শুক্রবার ● ১১ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » চিত্রবিচিত্র » কেশবপুরে বাঁশির সুরে মৌমাছি এসে মৌচাক বাঁধে মাহতাবের শরীরে
কেশবপুরে বাঁশির সুরে মৌমাছি এসে মৌচাক বাঁধে মাহতাবের শরীরে
এম.আব্দুল করিম, কেশবপুর থেকে :
বাশির সুরে মৌমাছি বাসা বাঁধে মানুষের শরীরে, এ যেন রূপকথার গল্প হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। এমনি এক ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেল যশোরের কেশবপুর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামের মাহতাব মোড়লের বাঁশির যাদুতে।
মাহতাব মোড়ল পেশায় একজন মৌয়াল। ১২ বছর বয়স থেকেই মৌচাক থেকে মধু আহরণ করতে শুরু করেন তিনি। প্রায় ত্রিশ বছর তিনি এই পেশার সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন এই পেশার সাথে থাকার সুবাদে মৌমাছির সাথে গড়ে উঠেছে তার নিবিড় সখ্যতা। তিনি বাঁশি বাজালেই ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে জড়ো হয় তাঁর শরীরে মৌচাকের মত। এ দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক মানুষ প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছে।
মাহতাব উদ্দিন মোড়ল জানান, ১২ বছর বয়সে মজা করে মৌচাক থেকে মধু আহরণ করতে শুরু করেন তিনি। ওই সময় বালতিতে শব্দ করে চাক থেকে মৌমাছি দূরে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল রপ্ত করেন তিনি। এর পর টিনের থালায় শব্দ শুনে মৌমাছি চাক ছেড়ে তাঁর কাছে আসতে শুরু করে। কাছে আসার এমন দৃশ্য থেকে মধু সংগ্রহকারী এ পতঙ্গের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায়। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে মধু আহরণের পর এর উচ্ছিষ্ট কাপড়ে লাগিয়ে বাড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে রাখেন মাহাতাব। ওই কাপড়ে মৌমাছি বসে খাবার গ্রহণ করে তাঁর বাড়ির এলাকায় উড়ে বেড়ায়। একপর্যায়ে তিনি টিনের থালা বাদ দিয়ে বাঁশিতে সুর তুলে মৌমাছিকে কাছে আনতে থাকেন। কৌশলগত ওই সুর শুনে এখন হাজারও মৌমাছি তার শরীরে জড়ো হয়।
তাঁর বাবার নাম মৃত কালাচাঁদ মোড়ল। বাবার বাড়ি ছিল সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলায়। বাবার বৈবাহিক সূত্রে কেশবপুরের মোমিনপুর গ্রামে নানার বাড়িতে তাঁদের বসবাস। এখানকারই স্থায়ী বাসিন্দা মাহাতাব। সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মধুর চাক ভাঙতে ভাঙতে মৌমাছির প্রতি তাঁর ভালোবাসা তৈরি হয়। প্রথমে বালতি, টিনের থালার মাধ্যমে একটি-দুটি মৌমাছি শরীরে বসতে থাকে তাঁর। আর এখন বাঁশির সুরে হাজারও মৌমাছি এসে বসে। মৌমাছি শরীরে কামড় দেয় কি-না জানতে চাইলে মাহাতাব বলেন, আঘাত না করলে একটি মৌমাছিও শরীরে হুল বসায় না’। মধু আহরণ করেই তাঁর সংসার চলে। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে বাণিজ্যিক ভাবে মৌমাছি দিয়ে মধুচাষ করবেন বলেও জানান মাহতাব উদ্দিন মোড়ল।