বুধবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ স্বীকৃতি পেলো শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল
‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ স্বীকৃতি পেলো শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল
এস ডব্লিউ; রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।
৮০ শয্যার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, যিনি এর আগে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা ভবনটি নির্মাণ করেছে।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস-রিবা রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অসাধারণ নকশা ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে কাশেফ চৌধুরী/আরবানার নকশা করা বাংলাদেশের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ভবনটিকে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে।
গত ১৬ নভেম্বর রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সঙ্গে ছিল জার্মানির বার্লিনের জেমস-সায়মন-গ্যালারি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতু।
ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর সহায়তায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা এই কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। উপকূলের এমন একটি এলাকায় এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে যা ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পুরস্কারের জুরি বোর্ড বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ বাংলার জলো পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। তারা এই হাসপাতাল স্থাপনাটিকে একটি ‘মানবিক স্থাপত্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ স্থাপনার বিশেষত্ব হচ্ছে, স্থানীয় প্রকৌশলীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়েছেন। ভবনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা, সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। ২০১৩ সালে নকশা করার পর চার বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে রিবার পক্ষ থেকে বলা হয়, কম বাজাটের মধ্যেও স্থাপত্য কীভাবে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাকে শক্তিশালী ও সক্ষম করে তুলতে পারে তার উৎসাহব্যাঞ্জক উদাহরণ হচ্ছে এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।
পুরষ্কারের খবরে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, এই জন্য যে রিবা এবং এর জুরিরা বিশ্বের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে একটি প্রকল্পকে চিহ্নিত করে বিশ্বের কেন্দ্রে তুলে এনেছেন এবং একে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্ববহ পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।
এর মধ্য দিয়ে আরও অনেকেই সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়েই বর্তমান বিশ্বের সঙ্কটগুলো মোকাবেলা করে মানবিক ও প্রকৃতির প্রতি যতœবান থেকে স্থাপত্য নির্মাণে উৎসাহিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান বলেন, “গত ২০ বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি তারা এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে না। ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল তাদের জন্য একটি উন্নততর আগামীর আশা দেখিয়েছে।”
ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. রুহুল আমিন বলেন, “আমার মত অবিবাহিত চিকিৎসকেরা স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। আমরা যদি বাইরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম, আমাদের লবণাক্ত পানিতে গোসল করতে হত, পানি কিনে খেতে হত। এখানে পানি শোধনাগার থাকায় আমরা লবণ-মুক্ত পানি ব্যবহার করতে পারছি।”
বিশ্বের ১১টি দেশের ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনা থেকে বাছাই করে তিনটি স্থাপনার সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড। সেখান থেকেই দ্বিবার্ষিক এ পুরস্কারের চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নাম ঘোষণা করা হল।