বৃহস্পতিবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » শিক্ষা » প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ কর্মের মাধ্যমে খুবিকে আলোকিত করেছেন
প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ কর্মের মাধ্যমে খুবিকে আলোকিত করেছেন
এস ডব্লিউ নিউজ: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ এর কর্মমেয়াদ সফলভাবে শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ‘কর্মে তোমার প্রীতির চিহ্ন, মর্মে থাকুক লেখা’ গোধুলির গান শীর্ষক এ বিদায় সংবর্ধনা করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা, উত্তরীয় পরিয়ে এবং ক্রেস্ট উপহার প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ বাংলার শিক্ষক হলেও তিনি তাঁর ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অর্পিত আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দক্ষতার সাথে যথাযথভাবে সম্পন্ন করেছেন। তিনি সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্নে তাঁর আন্তরিকতা, মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে নিবেদিতভাবে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে আলোকিত করেছেন। দায়িত্ব থাকাকালীন তিনি কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। তাঁর কর্মমেয়াদ শেষ হলেও তিনি আমাদের মননে জাগরুক থাকবেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব, কর্মোদ্যোগ, আন্তরিকতা আমাদেরকে অভিভূত করেছে। তাঁর কাছ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। একজন শিক্ষকের অবসর নেই তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা বলেন, প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ একজন সার্বজনীন ব্যক্তিত্ব। তিনি শিক্ষক হিসেবে যেমন সফল, প্রশাসক হিসেবেও তেমন দক্ষ। একজন প্রশাসক হিসেবে তিনি দক্ষতার সাথে মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও ধৈর্য্য ধরে কাজ করে গেছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন অসংখ্য কমিটি, এমওইউতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন যা সত্যিই প্রেরণার ও অনুস্মরণীয়।
সংবর্ধনার জবাবে ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ বলেন, জীবনে চলার পথে একটি অধ্যায় সমাপ্তির সাথে সাথে আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হয়। নশ্বর এই পৃথিবীতে শুধু কেবলই আমাদের আসা-যাওয়া নয়, নিজ নিজ কর্মের পদচিহ্ন রেখে যেতে হয়। যা তাকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের আলাদা ব্যক্তি আদর্শ থাকবে এটা স্বাভাবিক। এটা তার নিজস্ব মত, পথ। কিন্তু যখন প্রজাতন্ত্রের একটি দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়, একটি চেয়ারের দায়িত্ব তিনি পালন করেন তখন তাকে সার্বজনীন হতে হয়। এটা আমি সবসময় মেনে চলার চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা শুধু আপনাদের ক্লাস করে না, তারা শিক্ষকদের চুল থেকে নখ পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে, অনুসরণ করে। এজন্য একজন শিক্ষককে এমনভাবে চলা উচিত যাতে শিক্ষার্থীরা তাঁকে দেখে শিখতে পারে। শিক্ষকদের আলোকেই আগামী প্রজন্ম আলোকিত হয়। দক্ষ ও মানবিক নাগরিক তৈরি হয়। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা বিকাশে, অগ্রযাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত। তিনি তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, আমি দীর্ঘায়ু চাই না, চিরসুস্থতাও চাই না, আজীবন যে মতাদর্শ, মূল্যবোধ ধারণ করে এসেছি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তা যেন লালন করে চিরবিদায় নিতে পারি, সেই আশির্বাদ আপনাদের কাছে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। তিনি বলেন, বিদায়ী ট্রেজারারের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এমনকি সুন্দর করে বাংলায় উচ্চারণও। তিনি কেবল ট্রেজারের দায়িত্ব পালন করেননি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকেও সমৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন।
বিদায়ী ট্রেজারারের কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ ওয়ালিউল হাসানাত ও অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. রুবেল আনছার ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ দুলাল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, পরিবহন পুলসহ বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
শেষ কর্মদিবস তিনি ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটান। তিনি যোহর নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে যান এবং মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান। এ মসজিদটির কাজ সম্পন্নে তিনি আন্তরিক ছিলেন। এর আগে তিনি মন্দিরে যান। সেখানে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। মন্দিরটি নির্মাণে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।