মঙ্গলবার ● ৫ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » পাইকগাছায় স্কোয়াশ আবাদে সফলতা পেয়েছে কৃষক লিটন
পাইকগাছায় স্কোয়াশ আবাদে সফলতা পেয়েছে কৃষক লিটন
প্রকাশ ঘোষ বিধানঃ পাইকগাছায় স্কোয়াশ আবাদে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক ওয়াহিদুজ্জামান লিটন। আর্থিক ভাবেও তিনি হয়েছেন লাভোবান। স্কোয়াশ বিদেশী জনপ্রিয় একটি সবিজ। এটা মুলত শীত কালিন সবজি। দেখতে বাঙ্গি বা কাকুড়ের মত লম্ব, রং সবুজ, মিষ্টি কুমড়ার মত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নতুন ভাবে এটির চাষ শুরু হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে ওয়াহিদুজ্জামান লিটন বড়। তিন বছর আগে ঢাকায় গামের্ন্টেস এর চাকুরীতে যোগদান করে। তবে করোনার কারণে কাজ হারিয়ে মার্চেই ফিরে আসেন গ্রামে। ইউটিউবে স্কোয়াশ চাষের ভিডিও দেখে স্কোয়াশ চাষের জন্য আগ্রহী হন। ফরিদপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মামুনুর রহমানের রাজের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে পাইকগাছা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগীতায় স্কোয়াশ’র আবাদ শুরু করেন। বিরাশিতে ১ বিঘা জমি লীজ নিয়ে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় স্কোয়াশ’র উন্নত জাতের রেলি এফ-১ বীজ সংগ্রহ করে আবাদ শুরু করেন। ১ বিঘা জমিতে ৩০০ গ্রাম স্কোয়াশের বীজ বপন করতে হয়েছে। ২২টি বেডে ১৬’শ এর উপরে চারা রোপন করা হয়েছে। বেডগুলি মালচিং পলিদিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। স্কোয়াশ চাষে মালচিং পলি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। চারা টিকে গেলে চারা গোড়া মালচিং এ ঢাকা থাকায় তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং আদ্রতা ধরে রাখে। ঘাস জন্মাতে পারে না। স্কোয়াশ এর জীবন কাল ৮০ থেকে ৯০ দিন। বেলে-দোআঁশ মাটিতে আবাদ ভালো হয়। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মধ্যে এর বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৫০ দিন পর থেকে ফল ধরতে শুরু করে। পরাগায়নের পর থেকে ১৫-১৬ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি স্কোয়াশ’র ওজন দেড় থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছে ১০/১২টি ফল ধরে। সবুজ ও লম্বাকৃতির প্রতিটি স্কোয়াশ-এ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ই, কে সহ কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন রয়েছে। মিষ্টি কুমড়ার মত সুস্বাদু, সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে হয়। এর পাতা ও কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এর উচ্চতা এক থেকে দেড় ফুট হয়। ফুল দেখতে কুমড়ার ফলের মত হলুদ। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষে জমির হারীসহ মোট খরচ পড়ে ৩৪/৩৫ হাজার টাকা। হেক্টর প্রতি ৩৫/৪০ টন উৎপাদন হয়। স্কোয়াশ চাষ করে লিটন ২ লক্ষ টাকার উপরে লাভ হতে পারে বলে আশা করছেন।
বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেশণা ইন্সিটিউট কর্তৃক অবমুক্ত হয়েছে। এটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পাইকগাছা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জিকেবিএসপি’র আওতায় জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার প্রদর্শণী খামার হিসেবে উপজেলার বিরাশি গ্রামে গড়ে উঠেছে স্কোয়াশ’র আকর্ষণীয় খামারটি। সপ্তাহ দু’য়েক আগে থেকে বাজরে উঠতে শুরু করেছে একেবারেই নতুন প্রজাতির অপরিচিত সুস্বাদু সবজি স্কোয়াশ। খুলনা জেলার একমাত্র কৃষক হিসেবে স্কোয়াশ চাষী লিটন মাত্র ১ বিঘা জমির উৎপাদন থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন ওয়াহিদুজ্জামান লিটন।
প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকে তার উৎপাদিত স্কোয়াশ বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রথমত স্থানীয় আগড়ঘাটা, গদাইপুর, পাইকগাছা ও সর্বশেষ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারী মোকাম আঠারো মাইলে স্কোয়াশ বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রথমত অপরিচিত হওয়ায় স্কোয়াশ’র চাহিদা কম থাকলেও গত মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে স্কোয়াশ’র চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। ক্রেতারা জানান, তারা মোকাম থেকে পাইকারী খরিদ করে দোকানে খুচরা বিক্রি করেন। একবার যারা স্কোয়াশ খেয়েছেন তারা আবার খুঁজতে থাকায় রাতারাতি এর চাহিদা বেড়েছে বাজারে। বাজারে প্রতি কেজি স্কোয়াশ পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরীক্ষামূলকভাবে পাইকগাছার বিরাশি এলাকায় ১ বিঘা জমিতে স্কোয়াশ’র আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং এবং ফিডব্যাক নেয়া হচ্ছে। সবজিটি ইতি মধ্যে বাজারে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। আগামীতে স্কোয়াশ’র আবাদ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।