বৃহস্পতিবার ● ৩ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » অবশেষে মেরামত হলো দশহালিয়ার বেড়িবাঁধ
অবশেষে মেরামত হলো দশহালিয়ার বেড়িবাঁধ
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা, (খুলনা)
খুলনার কয়রা উপজেলার দশহালিয়া গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামত করেন এলাকাবাসী।
টানা ছয় দিন প্রচেষ্টার পর খুলনার কয়রার আলোচিত দশহালিয়া এলাকার বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টায় মেরামত কাজ শেষ করেন তারা। এতে মহারাজপুর ও বাগালি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে কপোতাক্ষের জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হয়েছে।
২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ওই বাঁধটি ভেঙে উপজেলার দুই ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম নোনা পানিতে প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। ওই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মেরামতের জন্য স্থানীয় মানুষের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু সেখানে মেরামত কাজ পরিদর্শনে গিয়ে জনগণের তোপের মুখে পড়েন।
বুধবার বাঁধ মেরামতের স্থানে গিয়ে দেখা যায়, অন্য দিনের তুলনায় কমসংখ্যক মানুষ মেরামত কাজে অংশ নিয়েছেন। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম, মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মেরামত কাজে অংশ নিয়েছেন। তারা জানান, গত ছয় দিন সেখানে দলমত নির্বিশেষে এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন। তারা পানি ও শুকনা খাবার খেয়ে সারাদিন বাঁধ মেরামতে খেটেছেন।
অবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ থেকে প্রায় ৩০০ মিটার ঘুরিয়ে অস্থায়ী রিং বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে ৮০ হাজারের মতো সিনথেটিক ব্যাগ, দেড় হাজার বাঁশ ও অন্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রায় এক হাজার মানুষ সকাল থেকে স্বেচ্ছায় কাজ করে পানি আটকাতে সক্ষম হন।
বাঁধ মেরামতে অংশ নেওয়া লোকজন জানান, এখন নদীতে জোয়ারের উচ্চতা কম থাকায় সহজে পানি আটকানো গেছে। তবে সামনের অমাবস্যার গোনে নদীতে পানি বাড়লে অস্থায়ী এ বাঁধটি ফের ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তারা সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেখানে মাটির কাজ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, দশহালিয়ার বাঁধ সংস্কারের জন্য জাইকার পক্ষ থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা ওই ঠিকাদারের সঙ্গে আলাপ করে বাঁধটি যাতে ফের ভেঙে না যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। একই সঙ্গে সেখানে পাউবোর পক্ষ থেকেও নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, যেখান থেকে বাঁধ ভেঙেছে সেখানে ইয়াসের আগে থেকে একজন ঠিকাদার কাজ করছিলেন। তিনি যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। উপজেলার অন্য যে ছয়টি স্থানে এবারের দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল, তা সহজেই মেরামত করা গেলেও এটিতে বেগ পেতে হয়েছে। ভাঙনের পরিধি অনেক বিস্তৃত হওয়ায় এলাকার মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে সবার সহযোগিতায় অবশেষে বাঁধটি মেরামত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।