শুক্রবার ● ১১ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে নদীভাঙ্গনে আশ্রয়হীন কয়রার মানুষের বৃষ্টিতে মানবেতর জীবন
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে নদীভাঙ্গনে আশ্রয়হীন কয়রার মানুষের বৃষ্টিতে মানবেতর জীবন
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা,
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়রা উপজেলার প্রায় ২০টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ, শাকবাড়ীয়া ও কয়রা নদীর পানিতে ৪ টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘর বাড়ি হারিয়ে উঁচু বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় পানিবন্দি মানুষ।
এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দক্ষিণ বেদকাশী, উত্তর বেদকাশী, মহেশ্বরীপুর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ১৮টি পয়েন্টে বাধঁ নির্মাণ হলেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া বেড়িবাঁধের ১ টি পয়েন্ট ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাঁতিরঘেরীর একটি পয়েন্ট এখনো বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মহারাজপুর ইউনিয়নের খেজুর ডাঙ্গা সরকারি পুকুর পাড়ে ৩০/৩৫ পরিবার ঝুঁপড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পদ্মপুকুর, হরিহরপুর ও গাঁতিরঘেরী গ্রামের বেড়িবাঁধে ১১০ থেকে ১২০টি পরিবার কোনরকমে পলিথিনের ঝুঁপড়ি বেঁধে মাথা গোঁজার ঠাই করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বেড়িবাঁধের উপর লম্বা সারি বদ্ধ দোচালা ঝুঁপড়ি। পলিথিন ও গোলপাতা দিয়ে তৈরী ঘর গুলোতে বৃষ্টি হলে ঢুকছে পানি। বৃষ্টির সময় সকলে এক জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকছে। পয়ঃনিস্কাশন, সুপেয় পানি ও খাদ্যের চরম সংকট রয়েছে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের খেজুর ডাঙ্গা সরকারি পুকুরপাড়ে বসবাস করছেন নাছিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ইয়াসে ঘর বাড়ি হারিয়ে সরকারি পুকুরপাড়ে ঝুঁপড়ি বেঁধে বাস করছি। এখানে আসার পরে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে থাকছি। বর্ষা হলে রাতে ঘুমাতে পারিনা, সবাই মিলে বসে থাকি। বুধবার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সারারাত জেগে ছিলাম। সব কিছু ভিজে গেছে। আজ সকাল ধরে ও বর্ষা হয়েছে আজও সব কিছু ভিজে গেছে। সরকারি চাল পেয়েছি কিন্তু বর্ষায় চুলাটাও ভিজে গেছে রান্না করার উপায় নাই।’
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া কিংকর মণ্ডলের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে পদ্মপুকুরের গাজী পাড়ায় ভেঙ্গে গেলেও গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধতে সক্ষম হলেও গাঁতীরঘেরীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ৩/৪ দিন আগে গাঁতিরঘেরী গ্রামের হেক্টর হেক্টর জমি বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রিংবাঁধ দিয়ে অন্যান্য গ্রামগুলো জোয়ারের লবণ পানি থেকে কোনরকমে বাঁচা গেলেও বাড়ীর উঠান থেকে এখনো পানি নামেনি তাই বাড়ীতে যেতে পারছিনা। এদিকে প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় ঝুপড়ির মধ্যে জল পড়ে সব ভিজে যাওয়ায় খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
ঐ ইউনিয়নের গাঁতিরঘেরীর প্রশান্ত মণ্ডল ঝুপড়ি বেঁধেছে হরিহরপুর লঞ্চঘাটের বেড়িবাঁধে। তিনি বলেন, ‘ইয়াসের দিন বাঁধ ভেঙে ঘর বাড়ি সব তলিয়ে গেছে। সেখানে বাস করা যাচ্ছে না। কোন রকমে রাস্তার উপরে বাসা বাঁধিছি। বৃষ্টি হলে বাসার ভিতরে পানি পড়ে। সব ভিজে বাসার ভিতরে কাদা হয়ে যায়।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। বিধ্বস্ত হয়েছে ১২৫০ টি ঘর। তলিয়ে গেছে দুই হাজার পাঁচ’শ চিংড়ী ঘের। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষি ফসল নষ্ট হয়েছে ১৫ হেক্টর জমির।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ঘর বাড়ি হারিয়ে যারা রাস্তার উপর বসবাস করছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সহযোগীতা করা হচ্ছে। এখন বৃষ্টির সময়, বৃষ্টি হলে তাদের ঝুঁপড়ি ঘরে পানি পড়ছে। বৃষ্টির কারনে যাতে তাদের কষ্ট না হয় তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।