শুক্রবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » সারাদেশ » কপিলমুনিতে কপোতাক্ষ চরে মানবেতর জীবন কাটছে ময়না পাগলীর
কপিলমুনিতে কপোতাক্ষ চরে মানবেতর জীবন কাটছে ময়না পাগলীর
এস ডব্লিউ; কপোতাক্ষ তীরে মানবেতর জীবন কাটছে অসহায় ময়না পাগলীর। ঝুঁপড়ি ঘরে তার বসবাস করছে ঝড় বৃস্টি রোদ মাথায় নিয়ে। কপিলমুনি বাইপাস সড়কের পাশে কপোতাক্ষ নদের একেবারেই কিনারে ছোট্ট একটা ঝুঁপড়ি ঘর। ঘরটির উপরে পলিথিনের আচ্ছাদন, চট আর পুরাতন কাপড়ের বেড়ার মধ্যে এই অসহায় নারীর বসবাস। নাম তার পাগলী। আসল নাম ময়না বিবি হলেও কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হওয়ায় ময়না বিবি পাগলী নামে পরিচিত। ৫০ বছর বয়সের এই পাগলী অনাহার আর রোগে শোকে এখন কাহিল। শীর্ণকায় দেহটি মাঝে মাঝে দিনভর পড়ে থাকে ওই ঝুঁপড়ি ঘরে। ঘরের ভিতরে ছোট্ট একটা ভাঙ্গাচুরা চৌকিখাট। খাটের দুটি পায়া না থাকায় ইট দিয়ে ঠেকা দেয়া হয়েছে খাটটি। ঘরে মুচড়ানো হাড়িপাতিল আর ময়লা পুরানো দুটি কাঁথা। এ গুলোই পাগলীর সম্বল।
কিশোরী বয়সে উপজেলার আঘড়ঘাটা কার্ত্তিকের মোড়ের পাশে করিম গাজীর সাথে বিয়ে হয় পাগলীর। বিয়ের বছর দু’য়েক পরে একটি মেয়ে হয় তার। মেয়ের ৭-৮ বছর বয়স হলে স্বামী কর্তৃক পরিত্যাক্তা হয় সে। মেয়েকে নিয়ে পাগলী কপিলমুনি শহরের সাবেক লঞ্চঘাটের পাশে রাস্তার ধারে ঝুঁপড়ি বানিয়ে মাথা গোঁজে মা মেয়ে। বাজারের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা আর চায়ের দোকানে পানি দিয়ে যা আয় হতো তাই দিয়ে অতিকষ্টে জীবন চলতো তাদের। যেদিন এসব কাজ হতোনা সেদিন বাজারে ভিক্ষা করতো পাগলী।৫ বছর আগে ১৬ বছর বয়সে পাগলীর একমাত্র মেয়েটি রোগাক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ওই ঝুঁপড়ি ঘরে। সেই থেকে পাগলী আরও অসহায় হয়ে পড়ে। কন্যার মৃত্যুতে পাগলী শোকে দুঃখে মুহমান। নতুন স্থাপনা তৈরি হবে বলে পাগলীকে ওই জায়গা থেকে সম্প্রতি তাড়িয়ে দেয়া হয়। পাগলী আশ্রয় নেয় কপিলমুনির আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের পিছনে কপোতাক্ষ নদের একেবারে কিনারে ভেজা জায়গায়।
তার অসহায়ত্বের কথা জানতে চাইলে কপোলভেজা চোখে জল বার বার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে থাকে পাগলী। পাগলী জানায়, নদীর ধারে শীতের তিব্রতায় রাতে ঘুমাতে পারিনা। অনেকের কাছে একটি কম্বল চেয়েছি কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি। পাইনি কোন সরকারী ত্রান সহায়তা। মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের আশায় দ্বারে দ্বারে রাস্তায় রাস্তায় হেটেছি, অনেক কেঁদেছি কিন্তু কেউ আমার কান্না দেখেনি, কষ্ট বোঝেনি তাই নিরুপায় হয়ে শেষ মেষ এখানেই আশ্রয় নিয়েছি।
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী হালিম হাওলাদার, সেলীম মীর, নহিদুল ঢালী ও সাইদ গাজীসহ আরও অনেকে জানান, পাগলীর মত একজন ভূমিহীন গৃহহীন অসহায় নারী ঘর না পাওয়ায় এখানে মানবতা চরম ভাবে ভুলন্ঠিত হয়েছে। তাদের আশংকা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কপোতাক্ষের পানি বা জলোচ্ছ্বাসে পাগলীসহ তার ঝুঁপড়ি ঘর ভেসে যেয়ে পারে। পাগলীর অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তার পুন:বাসনের জন্য এলাকাবাসি স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।