শনিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » ৫২ বছর পরে অবিকৃত লাশ উত্তোলন ফের জানাজা, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় এলাকায় চরম ক্ষোভ
৫২ বছর পরে অবিকৃত লাশ উত্তোলন ফের জানাজা, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় এলাকায় চরম ক্ষোভ
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
পাইকগাছায় ৫২ বছর পূর্বে দাফনকৃত ব্যক্তির অবিকৃত লাশ উত্তোলন, ফের জানাযা শেষে দাফন শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয় ,স্থানীয় ও অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে, মুক্তিযোদ্ধা ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে এবং তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাইকগাছা উপজেলার হাবিবনগর মাদ্রাসার সুপার ছিলেন বজলুর রহমান, তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলায়। হাবিবনগর এম,কে,ডি,এস,বি ফাজেল মাদ্রাসার ০১/০১/১৯৬৮ তারিখ তিনি মাদ্রাসায় যোগদান করেন।বর্তমান হাবিবনগর এম,কে,ডি,এস,বি ফাজেল মাদ্রাসা। তিনি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা নন। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুম উজির আলী সরদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদ্রাসা পার্শ্ববর্তী দরগাহমহল গ্রামের সতীশ কাপালি’র বাড়ীতে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে এলাকার লুন্ঠিত মালামালের হিসাবের দায়িত্ব ছিলেন শান্তি কমিটির এই নেতা বজলুর রহমান।
ঘটনার দিন রাতে হাবিবনগর,শিলেমানপুর,আগড়ঘাটা অঞ্চলে রাতে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন চালিয়ে উক্ত বজলুর রহমান, আগড়ঘাটার দলিলউদ্দীন দলু,বকস্ সরদার সহ মোট ০৫ জন শান্তি কমিটির নেতাকে হত্যা করে। বজলুর রহমানকে প্রথমে বল্লম দিয়ে আক্রমণ করে পরে জবাই করে হত্যা করে।পরদিন সকালে স্থানীয়রা তাকে মাদ্রাসার সামনে কবরস্থ করেন।
সম্প্রতি মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ কাজের জন্য কতৃপক্ষ ঐ কবর স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।সেমত ১৩ নভেম্বর শুক্রবার সকালে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ইমান আলী এর তত্ত্বাবধানে কবর খুঁড়া হয়। স্থানীয় জামাল উদ্দীন গাজী কবর খুড়ে কংকাল ওঠান। সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এলাকার জব্বার সরদার ,শফিক সরদার,হাফিজুর সরদারসহ এলাকার অনেকেই। মাওলানা ইমান আলী জানান, কবর খুঁড়ে লাশের কংকাল পাওয়া যায়।হাড়গোড় অন্যত্র স্থাপনের জন্য তিনি নিজে একটা কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করে পার্শ্ববর্তী স্থানে সেগুলো আবার কবরস্থ করেন ।সেখানে কোন জানাজা নামাজের আয়োজন করা হয়নি।প্রকাশিত সংবাদে অবিকৃত লাশ উত্তোলন আর জানাজা পড়ানো বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এসব মিথ্যা কথা,কেন যে এসব নিউজ করে সাংবাদিকেরা। তাছাড়া প্রকাশিত সংবাদে বজলুর রহমানকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়েছে, যেটা সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামিলীগের সাবেক সদস্য সচিব রশিদুজ্জামান মোড়ল বলেন, আমি একটি মৃত মানুষের কংকাল নিয়ে আলোচনা হউক এটা আমি চাই না,তবে যারা এধরণের বিকৃত তথ্যের সংবাদ পরিবেশন করছে সেটা নিন্দনীয়। তিনি আরো বলেন,ঐ রাতে তো শুধু বজলুর রহমানকে নয় মোট পাঁচ জন বিশিষ্ট রাজাকারকে হত্যা করে মুক্তি ফৌজরা।
প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু মুক্তি যুদ্ধকালীন ঘটনাকে সমার্থন করেন। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন ১৯৬৮ সালে মৃত ব্যাক্তির অবিকৃত দেহ বলে তারা ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা হয়েছে, দুদিন পরে এই কবরকে পীর -বুজুর্গ লোকের বলে প্রচার চালানো হতে পারে হয়তো।
তিনি আরো বলেন,এই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে এই এলকোর মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টা দেখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল জব্বার সরদার বলেন,আমার পিতা মরহুম উজির আলী সরদার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । তিনি ১৯৭৪ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করে আসছি।১৯৭১ সালে মুক্তি বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তির লাশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হচ্ছে যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিকৃত লাশ বোঝানো হয়েছে যা সঠিক নয়। তার হাড়-হাড্ডি নতুন কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে দাফন করা হয়েছে। উনি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না ছিলেন সুপার। উনার বাড়ি ছিল বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ । এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দীকী জানান, হাবিব নগর মাদ্রাসার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছি এবং ওনাদের কথা শুনেছি, মাদ্রাসা কতৃপক্ষ ও এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
প্রকাশিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদটি এলাকায় চরম বিভ্্রান্তির সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা উচিৎ। তা না হলে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বে এবং এমন ভুয়া খবরে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে। যাহাতে সমাজে কোন বিশৃংখলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এলাকার সচেতন মহল সঠিক তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের দাবি জানান।