়ো হবে। সেখানে যেহেতু অনেক লোকের সমাগম ঘটবে তাই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সেখানে ভাসমান স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন জরুরী বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, তা না হলে ওখানে যে কোন একজন কোনভাবে সংক্রমিত হলে তা ছড়িয়ে যাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকতার্ মো: বেলায়েত হোসেন বলেন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। তাই স্বাস্থ্য বিধি মানাসহ বেশ কিছু শর্তে জেলেদেরকে সাগরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর করোনা বিধি নিষেধের বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে দেখা ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের নেতৃবৃন্দদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সেখানে কোন হাসপাতাল স্থাপন করা হবে কিনা তার জবাব মেলেনি বনবিভাগের পক্ষ থেকে।
গত মৌসুমে দুবলার চর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর এবার টার্গেট ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করবে রাজস্ব আদায় কম-বেশির পরিমাণ।
জেলেদের উত্থাপিত অভিযোগ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সুষ্ঠুভাবেই এ মৌসুম পার করতে পারবেন জেলেরা সেই সাথে রাজস্ব আদায়ের মধ্যদিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বনবিভাগও।