সোমবার ● ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » মুক্তমত » তথ্য জানা সবার অধিকার
তথ্য জানা সবার অধিকার
প্রকাশ ঘোষ বিধান=
তথ্য জানার অধিকার সবার আছে। ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। প্রতি বছর ভিন্ন ভন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এদিকে তথ্য কমিশন দিবসটি পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ,সংবাদ সম্মেলন এবং টেলিভিশন ও বেতারে টক শো প্রচার। ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ২৮ শে সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়। দিনটি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ এ প্রথম দিবসটি পালিত হয়।
তথ্য জানার অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়। ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম তথ্য অধিকার দিবস পালন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা বিস্তৃত হওয়ায় ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউনেস্কো। দিবস পালন উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদে জনগণের চিন্তা,বিবেক ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তথ্য জানার অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েই প্রণয়ন করা হয়েছে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯। এর যথাযথ বাস্তবায়নে তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার পাশাপাশি এ আইনের যথাযথ প্রয়োগে তথ্য কমিশন আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা,দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জনগণের তথ্য জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে তথ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে এবং তথ্য সেবা নিশ্চিত করতে তথ্য কমিশন অনলাইন প্রশিক্ষণ ও অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সুফল ভোগ করতে পারছে।তথ্য জানার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছে। সারা দেশে প্রায় সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্যসেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা, আর স্বপ্ন নয়।
নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং এর আওতায় তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। যার ফলে জনগণ ও গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪৫টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং ২৮টি এফএম বেতার কেন্দ্র এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচার করছে। ফলে তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। সংসদ টেলিভিশন চালুর ফলে গণমানুষের কাছে সংসদের কার্যক্রম সরাসরি পৌঁছানো সহজ হয়েছে। বর্তমান সরকার নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালু করেছে। জেলা শহরগুলোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ শহর ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে।এখন ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম এর মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান প্রদান করা হচ্ছে।
দেশে যে আইনকানুন প্রচলিত আছে প্রগতির ধারায় তার অনেক সংস্কার হচ্ছে, চালু হচ্ছে নতুন আইন। দেশে ১১শত এর বেশি আইন বলবৎ রয়েছে। বেশির ভাগ আইন চালু আছে জনগণের ওপর প্রয়োগ করার জন্য আর তথ্য অধিকার আইন হলো এমন একটি আইন, যা জনগণ কর্তৃপক্ষের ওপর প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু তথ্য অধিকারচর্চা এখন জনমুখী হয়ে উঠেনি। তবে এ সমাজে তথ্য না দেওয়ার সংস্কৃতি দীর্ঘ দিনের। এ সংস্কৃতি ভাঙ্গতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ আছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ না থাকলে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার আদায় সম্ভব নয়। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার বাক-স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিগণিত। তথ্য অধিকারকে জনগণের ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। যত বেশি তথ্যপ্রবাহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছবে, ততই সচেতনতা বাড়বে, বাড়বে কাজের গতিও। ব্যক্তির অধিকার আদায়ে তথ্য অধিকার দিবসের গুরুত্ব অনেক। আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রবাহ গতিশিল করা একটি আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট