সোমবার ● ১৫ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » সুন্দরবনে রাস পুজায় পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য খুলনা রেঞ্জের কঠাের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা
সুন্দরবনে রাস পুজায় পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য খুলনা রেঞ্জের কঠাের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা, খুলনাঃ
আর মাত্র কয়েকদিন পর সাগর দ্বীপ আলাের কােলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাস পূজা।
অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থী আর পর্যটক রাস উৎসবে শামিল হতে দেশ- বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন। সুন্দরবন ঘেঁষে বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ দুবলারচর। কুঙ্গা এবং মরা পশুর নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এ চরে বহুকাল ধরে চলে আসছে এই রাস মেলা।
জানা যায়, ২৯২৩ সালে পূর্ণব্রক্ষ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ পাগলের এক পাগল হরিভজন এই মেলা শুরু করেছিলেন।
হাজার হাজার পুন্যার্থীদের আগমনে রাস পূজা হয়ে উঠে উৎসবমুখর। তবে এ বছর সনাতন ধর্মলম্বী লােক ছাড়া রাস পূজায় কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা। ইতিমধ্যে রাস পূজাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের উদ্যােগে বনজ সম্পদ রক্ষায় নেওয়া হয়েছে কঠাের নিরাপত্তা। সম্প্রতি সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত দুবলার চরে অনুষ্ঠিত হবে এই রাস মেলা। প্রতি বছর কার্ত্তিক - অগ্রহায়ণের শুক্লাপক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পার্থিব জীবনের কামনা বাসনা পূরণের লক্ষে সুন্দরবনের শেষ প্রান্তে বঙ্গােপসাগরের তীরে দূবলার দ্বীপে এক নিবীড় পরিবেশে হাজির হয়। সেখানে সূর্যােদয়ের আগেই সমুদ্রের বেলাভূমিতে ফুল, বেলপাতা, বাতসা ও ডাব কোলে নিয়ে প্রার্থনায় বসেন পূণ্যার্থীরা। ঢেউয়ে ঢেউয়ে সাগরের জল পায়ে লাগলে স্নান করে পাপ মোচন হয়ে পবিত্র হওয়ার আশায়। অসংখ্য হিন্দু নর-নারী গঙ্গাস্নানের মত তীর্থস্থান মনে করে এই রাস পূজায় উপস্থিত হন।
খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা মােঃ ইসমাইল হােসেন বলেন, রাস পূজা নির্বিঘ্নে যাতে তীর্থ যাত্রীরা যেতে পারে তার জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মােঃ আবু সালেহ বলেন, সাগরকূলে রাস পূজায় পুন্যার্থীদের ১৭ নভেম্বরের আগে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হয়েছে। রাস পূজাকে কেন্দ্র করে ১৪ নভেম্বর সকাল ১০ টায় খুলনা রেঞ্জ কার্যালয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মােঃ আবু সালেহ এর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা মােঃ ইসমাইল হােসেন,কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা মােঃ আকতারুজ্জামান, বানিয়াখালী স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মন্ডল, কালাবগী স্টেশন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, সুতােরখালী স্টেশন কর্মকর্তা মােঃ আছাদুজ্জামান সহ রেঞ্জের অধীনস্থ সকল স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন।
সভায় সিধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, ১৫ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সার্বক্ষণিক টহল কার্যক্রম চালাবে বন বিভাগ। ১৪ নভেম্বরের পর কােন ব্যক্তি সুন্দরবনে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনতগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত সময় ছাড়া কােন লােক সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। পূজার শৃংখলা রক্ষায় ও সুন্দরবনে শব্দ দুষণরােধে রাশ মেলাস্থল ও যাতয়াত রুটে উচ্চ শব্দ গান-বাজনা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। সকল প্রকার শব্দ দুষণ, বিনা অনুমতিতে প্রবেশরােধ, চারাশিকার ও দস্যুতা রােধ নৌ-বাহিনী, বন বিভাগ, পুলিশ, কােস্ট গার্ড, বিজিবি, র্যাব ও গােয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করবে বলে জানানাে হয়। বন বিভাগ থেকে পূজা স্থলে যাওয়ার জন্য ৮ টি নৌ-রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।
রুটগুলাে হলো সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগােয়ালিনী-কােবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাতকােষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর, কদমতলা হয়ে ইছামতি-দােবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া থেকে কাগাদােবেকী হয়ে দুবলার চর, কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদারগাঙ-খােপড়াখালী-ভাড়ানী-দােবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া থেকে কাগাদােবেকী হয়ে দুবলার চর,কয়রা-কাশিয়াবাদ-খাসিটানা-বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা থেকে শিবসা নদী মরজাত হয়ে দুবলার চর, নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলাচর, ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন-শেলার চর হয়ে দুবলাচর, বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলাচর এবং বাগরহাটের শরণখােলা স্টেশন, সুপতি স্টেশন, কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর রাস পূজায় যেতে পারবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডঃ আবু নাসের মােহসীন বলেন, সুন্দরবনে রাস পূজাকে কেন্দ্র করে পশ্চিম বন বিভাগের অভিযান পরিচালনার জন্য কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজেও টহল কার্যক্রম চালানাের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকবেন বলেও জানান।