শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » মৃত্যুর একযুগ পর বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর রাষ্টীয় স্বীকৃতি; সংরক্ষণ হয়নি আশ্রয়স্থল
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » মৃত্যুর একযুগ পর বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর রাষ্টীয় স্বীকৃতি; সংরক্ষণ হয়নি আশ্রয়স্থল
৩৯৯ বার পঠিত
বুধবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মৃত্যুর একযুগ পর বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর রাষ্টীয় স্বীকৃতি; সংরক্ষণ হয়নি আশ্রয়স্থল

এস ডব্লিউ;  মৃত্যুর একযুগ পর রাষ্টীয় স্বীকৃতি মিললেও কেউ মনে রাখেনি বীরাঙ্গনা গুরুদাসী মাসীকে। আজও সংরক্ষণ করা হয়নি তার আশ্রয়স্থলের স্মৃতি শেষ। বর্তমান সরকার বীরাঙ্গানাদের মুক্তিযোদ্ধার রাষ্টীয় স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করেছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ১২অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক গেজেটে ৪১ বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

ওই সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্নেল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বার্থে বীরাঙ্গনারা অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের অবদান কখনোই ভোলা যাবে না। এ জন্য সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সময় ও তত পরবর্তী মৃত বীরাঙ্গনাদের রাষ্টীয় স্বীকৃতি এবং তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ না করা হলে পরবর্তী প্রজম্ন ভুলবে মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের অবদান। অবশেষে গত বছর ২০২০ সালে ১৫ডিসেম্বর মৃত্যুর দীর্ঘ একযুগ পর বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি মিলেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-সন্তান হারানো গুরুদাসীর। এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও বীরাঙ্গনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে চায়। ২০২০ সালে ৯ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা গুরুদাসির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী গুরুদাসীসহ ৬১ জন নারীকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে রাজাকাররা গুরুদাসীর সর্বস্ব লুটে স্বামী-সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এক যুগ আগে হৃদয়ে নির্মম যন্ত্রনা নিয়ে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার শেষ আশ্রয়স্থল আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। তালাবদ্ধ তার বসত ঘরে আশ্রয়স্থলে হয়েছে কীটপতঙ্গের বাসা। রাতে আশেপাশে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ আর নেশাখোরদের আর্ড্ডা। অথচ তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গঠন করা হয়েছিল বীরাঙ্গনা গুরুদাসী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। আর তার বসবাসের বাড়িটি স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার তৈরির ঘোষণা দেয়া হয় ওই সময়। ১৯৭১ সাল। খুলনার পাইকগাছায় দেলুটিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের গুরুপদ মন্ডল পেশায় দর্জি হলেও সবার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র।

স্বাধীনতাকামী অত্যন্ত সহজ-সরল বিনয়ী একজন মানুষ। ২ ছেলে ২ মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে ছিল তার সংসার। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সাধ্যমতো সব রকম সাহায্য-সহযোগিতা করতেন তিনি। রাজাকারদের ইন্ধনে পাক বাহিনী তার বাড়িতে হামলা চালায়। একে একে পরিবারের সব সদস্যকে বাড়ির উঠানে জড়ো করা হয়। তার স্ত্রী গুরুদাসী মন্ডলের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পাক সেনাদের। নিজ স্ত্রীর সমভ্রম রক্ষা করতে এগিয়ে এলে গুরুদাসীর সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয় তার স্বামী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃতদেহ বীভৎস করে দেয়া হয়। এরপর গুরুদাসীর কোলে থাকা দুধের শিশুকে মাতৃক্রোড় থেকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়। মায়ের সামনেই তাকে পুঁতে ফেলা হয় বাড়ির পাঁশে কাদা পানির ভেতরে। তারপর গুরুদাসীর ওপর হায়েনারা পাশবিক নির্যাতন শুরু করে। পাক হানাদাররা চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী গুরুদাসীকে উদ্ধার করে। নিজ চোখের সামনে স্বামী, ছেলেমেয়ের মৃত্য এবং পাক সেনাদের হাতে সমভ্রম হারিয়ে গুরুদাসী ততক্ষণে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা গুরুদাসীকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজাতে রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় উদবাস্তের মতো ঘুরে এক সময় ফিরে আসেন স্বামী-সস্তানের স্মৃতি বিজড়িত খুলনার পাইকগাছায়।মানসিক ভারসাম্যহীন গুরুদাসী ভিক্ষা করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যান। হাতে ছোট্ট লাঠি, মানুষকে হাসতে হাসতে ভয় দেখানো আর হাত পেতে ২ টাকা চেয়ে নেয়া-এভাবেই গুরুদাসীর দিন কাটতে থাকে। গুরুদাসী মাসী হয়ে ওঠেন এলাকার সবার কাছের মানুষ, পরিচিত মুখ। পরে বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রসাশক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, তৎকালীন পাইকগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান স ম বাবর আলী ও নির্বাহী কর্মকর্তা মিহির কান্তি মজুমদার কপিলমুনিতে সরকারি জায়গায় গুরুদাসীর বসবাসের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দেন। সেখানেই অনাদরে, অযত্নে, অভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকেন তিনি। ২০০৮ সালের ৮ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কোনো এক সময় মৃত্যু বরণ করেন তিনি। প্রভাতে নিজের শয়নকক্ষে তার মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখে পার্শ্ববর্তী লোকজন। গুরুদাসীর মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুদাসীর আত্মত্যাগের কথা আজও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়নি। এক রকম সবাই ভুলে গেছে গুরুদাসীকে। তার যে পরিবারকে নিসংসহভাবে হত্যা করা হলো এর কোনো স্বীকৃতি এখনো আসেনি।

পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. স. ম. বাবর আলী বলেন, গুরুদাসী মাসীকে মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির দাবি ছিল তাদের। এটি পুরণ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন---। তবে, তার শেষ স্মৃতিবিজড়িত বাড়ীটি রাষ্টীয়ভাবে সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।





ইতিহাস ও ঐতিহ্য এর আরও খবর

পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায় ; প্রয়োজন সরকারি পৃষ্টপোষকতা পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায় ; প্রয়োজন সরকারি পৃষ্টপোষকতা
হারিয়ে যাচ্ছে কবি কাজী কাদের নওয়াজের শেষ স্মৃতি চিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছে কবি কাজী কাদের নওয়াজের শেষ স্মৃতি চিহ্ন
চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালিত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালিত
চুকনগর বদ্ধভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে : গণপূর্তমন্ত্রী চুকনগর বদ্ধভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে : গণপূর্তমন্ত্রী
ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী ; নীহার রঞ্জন গুপ্তের বাড়ি সংরক্ষণে ৫ দফা দাবি জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী ; নীহার রঞ্জন গুপ্তের বাড়ি সংরক্ষণে ৫ দফা দাবি
খুলনায় গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে আলোচনা সভা সঠিক ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়  -খুলনায় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী খুলনায় গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে আলোচনা সভা সঠিক ইতিহাস যেন বিকৃত না হয় -খুলনায় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন
বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এম এ গফুর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এম এ গফুর
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পাইকগাছার মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বাস্হায় ফেরানোর নির্দেশ মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পাইকগাছার মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বাস্হায় ফেরানোর নির্দেশ

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)