শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ২৪ মে ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » দূর্যোগে বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীর ভরসা
প্রথম পাতা » উপকূল » দূর্যোগে বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীর ভরসা
৪৯১ বার পঠিত
সোমবার ● ২৪ মে ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দূর্যোগে বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীর ভরসা

প্রকাশ ঘোষ বিধান  ।।---   ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষত এখনও শুকায়নি। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’এর খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলবাসী। গত দেড় দশক ধরে একের পর ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার এসব এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষা  নির্বাহ করে বেড়ীবাঁধের উপরে। দূর্যোগে এই বাঁধ তাদের ভরসার একমাত্র স্থল। বাঁধ ভালো থাকলে তারা দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তাদের ঘরবাড়ী, ফসলের ক্ষেত, রাস্তাসহ সবকিছু পানিতে ভেসে যায়। মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০ মে   ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলে আছড়ে পড়ে । যার ক্ষত উপকূলবাসীকে সারাক্ষণ তাড়া করে। ঘূর্ণিঝড় অম্ফান দেখিয়ে গেছে দূর্বল বেড়িবাঁধের কারণেই এই এলাকায় মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এই এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল ষাটের দশকে।তারপর শুধু বাঁধের সংস্কার কাজ হয়েছে। ফলে বেড়েবাঁধ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি সত্ত্বেও বেড়িবাঁধ শক্ত করা হয়নি। তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোংলার নদীর তীর ও বেড়িবাঁধের পাশে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস।

কয়রার নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি জানান, দুর্যোগ কবলিত এ জনপদের মানুষ একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই, ফের নতুন নামে আঘাত হানছে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘুর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো জমি ও সম্পদ হারিয়ে অনেকে উদ্বাস্তু। ষাটের দশকে উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত বেড়ি বাঁধ আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। টিকে থাকার স্বার্থে মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে অনেক জায়গায় রিং-বাঁধ দেয়। এখন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর খবরে নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ ।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো জানায়, ২৫ মে মধ্যরাত থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো জানায়, ২৫ মে মধ্যরাত থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশে সাতক্ষীরা ও খুলনার ওপর দিয়ে সম্ভাব্য আঘাতটা হানতে পারে এ ঘূর্ণিঝড়। ২৬ মে ভরা পূর্ণিমার ফলে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস-সহ বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস বয়ে যেতে পারে উপকূল দিয়ে। তাহলে উপকূলের নাজুক বেড়ীবাধ এতবেশী উচ্চতার জলোচ্ছাস আটকাতে পারবে না। তাই দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততো আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলবাসীর। কয়রা হাজতখালী গ্রামের কার্ত্তিক চন্দ্র জানান, ঘূর্ণিঝড় এলেই বাঁধের কদর বাড়ে, ঝড় চলে গেলে বেড়িবাঁধ সুরক্ষার গুরুত্ব ঝিমিয়ে পড়ে। এর ফলে দিন দিন বাঁধগুলি নাজুক হয়ে পড়ে। আম্ফানেরমত এমন প্রবল ঘূর্ণিঝড় সহজে নাজুক বেড়িবাঁধগুলি তচনচ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর ইসলাম জানান, আম্ফানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘ দিন মানুষকে পানিবন্দি থাকতে হয়েছে। ‘মাত্র ১০ শতাংশের’ মতো ঘরবাড়ি টিকে ছিল। আইলার পর আড়াই হাজারের মতো পরিবারকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এসব ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজেদের চেষ্টার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “এখানকার বড় সমস্যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়িবাঁধ। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, দূর্যোগের  অন্যান্য বিষয় ছাড়াও লবণের কারণেও বাঁধ টিকছে না। পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাটির কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙন বাড়ছে, বাঁধগুলো টিকছে না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবাধ জোয়ার-ভাটার (টিআরএম) মাধ্যমে ভূমি উঁচু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

উপকূলের বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করেন যে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণসহ বাঁধগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দুর্যোগের ঝুঁকিটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। সরকার ও এনজিওগুলোর উচিত তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা। তাছাড়া, অতীতে উপকূলের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রকৃতি নির্ভর ও লোকায়ত অনেক প্রক্রিয়া ছিল। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে, যা খুঁজে বের করা খুব জরুরি।





উপকূল এর আরও খবর

পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বৈষম্য নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বৈষম্য নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি
পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বেড়েছে জনদূর্ভোগ; নিন্মাঞ্চল প্লাবিত পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বেড়েছে জনদূর্ভোগ; নিন্মাঞ্চল প্লাবিত
ঝড়ের কথা শুনলেই আঁতকে উঠে উপকূলের মানুষ; চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা ঝড়ের কথা শুনলেই আঁতকে উঠে উপকূলের মানুষ; চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা
শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ব্যাপক প্রস্তুতি শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ব্যাপক প্রস্তুতি
পাইকগাছার কালিনগর এলাকার ওয়াপদার বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে এলাকা পাইকগাছার কালিনগর এলাকার ওয়াপদার বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে এলাকা
পাইকগাছায় রেমালের তান্ডবে দেলুটির ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র পাইকগাছায় রেমালের তান্ডবে দেলুটির ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র
ঘুর্নিঝড় রেমাল এর তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পাইকগাছা লন্ডভন্ড; ৭২ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ঘুর্নিঝড় রেমাল এর তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পাইকগাছা লন্ডভন্ড; ৭২ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় আইলা’র ১৫ বছর ; উপকূলবাসীকে আজও কাঁদায় ঘূর্ণিঝড় আইলা’র ১৫ বছর ; উপকূলবাসীকে আজও কাঁদায়
ঘূর্ণিঝড় রেমান এর চোখ রাঙানীতে উপকূলের মানুষ আতঙ্কিত ঘূর্ণিঝড় রেমান এর চোখ রাঙানীতে উপকূলের মানুষ আতঙ্কিত

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)