শুক্রবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীতে মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহাসিক বনবিবির মেলা
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীতে মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহাসিক বনবিবির মেলা
এস ডব্লিউ নিউজ: কয়রায় মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কয়রার ঐতিহাসিক বনবিবি’র তথা ‘ মুদো মাঝি’র মেলা।
১৫ জানুয়ারি, শুক্রবার খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা গ্রামে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মহা ধুমধামের সাথে প্রায় শতবর্ষের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে কপোতাক্ষ নদের তীরে উদযাপিত হলো ঐতিহাসিক বনবিবির মেলা। যা ‘মুদো মাঝি’র মেলা নামে পরিচিত।
কত সাল থেকে যে এ মেলার শুরু হয়েছিল তা নির্দষ্ট করে কেউ বলতে পারে না। তবে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে প্রতি বাংলা বছরের ‘১লা মাঘে’ এ মেলা উদযাপিত হয়। সেই সময় চরামুখা গ্রামে মহাদেব মাঝি ও সহাদেব মাঝি নামে দুই ভাই বাস করতেন। তারা কাঠ কাটতে জঙ্গলে যাইতেন। স্বপ্ন প্রাপ্ত হয়ে মহাদেব মাঝি ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে স্বল্প পরিসরে বনবিবি পূজা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঐ এলাকার হাজোতীরা ঐ পূজায় এসে পূজা-অর্চনা করতেন ও হাজোত দিতেন বিধায় পূজাটি মেলায় রূপ নেয়। কালের আবর্তনে মেলাটি এলাকার ও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়। পূর্বে মেলাটি ৭ দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত উদযাপিত হতো। কিন্তু এখন মেলাটি ১দিন বা ২ দিন ধরে উদযাপিত হয়।
কালক্রমে প্রয়াত মহাদেব মাঝির নামেই একসময় মেলার নাম হয় মুদো মাঝি’র মেলা। আজো মেলাটি মুদো মাঝি’র মেলা নামে পরিচিত। মেলাটি ভোর বেলা শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। মেলায় ঘুরে ঘুরে দেখা যায় এ উপলক্ষ্যে এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা-অঞ্চলের ব্যাবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমবেত হতে দেখা যায়। মেলায় কসমেটিক সামগ্রী, পোশাক, খেলনা, বই, বাঁশের তৈরী শিল্প সামগ্রী, গৃহাস্থালীর বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী, শাক-সব্জী, বিভিন্ন ধরনের ফল, ভাজা, চটপটি, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির দোকান, বিশেষ করে মাটির তৈরী হাঁড়ি -পাতিল ও বিভিন্ন ধরনের খেলনা মেলার শোভা বর্ধন করে।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীর ভীড়ে বিভিন্ন ধরনের খোশ গল্পে জমে উঠেছে। ছোট ছোট ছেলে -মেয়ের ছোটাছুটি, বাঁশির সুর, মাইকের শব্দ, চোরকি ঘোরানোর ও নাগোরদোলার মন মাতানো কোঁকানি এবং জন কোলাহলে মন মেতে ওঠে। বিনোদন হিসেবে মেলায় আয়োজন ছিলো বিভিন্ন ধরনের খেলা-ধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও অতিথি শিল্পীদের নাচে-গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার পরিবেশ। এবছর স্থানীয় চরামুখা – মেদেরচর নাইন ব্রাদার্স ক্লাব আয়োজন করেছিল ৮দলীয় মিনি ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট।
মহাদেব মাঝি মারা যাওয়ার পর তারই ভ্রাতুষ্পুত্র ভোলানাথ মাঝি অদ্যাবধি সুনামের সাথে মেলাটি পরিচালনা করে আসছেন। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মোজাফফর আহমেদ বলেন, আয়োজক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও কয়রা থানা প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।