বৃহস্পতিবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » খুলনায় সাংবাদিক সোহাগকে ফাঁসাতে স্ট্যাম্প জালিয়াতি : প্রতারক সেই মনি গ্রেফতার
খুলনায় সাংবাদিক সোহাগকে ফাঁসাতে স্ট্যাম্প জালিয়াতি : প্রতারক সেই মনি গ্রেফতার
এস ডব্লিউ: নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে দৈনিক সময়ের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক সোহাগ দেওয়ানকে ফাঁসানোর চেষ্টাকারী চক্রের হোতা প্রতারক সেই ফরিদা ইয়াসমিন মনি (৪২) কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬। এ চক্রের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে খুলনা সদর থানায় মামলা রেকর্ডের পর আত্মগোপনে থাকা আসামিরা রাজধানী ঢাকা ও খুলনায় পালিয়ে থাকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় খুলনার বসুপাড়া টাওয়ার ওয়ালা গলির শহিদুল ইসলামের ৫ তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৬ ।
সরকারি স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা ও ব্লাক মেইল করে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে সংঘবদ্ধ এ চক্রটির বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হওয়া প্রতারক মনি খুলনার করিমনগর মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল ওহাব খাঁনের মেয়ে। তাকে খুলনার সদর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া করছেন র্যাব-৬।এছাড়াও প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি প্রতারণার জন্য নগরীর বসুপাড়া কবর খানা রোড, টাওয়ার ওয়ালা গলির ৫ম তলা বাড়ির ভাড়াটিয়া, দেবেন বাবু রোড এলাকা, ঢাকার রমনা থানাধীন মধুবাগ গলির বাড়ি নং ৪৫৯ (স্টার লজ), ঢাকার মুগদা থানার সবুজবাগ দক্ষিণ মান্ডা, চাঁন মিয়া গলির কাওসার আহম্মেদের ভাড়া বাসাসহ আরও একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করেন। বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা ও ব্লাক মেইল করে চাঁদাবাজিতে খুলনা ও ঢাকায় এ চক্রের ১০/১২ জন সদস্য রয়েছে মামলায় উলেখ করা হয়েছে। মামলার সূত্রে জানা গেছে, তিনশ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে খুলনার সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানের নামে একটি অঙ্গিকার নামা তৈরি করে এ প্রতারক চক্রটি। ওই অঙ্গিকারনামায় বলা হয়, ফরিদা ইয়াসমিন মনি নামের এক নারীর সন্তান উদ্ধারের কথা বলে সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান ৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ অঙ্গিকারনামাটি ব্যবহার করে ওই চক্রটি সোহাগ দেওয়ানকে নানা ভাবে হয়রানি করতে থাকে। তিনশ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তৈরি করা অঙ্গিকারনামাটি ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারির তারিখে দেখানো হয়েছে। তবে সহকারী নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) প্রধান কার্যালয়, ডাকা ভবন ঢাকা’র লিখিত তথ্য মতে ওই স্ট্যাম্পটি ২০২০ সালের ৯ আগস্ট সরকারি ছাপাখানা থেকে ওই দপ্তর হাতে পেয়েছেন। এরপর ওই নম্বরের স্ট্যাম্পগুলো পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী শাখার লিখিত তথ্যমতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট স্ট্যাম্পগুলো হাতে পেয়ে ৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় ভেন্ডরের নিকট হস্তান্তর করেন। ১৪ অক্টোবর ওই তিনটি স্ট্যাম্প এই প্রতারক চক্রের সদস্য সরোয়ার হোসেন ক্রয় করেন। এরপর প্রতারক চক্রটি সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানের নামে একটি ভুয়া অঙ্গিকারনামা তৈরি করেন। জাল অঙ্গিকারনামা ও সরকারি দপ্তরের লিখিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারি ছাপাখানা ও দপ্তরে ওই তিনটি স্ট্যাম্প তৈরির আড়াই বছর আগের তারিখ ব্যবহার করে প্রতারক চক্রটি এ অঙ্গিকারনামা তৈরি করেন।
এদিকে গত ১৫ নভেম্বর খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ শাহীদুল ইসলাম ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করতে কেএমপি’র সদর থানাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ হাতে পেয়ে খুলনা সদর থানায় প্রতারক চক্রের প্রধান ফরিদা ইয়াসমিন মনিসহ ৫ জনের নাম উলেখ ও অজ্ঞাত ৩/৪জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড হয়। দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৩৮৫, ১০৯ ও ৫০৬ ধারায় গত ১৯ নভেম্বর মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ (নং-৩৪)।
মামলার আইনজীবী এড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘবদ্ধ আসামিরা স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে বাদী সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানের নামে একটি অঙ্গিকার নামা তৈরি করে নানা ভাবে হয়রানি ও চাঁদা দাবি করেন। এ বিষয়ে সকল তথ্য প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে আদালত থানা পুলিশকে মামলা রেকর্ডের নির্দেশ দেন।
উলেখ্য, ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর খুলনার দাকোপ উপজেলার বাসিন্দা নিউটন গাইন খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র বিরুদ্ধে লোমহর্ষক একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, নিউটন গাইন ছিলেন খুলনার এ আলোচিত প্রতারক নারীর দ্বিতীয় স্বামী। ৬ বছর আগে খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী পদ্দেরগঞ্জ সাহেবের আবাদ এলাকার বিনয় কৃষ্ণ গাইন’র পুত্র নিউটন গাইনকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে প্রতারক মনি। ২০১৭ সাল নাগাদ নিউটন গাইনের কাছে থাকা ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢাকা থেকে তাড়িয়ে দেয় এ চক্রটি। টাকা চাইতে গেলে ওই পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে ঢাকা ও খুলনায় ৮/৯টি মামলা দায়ের করেন মনি। সংখ্যালঘু ওই পরিবারের সদস্যরা ফরিদা ইয়াসমিন মনি’র নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান। অসহায় ওই পরিবারটির পক্ষে কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে চক্রটি সোহাগ দেওয়ানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই অলিয়ার রহমান জানান, এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।