বুধবার ● ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » সারাদেশ » গ্রাম আছে যাওয়ার রাস্তা নেইঃ পাইকগাছার ওড়াবুনিয়া গ্রামের ৫০ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি
গ্রাম আছে যাওয়ার রাস্তা নেইঃ পাইকগাছার ওড়াবুনিয়া গ্রামের ৫০ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি
পাইকগাছা প্রতিনিধিঃ গ্রাম আছে মানুষ বসবাস করে। কিন্তু যাতয়াতের রাস্তা নেই। গ্রামটিতে প্রায় পাঁচশতাধিক মানুষ বসবাস করে। গ্রামের চারিদিকে পানিতে থৈ থৈ করছে। আর বর্ষা মৌসুমে দেখলে মনে হবে কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। গ্রামের চারপাশে বিশাল জলরাশি থাকলেও খাওয়ার উপযোগী নেই কোন সুপেয় জলের ব্যবস্থা। স্বাধীনতারপর থেকে যত নেতা, চেয়ারম্যান, মেম্বার এলো আর গেল, তাদের কাছ থেকে গ্রামবাসী শুধু আশ্বাস পেল। কিন্তু রাস্তা পায়নি। গ্রামবাসীরদাবী একটি রাস্তা। যা এখনও পায়নি পাইকগাছার ওড়াবুনিয়া গ্রামবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গজালিয়া চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমে দিকে বিলের মধ্য দিয়ে কয়েক কিলোমিটার লম্বা গ্রামটি ওড়াবুনিয়া। যাতায়াতের জন্য মাটির একটি রাস্তা আছে, তবে কোথাও কোথাও তার কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না। কোথাও বাঁশের সাকো, বাঁশের তৈরী পূল, কোথাও অত্যন্ত সরু ও নিচু পথ। বর্ষা মৌসুমে এলেই পুরাটাই জলমগ্ন থাকে। গ্রামে একটা প্রাইমারী স্কুল আছে। আর হাইস্কুলে বা কলেজে যেতে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে রাস্তার অভাবে ঠিকমত যেতে পারেনা। রাস্তা না থাকায় গ্রামের ভিতর চলেনা কোন প্রকার যানবাহন। হাঁটাই গ্রামবাসীর একমাত্র পথ। যাহা তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।
গ্রামের বাসিন্দা তপন কুমার মন্ডল বলেন, আমি একজন শিক্ষক, বর্ষা মৌসুমে আমাকে স্কুলে যেতে হলে দু’টি ড্রেজ নিয়ে বের হতে হয়। কয়েক কিঃ মিঃ রাস্তা কাদা পানিতে ঠেলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। দশম শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছবি মন্ডল জানান, শিক্ষার্থীরা অনেকেরই দু’টি ড্রেজ নিয়ে স্কুলে যেতে হয়, যাতায়াতের রাস্তার অভাবে কাদা পানিতে ভিজে ড্রেজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভালো রাস্তায় উঠার পর ড্রেজ বদলিয়ে গন্তব্যে রওনা দিতে হয়। বর্ষা মৌসুমে তাদের এক প্রকার স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকে। সারাদেশেসহ পাইকগাছার অন্য ইউনিয়নে উন্নয়ন হলেও আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছাড়া আর কোন অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন হয়নি আজো। শিবানী মন্ডল নামে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলা জানান, রাস্তা না থাকায় খাওয়ার পানি আনতে অনেক অসুবিধা হয়। সেসহ এলাকার মহিলারা প্রতিদিন প্রায় ৫ কিঃমিঃ পথ হেঁটে যাতায়াত করে সুপেয় খাওয়ার জল আনতে হয়। সব থেকে বেশি সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। রাস্তা না থাকায় তাদের পানির মধ্যে সাঁতরে খাওয়ার জল আনতে হয়।
ইউপি মেম্বর নজরুল ইসলাম হিরা বলেন, রাস্তার দু’পাশে মৎস ঘের ও সরকারী খাল থাকায় রাস্তার কাজ করা সম্বব হয় না। বাঁশের সাঁকো মেরামত করা হলেও বর্ষা মৌসুমে পানির চাপের কারণে ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার দু’পাশে পাইলিং করে মাটি দিয়ে উচু করতে পারলে হয়তো রাস্তাটি টিকবে। ইউনিয়ন পরিষদের এতোবড় বাজেট না থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাবিখা প্রকল্পে ৩ লাখ টাকার বাজেট করেও কাজ করতে না পেরে প্রকল্পটি গড়ের আবাদ গুচ্ছ গ্রামে নেয়া হয়েছে।
চাঁদখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আক্কাস ঢালী বলেন, ওড়াবুনিয়া রাস্তার পরিমাপ করা হয়েছে। আগামিতে রাস্তা সহ কালভার্টের কাজ করা হবে।
পাইকগাছা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ওড়াবুনিয়া পার্শে খালের উপর একটা ব্রিজের জন্য পরিমাপ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে।
ওড়াবুনিয়া গ্রামের রাস্তটি তৈরী করার জন্য গ্রামবাসী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের জোর দাবী জানিয়েছেন।