বুধবার ● ২ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » সারাদেশ » কয়রায় হাহাকারের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের খাদ্য বিতরণ
কয়রায় হাহাকারের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের খাদ্য বিতরণ
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা :
ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে নদীর বাঁধ ভাঙ্গনে উপকূলীয় কয়রা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম নোনা পানিতে প্লাবিত হয়। উপজেলার ১২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলামের নির্দেশনায় জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম, উপজেলা ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল্ মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম বাহারুল ইসলাম, সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ নেত্রীবৃন্দ এবং এলাকার হাজার হাজার মানুষের সেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাঁতিরঘেরী বাদে, বাকি বাঁধ গুলো সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। এখনো পানিবন্দী রয়েছে ৩৫ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রসহ উঁচু বেড়িবাঁধে রয়েছে ৫ হাজারের বেশি মানুষ। পানিবন্দী এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে চরম আকারে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে কিছু খাদ্য বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এদিকে অভিযোগ উঠেছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া খাদ্য সামগ্রী চরম নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ। ঐ খাদ্য খেয়ে শিশুসহ বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে জনমনে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে মহারাজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দেয়াড়া, শিমলারাইট, গোবিন্দপুর, খেজুরডাঙ্গা, মঠবাড়ী গুচ্ছ গ্রাম, পূর্ব মঠবাড়ী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাঁতিরঘেরী, হরিহরপুর ও পদ্মপুকুরসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। মঙ্গলবার ট্রলার যোগে গাঁতীরঘেরী পৌঁছালে খাদ্যের জন্য ছুটে আসে শতাধিক মানুষ।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাঁতিরঘেরী এলাকার অনিশ মাহাতো বলেন, বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার পর আমাদের খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। ৩/৪ দিন পর চেয়ারম্যান মেম্বররা যে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন তা খেয়ে আমাদের শিশুরাসহ বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে দেখি খাবার মেয়াদোত্তীর্ণ ছিলো। আর চিড়া খাওয়ার অনুুপোযুক্ত হওয়ায় ফেলে দিয়েছি। সুজাতা দাস ও একই কথা বলেন, সরবরাহকৃত চিড়ে তিতো ও নুডুুলস দুর্গন্ধ যা খাবার অনুুুপোযোগী।
উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভানেত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড মেম্বর নিলীমা চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তাদেরকে বিতরণের আগে দেখা উচিত ছিল খাদ্য সামগ্রীর মেয়াদ আছে কিনা। আর এই খাদ্য অজপাড়া গাঁয়ের মহিলারা রান্না করে তাদের শিশুদের খাওয়ালে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাঁধ ভেঙে সব কিছু হারিয়ে আমরা ভিখারি হয়ে গেছি। এভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য দিয়ে না মেরে আমাদের কিছু খরচের টাকা দেন, আমরা এদেশ ছেড়ে চলে যাই।
মহারাজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দেয়াড়া গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পশ্চিম দেয়াড়া একতা সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে অনেকের ঘর পড়ে গেছে এখনো রয়েছি পানিবন্দী, পানিতে আমাদের প্রধান আয়ের উৎস মাছের ঘের ভেসে গেছে। ফলে এলাকায় অভাব অনটন খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদীপ বালা বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেলে শিশু ও বয়স্কদের পেটের পীড়া হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে প্যাকেট করে পাঠানো খাবার আমরা কেউ খুলে দেখিনি। বিতরণ করার পরে আমরা জানতে পেরেছি মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার ছিলো। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের লিখিতভাবে জানিয়েছি, যেন এ ধরনের খাবার পরবর্তীতে না দেওয়া হয়।