মঙ্গলবার ● ৩ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » রাজনীতি » ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ
ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ
ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী কথিত ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে রয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অনুমোদনহীন এসব সংগঠন শুধু দলের নাম ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, অবৈধ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে এদের বিরুদ্ধে। নামের পাশে লীগ কিংবা বঙ্গবন্ধু শব্দ ব্যবহার করা সংগঠনের বিষয়ে স্পষ্ট হুশিয়ারি রয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। এসব ভুয়া সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। এ নিয়ে দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে দলের যেসব নেতা এ ধরনের সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ।
গত রোববার রাতে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে আরেকটি ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মনির খানকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলটির অনেক নেতার সঙ্গেই তার ওঠা-বসার ছবি আছে। অভিযোগ আছে, এর সব ছবিই ফটোশপে কারসাজি করা। তিনি ভুঁইফোড় সংগঠনটি খুলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে টাকার বিনিময়ে পদ দিয়েছেন। এ ছাড়া মনির জমির দালালি এবং তদবির বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। তার চেষ্টা এখন কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনের এমপি হওয়া।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের মতো সংগঠনের সঙ্গে দলটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এ ধরনের ভুঁইফোড় সংগঠন চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মনির খান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবি কারসাজি করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর ১৫ আগে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের উল্টো পাশের একটি কাপড়ের দোকানে দর্জির কাজ করতেন এই মনির খান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন তিনি। মুজিব কোট পরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন। তবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের চেয়ে তাকে বেশি দেখা যেত ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে। কারণ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়েই এক সময় দর্জির কাজ করতেন মনির খান।
অন্যদিকে চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গত ২৯ জুলাই রাতে আটকের পরপরই আলোচনা শুরু হয় এই মনির খানকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সরব হন তার বিরুদ্ধে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছে। নামের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নাম থাকায় দলটি সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণাও জন্মাচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সম্প্রতি তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এসব সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরই কিছু অসাধু নেতার যোগসাজশ রয়েছে। তারা ব্যক্তিগত লাভের আশায় সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এরা কেউই আদর্শবান রাজনীতি করে না। এরা সবাই সুবিধাবাদী এবং মতলববাজ। এই ধরনের সংশ্লিষ্ট কেউ থাকলে তাদেরও দল থেকে বের করে দিতে হবে। এদের বিষয়ে দলের সব দায়িত্বশীল নেতা, এমপি ও মন্ত্রীদের সতর্ক হওয়া উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এই সহযোগী সংগঠনের বাইরে নিজেদের মনগড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সুবিধালোভীরা বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করছে। এসব ব্যক্তিদের নিয়ে আগেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। আমাদের নেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে এসব মতলববাজ এবং অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ‘আমরা মাঠে রাজনীতি করি। এসব ভুঁইফোড়, স্বার্থান্বেষীরা কখন কোথায় ছবি তুলে বসে, সেই আতঙ্কে থাকি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসব ভুঁইফোড় সংগঠন আওয়ামী লীগকে বিব্রত করছে। তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’