রবিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » পরিবেশ » অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কপোতাক্ষ নদ
অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কপোতাক্ষ নদ
এস ডব্লিউ নিউজ: যশােরের চৌগাছার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ এখন একটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ভরাট পড়া নদের পাড় এ অঞ্চলের ভূমিদস্যুরা দখল করে নেয়ার কারণে এই নদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। জরুরিভাবে এ নদটি খনন না করলে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না বলে নদ-নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
কপোতাক্ষ নদটি যুগযুগ ধরে এ এলাকার মানুষের আয়-রোজগারের অন্যতম মাধ্যম ছিল, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীব বৈচিত্রের এক মিলন মেলা ছিল- এমনটিই জানালেন, নদের পাড়ের অসংখ্য বাসিন্দা।
সুদুর চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা থেকে কপােতাক্ষের উৎপত্তি , চৌগাছার বুক চিরে মিশেছে দক্ষিণ বঙ্গােপসাগরে। মহাকবি মাইকেল মধুসূধন দত্তের কপােতাক্ষ নদের আজ চরম বেহালদশা। নদের চৌগাছা এলাকার বহু অংশ ইতােমধ্য শুকিয়ে গা-চরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
পড়ন্ত বিকেলে দুরন্ত ছেলেরা নদের বুকে ক্রিকেট খেলাসহ নানা খেলাধুলায় মেতে উঠেছে। শুকিয়ে যাওয়া নদের বুক থেকে তুলে আনছেন হরেক রকমের শাক সবজি। বছরের বার মাসই যে নদে থৈথৈ করেছে স্বছ পানি, মাঝি পাল তােলা নৌকা নিয়ে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে ছুটে গেছেন আপন ঠিকানায়, দিনের বেশির ভাগ সময় নদে পানির সাথে মিতালী করে জেলেরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, সারাক্ষণই পাখ-পাখালির কলরবে নদ থাকত মুখারিত, সেই নদ এখন যেন শুধুই স্মৃৃতি মনে করছেন অনেকেই।
নদপাড়ের বাসিদা নদে লাল সরকার, নিতায় সরকার, অজিত কুমার, ফজলুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বাপ দাদাদের মুখে শুনেছি কপােতাক্ষ নদ সে সময় বড়বড় জাহাজ চলেছে। বৃটিশ বণিকেরা সুদুর লন্ডন থেকে নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী নিয়ে বঙ্গােপসাগর হয়ে কপােতাক্ষ আসত। এরপর চৌগাছা এরিয়াতে তারা প্রবেশ করে বিশাল বিশাল জাহাজগুলা উপজেলার পাশাপােল ইউনিয়নের বর্তমান খলশী বাজারের পশ্চিমে নোঙ্গর করতেন। জাহাজে করে নিয়ে আসা শিশুদের খেলনাসহ নানা ধরনের পণ্য সেখানে খালাশ করা হতাে, যে কারণে ওই সময় খালাশী বলে সকলেই চিনতেন। বৃটিশদের শাসনামলে শেষে নামটি পরবর্তীতে খলশি নামে পরিচিতি পায়।
নদে বিভিন্ন সময়ে মিলত হরেক রকমের দেশি প্রজাতীর মাছ। সেই মাছ শিকার করে মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ করতেন। নদকে ঘিরে দুই পাড়ে গড়ে উঠে অসংখ্য জেলে পল্লী। দিন কিংবা রাত সারাক্ষণই এই জলে পল্লীর জেলেরা নদের পানিতে নৌকায় ভেসে থেকে মাছ আহারণ করতেন। শুধু তাই না কপােতাক্ষের অঢল পানিতে দেখা যেত হরেক রকমের পাখ-পাখালি। তাদের কিচিমিচির কলরবে মুখারিত থাকত সারক্ষণই, এ সবই এখন স্মৃতি।
যুগযুগ ধরে পলি জমার কারণে নদ বছরের বেশিরভাগ সময় শুকিয়ে থাকে। এই সুযােগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নদ দখলে মেতে উঠেন। তারা নদের বুকে তৈরি করেছেন বসতবাড়ি, পুকুর, ভেড়িসহ নানা কিছু। অনেকে নদকে দখল করে নানা ঘরবাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে মাছ চাষ, বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করছেন। এসব দখলদারদের উচ্ছেদ করে খননের উদ্যোগ নেয়া হলে নদটির অস্তিত্ব টিকে থাকবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।