বৃহস্পতিবার ● ২০ মে ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » আম্পানের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী
আম্পানের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ আজ ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এক বছর পূর্ন হলো। ২০২০ সালের এই দিনে বাংলাদেশের পশ্চিম উপকূলে আঘাত করেছিল এই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বের এক বছর পূর্ণ হলেও প্রলয়ঙ্করি ঝড়ের শিকার অনেক এলাকার মানুষ আজো সেই ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে।এক বছরেও ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি । সেই ক্ষতি আর হৃদয়ের ক্ষত পুরণ না হয়ে দিন দিন তা বেড়ে চলেছে।। জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও সুপেয় পানির তীব্র হাহাকার। সব হারিয়ে অন্যের জমিতে কোন রকমে মাথা গোঁজার মত ঘর বেধে বাস করছে অনেকেই। নদী ভাঙ্গন সংস্কার করা হলেও কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধ এখনও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসীর।
গত বছর ২০ মে আম্পানের তান্ডবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছা,কয়রা ও সাতক্ষিরার আশাশুনি ও শ্যামনগর প্রলয়ঙ্করি ঝড় আম্পানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কয়রার ৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন।
কয়রা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ মে আম্পানের তান্ডবে দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার, ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, ৪ হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের ডুবে গিয়েছিল। এর ভেতর ৭০ পরিবারকে সরকারি ভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে।আম্পানের রাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি মৎস্য ঘের বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। আম্পানের তান্ডবে সর্বস্ব হারিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঝুঁপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।
এখন বেড়িবাঁধ হয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। যাদের মাথা গোজার মত ঠাঁই রয়েছে তারা নতুন করে ঘর বেধে স্বপ্ন দেখছেন বসবাস করার। তবে অনেকেই এখনো রাস্তার পাশে ঝুঁপড়িতে রয়েছেন। এসব ইউনিয়নের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। আম্পানের এক বছরে আজও মেরামত করা হয়নি অধিকাংশ রাস্তা, জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে না পারায় হাটতে হয় মানুষকে। কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। বিশেষ করে মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত বাঁধ রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকার মনিরুজ্জামান মুকুলের স্ত্রী বলেন, ৫টি ছাগল, ১৫/১৬টি হাঁস ও ১০টি মুরগী ছিল। ঝড়ের রাতে আমরা পাশের বাড়িতে আশ্রায় নিয়েছিলাম। পরে এসে দেখি ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। সব নদীর পানিতে ভেসে গেছে। পরে রাস্তার পাশে সরকারী জমিতে কোন রকমে একটি ঘর বেধে থাকছি। সব সময় আতংকে থাকি। এর আগে চারবার ভেঙ্গে আমাদের সব জমি নদীতে চলে গেছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি গ্রামের মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় সবটুকু জমি বছরের পর বছরে কপোতাক্ষের ভাঙ্গনে নদীতে চলে গেছে। যেটুকু ছিলো সেখানে কোন রকমে ঘর বেধে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। আম্পান ঝড়ের রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গেছিলাম। সকালে ফিরে এসে দেখি আমাদের ঘর বাড়ি নেই। বাঁধ ভেঙ্গে বাড়ির উপর দিয়ে খাল চলে গেছে। পরে বাঁধ হলেও আমার ঘর বাঁধার জায়গা নেই। এখন পরের জায়গায় ঝুঁপড়ি বেধে বসবাস করছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আম্পানে বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি বর্ষা মৌসুমের আগে বাঁধ মেরামত হয়ে যাবে। আম্পানে বিধ্বস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭০ পরিবারকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।