সোমবার ● ২৫ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দুবলার চরের শুটকি মৌসুম
১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দুবলার চরের শুটকি মৌসুম
মোঃএরশাদ হোসেন রনি, মোংলা
১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দুবলার চরের শুটকি মৌসুম। তাই শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততায় উপকূলের জেলে-মহাজনেরা। সাগরে যেতে যে যার মত প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। কেউ কেউ গড়ছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরাতনটিকে মেরামত করে নিয়েছেন। সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকে চলে এসেছেন মোংলার মোংলা ও পশুর নদীতে। মঙ্গলবার বনবিভাগের পাস নিয়েই তারা রওনা হবেন সাগর পাড়ের দুবলার চরে। সাগরে এখন আর দস্যুদের উৎপাত না থাকলেও ঝড়-জলোচ্ছাসের প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দুবলায় যাত্রা শুরু করবেন হাজার হাজার জেলে।
বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হতে যাচ্ছে শুটকি মৌসুম। ১ লা নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা ৫ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। তাই সাগর পাড়ে গড়তে হবে তাদের অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানো চাতাল ও মাচা। সেসব তৈরিতে ব্যবহার করা যাবেনা সুন্দরবনের কোন গাছপালা-লতাপাতা। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চরের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নেয়া সকল জেলে তাদের ট্রলারে করে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী। আর এ সকল প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মোংলাসহ উপকূলের কয়েক জেলার জেলে-মহাজনেরা। সকল প্রস্তুতি শেষে বনবিভাগের কাছ থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে নিজ নিজ এলাকা থেকে রওনা হয়ে মোংলা আসা জেলেদেরকে সরাসরি যেতে হবে দুবলার চরে। যাওয়ার পথে সুন্দরবনের কোন নদী-খালে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারবেন না সমুদ্রগামী এ জেলেরা। এছাড়া দুবলার চরে অবস্থানকালে সাগর ছাড়া সুন্দরবনের খালে প্রবেশ ও সেখানে মাছ ধরতে পারবেন না বলেও জানিয়েছে বনবিভাগ।
জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক মো: জালাল শেখ বলেন, এবার দুবলার চরে শুটকি করতে মোংলার আড়াইথশ থেকে তিনশত ট্রলার যাচ্ছে। ওই সকল ট্রলারে জেলেরা এখান থেকে সকল কাঠপাট নিয়ে যাচ্ছে সেখানে ঘর-মাচা করার জন্য। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে মঙ্গলবার থেকে তারা সাগরে যেতে শুরু করবেন।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকতার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, শুটকি মৌসুমকে ঘিরে এবারও উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। আর এ মৌসুমেও দুবলার চরের যাচ্ছে প্রায় দেড় হাজার মাছ ধরার ট্রলার। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুটকি করবেন তারা। এ বছরও চরে জেলেদের থাকা ও শুটকি সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ৯শ ৫০/৬০ বেশি ঘর এবং ৫০/৫২টি ডিপো স্থাপনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। দুবলার চরে জেলেদের নিরাপত্তায় বনবিভাগের পাশাপাশি থাকছে র্যাব ও কোস্ট গার্ড। তিনি আরো বলেন, গত শুটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের নেতা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গোসাগর ও সুন্দরবনে এখন আর দস্যুতার ভয় নেই। তাই অনেকটা স্বস্তি নিয়েই সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা। আবহাওয়া ভাল থাকলে লাভের পাল্লা ভারী করেই মৌসুম শেষে বাড়ীতে ফিরতে পারবেন উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার এ জেলে-বহাদ্দাররা।